নতুন মনিটারি পলিসিতে খেলাপি ঋণ কমানোর সুনির্দিষ্ট উদ্যোগের কথা নেই: সানেম

ড. সেলিম রায়হান। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন মনিটারি পলিসিকে স্বাগত জানিয়ে সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেছেন, 'মনে হচ্ছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিকে নীতির পরিবর্তন হচ্ছে এবং এই পরিবর্তন সামনের দিনগুলোতে ভালো কিছু বয়ে আনবে বলে আশা করি।'

তারপরেও কয়েকটা দিকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রথমত, একটা জিনিস একদমই পরিষ্কার না। সেটা হচ্ছে, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে সুদের হারের ওপর যে ক্যাপটা বজায় রাখা হয়েছিল, সেটা যে আসলে তেমন সুফল বয়ে আনেনি, তা স্বীকার করা দরকার ছিল। যে উদ্দেশ্যে এই কাজটা করা হয়েছিল—ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে—আসলে আমরা সেরকম কোনো ফলাফল দেখিনি। সুতরাং, আমাদের কাছে মনে হয় যে সেরকম একটা আত্ম সমালোচনা দরকার ছিল।'

'দ্বিতীয়ত, যে পলিসি ইন্টারেস্ট রেট করিডরের কথা বলা হচ্ছে, এটা এখনো নিশ্চিত করছে না যে সুদের হার আসলেই বাজারভিত্তিক হবে। কারণ, বলা হচ্ছে যে রেফারেন্স ইন্টারেস্ট রেট হবে ট্রেজারি বিলের ১৮২ দিনের এক ধরনের একটা গড় এবং সেই রেফারেন্স ইন্টারেস্ট রেটের সঙ্গে ৩ শতাংশ মার্জিন যোগ করে লেন্ডিং রেটটা হবে। এই মার্জিন নন-ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫ শতাংশ হবে এবং সিএসএমইর জন্য ১ শতাংশ অতিরিক্ত ইন্টারেস্ট চার্জ করা যাবে।'

'এখানে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ট্রেজারি বিলের অকশনে কম ইন্টারেস্ট রেট অফার করার মাধ্যমে এই ট্রেজারি বিলের ইন্টারেস্ট রেটটা একটা নিম্নমুখী রেখে দিয়েছে কি না? এই ধরনের অকশনে যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কম ইন্টারেস্ট রেট অফার করে, তখন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সেভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে না। যার কারণে এই ট্রেজারি বিলের যে ইন্টারেস্ট রেটটা আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি, সেটাকে বাজারভিত্তিক বলার অবকাশ কম। এখন দেখার একটা আগ্রহ থাকবে যে নতুন মনিটারি পলিসি স্টেটমেন্টের আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ট্রেজারি বিল এর অকশনের ক্ষেত্রে তার অবস্থানে কোনো পরিবর্তন করে কি না।'

'তৃতীয়ত, আমরা এক্সচেঞ্জ রেট এর ক্ষেত্রে একটা ভালো উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি। যেখানে বলা হচ্ছে, বাজারভিত্তিক এক্সচেঞ্জ রেট করা হবে এবং এক্সচেঞ্জ রেটের ক্ষেত্রে যে বিভিন্ন ধরনের হার দেখছি, সেই হারগুলোকে ইউনিফাইড করা হবে। দেখার আগ্রহ থাকবে কীভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক এই নতুন কৌশল কার্যকর করে। রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে  আড়াই শতাংশ অতিরিক্ত সুবিধা দিয়ে ইউনিফাইড হার কার্যকরী করা কঠিন হবে।'

'চতুর্থত, আমরা রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে যে প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি সেটা অবশ্যই নিম্নমুখী অথবা প্রবৃদ্ধি খুবই কম। বলা হচ্ছে, সামনের অর্থবছরে রেমিট্যান্সের প্রবাহ যথেষ্ট পরিমাণে বাড়বে। কিন্তু, এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। কারণ, শুধু আড়াই শতাংশ অতিরিক্ত প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহের বড় ধরনের উন্নতি আশা করা ঠিক নয়। রেমিট্যান্স কম আসার পিছনে হুন্ডির বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে এবং হুন্ডি ব্যবসার পেছনে রয়েছে এ দেশ থেকে টাকা পাচারের বড় ধরনের ঘটনা। সুতরাং টাকা পাচার, ক্যাপিটাল ফ্লাইট, মানি লন্ডারিং বন্ধ করার কার্যকরী উদ্যোগ না নিতে পারলে রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে উন্নতির সম্ভাবনা কম।'

'পঞ্চম, খেলাপি ঋণ কমানোর ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কি কি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, সেগুলো সুস্পষ্ট করা হলে ব্যাংকিংখাতের ওপরে আস্থার জায়গাটা আরও শক্ত হতো। এই মনিটারি পলিসি স্টেটমেন্টে এই সুনির্দিষ্ট উদ্যোগের কথা বলা নেই।'

Comments

The Daily Star  | English

In coffins, from faraway lands

Kazi Salauddin, a 44-year-old man from Cumilla, migrated to Saudi Arabia in October 2022, hoping to secure a bright future for his family. But barely a year later, Salauddin, the father of two daughters and a son, died suddenly.

8h ago