আলুর ‘রেকর্ড’ উৎপাদন, তবুও দাম কমছে না

আলুর দাম
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বার্ষিক উৎপাদন পরিসংখ্যান বলছে, আগের বছরের তুলনায় এ বছর দেশে আলুর উৎপাদন ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি। ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছর কৃষকরা রেকর্ড ১ কোটি ৪ লাখ টন আলু উৎপাদন করেছেন বলে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও বাজারে আলুর দাম কমছে না। ফলে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষকে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে।

এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার বাজারগুলোয় আলুর দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।

আলুর বর্তমান দাম গত বছরের তুলনায় ৫৭ শতাংশ বেশি।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ব্যবসায়ী ও কৃষকরা শীতে বিক্রির জন্য হিমাগারে আলু মজুদ রাখেন। তারা ধীরে ধীরে তাদের মজুদ থেকে আলু বাজারে ছাড়েন।

সেপ্টেম্বরে আলু রোপণের পর তা সংগ্রহ করতে ৯০ দিন সময় লাগে। জানুয়ারিতে ফসল তোলার পর পরবর্তী কয়েক মাস বাজারে আলুর সরবরাহ নিশ্চিত থাকে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জুনের মধ্যে হিমাগারে মজুদ আলু ছেড়ে দেওয়া হয়। যাতে পরবর্তী মৌসুমের আলু তোলা পর্যন্ত বাজারে পুরনো আলু থাকে। বছরের এই সময় অন্যান্য সবজির দাম বেশি থাকায় আলুর চাহিদা বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বার্ষিক উৎপাদন পরিসংখ্যান বলছে, আগের বছরের তুলনায় দেশে আলুর উৎপাদন ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১ কোটি টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন বিভাগের পরিচালক তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশের ইতিহাসে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ আলু উৎপাদিত হয়েছে। বর্তমানে দেশে আলুর ঘাটতি নেই।'

আলুর এই বাড়তি দামের কারণ হিসেবে তিনি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিআরপি) মতো দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর বাজার পর্যবেক্ষণের অভাবকে দায়ী করেন।

তবে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ) সরকারের এ তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেছে, এবার আলুর উৎপাদন ৮০ লাখ টনের বেশি হবে না।

বিসিএসএ'র সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা সরকারি তথ্যের সঙ্গে একমত নই। কোল্ড স্টোরেজ ধারণ ক্ষমতার প্রায় ২০ শতাংশ খালি পড়ে আছে।'

তার প্রশ্ন, 'যদি আলুর উৎপাদন বেশি হয়, তাহলে এই বাড়তি আলু কোথায়?'

তিনি জানান, ব্যবসায়ীরা আলুর মজুদ ছেড়ে দিচ্ছেন। তারা জানেন কৃষকের মজুদ শেষ।

গতকাল মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ের কাঁচাবাজারের কয়েকজন দোকানদারকে আলুর দাম কেজিপ্রতি ৫০ টাকা পর্যন্ত নিতে দেখা গেছে।

দোকানদার জুয়েল মোল্লা ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি কারওয়ান বাজার থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে আলু কিনে ৪৫ টাকায় বিক্রি করছেন।

ঢাকার অন্যতম বৃহৎ কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা নাসির উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ১/২ সপ্তাহ আগে ৬৫ কেজির এক বস্তা আলু বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪৭০ টাকায়।'

দেশের উত্তরাঞ্চলেও আলুর দাম বেড়েছে। সেখানে দেশের বেশিরভাগ আলু উৎপাদিত হয়।

বিশেষ করে দিনাজপুরের রেলবাজারহাট ও বাহাদুরবাজারের ব্যবসায়ীরা ডেইলি স্টারকে জানান, গত ঈদুল আযহা পর্যন্ত পাইকারি ও খুচরা বাজারে আলুর দাম স্থিতিশীল ছিল।

ঈদের ঠিক আগে জেলা শহরে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ২২ থেকে ২৫ টাকায়। এর পরপরই দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ টাকা।

এরপর থেকে খুচরা ও পাইকারি উভয় পর্যায়েই আলুর দাম বাড়তে থাকে। সম্প্রতি, কেজিতে আলুর দাম ৫ টাকা বেড়েছে।

দিনাজপুরের রেলবাজারহাটের পাইকারি বিক্রেতা সুমন আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূলত সরবরাহের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ওঠানামা করে।'

গত সোমবার তিনি প্রতি কেজি আলু ৪৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছিলেন বলেও জানান।

'বড় ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে এই দাম বেড়েছে' উল্লেখ করে দিনাজপুরের অপর পাইকারি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অন্যান্য সবজির দাম বেশি হওয়ায় অনেকে আলু কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে দেশে আলুর ব্যবহার বেড়েছে।'

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান এ জন্য বাজার পর্যবেক্ষণের অভাব ও ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফার মানসিকতাকে দায়ী করেছেন।

তিনি আরও বলেন, 'যখন আলুর উৎপাদন বেশি, তখন এর বাড়তি দাম গ্রহণযোগ্য নয়।'

ডিএনসিআরপির মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাজার মনিটরিংয়ের জন্য জনবলের অভাব আছে।'

তিনি আরও বলেন, 'কাঁচাবাজারের সব পণ্য পর্যবেক্ষণ করা কঠিন। কোনো পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হয়ে গেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিই।'

'আমাদের কাছে বাজারমূল্য বা উৎপাদন ব্যয়ের তথ্য নেই। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উচিত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএনসিআরপির এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকারের দেওয়া কৃষি পণ্য উৎপাদনের তথ্যের সঙ্গে বাজারের মজুদের বাস্তবে মিল পাওয়া যায় না।'

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy

The number of Bangladeshis crossing the perilous Mediterranean Sea to reach Italy has doubled in the first two months this year in comparison with the same period last year.

5h ago