যুক্তরাজ্যের নতুন বাণিজ্য সুবিধা

‘বাংলাদেশ বছরে সাশ্রয় করতে পারবে ৩১৫ মিলিয়ন পাউন্ড’

ডিসিটিএস, ডেভেলপিং কান্ট্রিজ ট্রেডিং স্কিম, যুক্তরাজ্য,
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যের ডেভেলপিং কান্ট্রিজ ট্রেডিং স্কিম (ডিসিটিএস) থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত জানুয়ারি থেকে যুক্তরাজ্য ডিসিটিএস নামে নতুন জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস (জিএসপি) চালু করেছে। এর অধীনে উন্নয়নশীল দেশগুলো অস্ত্র ছাড়া আর সব পণ্যে যুক্তরাজ্যের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে।

গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক তার বাসভবনে এক অনুষ্ঠানে বলেন, 'এই স্কিম স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ায় সহায়তার পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।'

তিনি জানান, ডিসিটিএস স্কিম জিএসপির তুলনায় অনেক উদার। কেননা, এটি উন্নয়নশীল দেশ ও ব্রিটিশ ক্রেতাদের আগের চেয়ে বেশি সুবিধা দেবে।

তার মতে, ডিসিটিএস মূলত বাংলাদেশকে সহায়তা করবে। কারণ, যুক্তরাজ্য বিশেষ করে বাংলাদেশের কথা মাথায় রেখে স্কিমটি তৈরি করেছে।

ব্রিটিশ হাইকমিশনার আশা করেন যে ডিসিটিএস বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে সহায়তা করবে। যদিও রপ্তানি বহুমুখীকরণ এখনো বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের ট্রেড প্রেফারেন্স পলিসির উপদেষ্টা সাবিহা আহমেদ অনলাইন বক্তব্যে বলেন, 'যুক্তরাজ্যের আগের জিএসপির তুলনায় ডিসিটিএসের আরও উদার হওয়ায় তা থেকে বাংলাদেশ উপকৃত হবে।'

তার মতে, এই স্কিমে বিপুল পরিমাণ পণ্যের জন্য আমদানিকৃত নন-অরিজিন কনটেন্টের সীমা ৭০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ৯৫ দেশ থেকে সোর্সিং করে কাঁচামাল এসন সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ পণ্য উৎপাদন করতে করলেও শুল্ক সুবিধা পাবে।

তার ভাষ্য, বাংলাদেশ বছরে সর্বোচ্চ ৩১৫ মিলিয়ন পাউন্ডের শুল্ক ছাড় পাবে প্রতি বছর।

ডিসিটিএসের আওতায় বাংলাদেশ ২০২৯ সালে স্বাভাবিকভাবে 'এনহ্যান্সড প্রেফারেন্সেস' স্তরে উন্নীত হবে। এটি যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানিতে ৯৮ শতাংশ শুল্ক সুবিধা দেবে।

তিনি মনে করেন, ডিসিটিএস বাণিজ্য ও অগ্রগতি বাড়াতে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার পাশাপাশি শ্রম ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার ওপর ভিত্তি করে এই স্কিমটি চালু হয়েছে।

এই স্কিমে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার, দুর্নীতিবিরোধী, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে সাবিহা আহমেদ আরও বলেন, যুক্তরাজ্য এই দিকগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।

অনুষ্ঠানে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'যুক্তরাজ্যের ৬৮৮ বিলিয়ন ডলারের আমদানির মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে। সেখানে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার বাড়ানোর বিপুল সম্ভাবনা আছে।'

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য ও জুতা, কৃষি-খাদ্য ও প্রক্রিয়াজাত পণ্য, মাছ, চিংড়ি, হালকা প্রকৌশল পণ্যসহ রপ্তানির সম্ভাবনাময় শতাধিক পণ্যের তালিকা করেছে।

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের রপ্তানির ৯০ শতাংশের বেশি আসে পোশাক খাত থেকে। তবে যুক্তরাজ্যের আমদানি অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় এবং পোশাক পণ্যের অংশ মাত্র ৩ দশমিক ৪ শতাংশ।

তিনি আরও বলেন, 'এটি প্রমাণ করে যে যুক্তরাজ্যের বাজার বাংলাদেশের জন্য কতটা সম্ভাবনাময়।'

তার মতে, 'যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের বাজার প্রসারিত করার প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এ বিষয়ে জ্ঞান ও তথ্য ছাড়াও বড় ব্র্যান্ড ও পোশাক পণ্য ছাড়া অন্যান্য পণ্যের খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের অভাব।'

এ ছাড়াও, বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের অনেকে যুক্তরাজ্যের মান ও প্রশংসাপত্রের শর্ত পূরণে অসুবিধা বোধ করেন বলেও মন্তব্য আব্দুর রাজ্জাকের।

তিনি সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত চিহ্নিতকরণে প্রণোদনা বৃদ্ধি ও বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেশন সুবিধা চালুর সুপারিশ করেন।

রেনাটা লিমিটেডের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এস কায়সার কবির বলেন, 'ওষুধ খাতে উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের ওষুধ উদ্ভাবকদের সঙ্গে কাজ করতে পারে।'

'কেননা, এ খাতে বাজার সম্প্রসারণ ও বাজার ধরার মূল চাবিকাঠি হচ্ছে গবেষণা ও উন্নয়ন।'

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক হাসান, ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সিমিন রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুর রহিম খান ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. সামির সাত্তার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

‘Father of the Nation’ a fascist tool to silence dissent: Nahid

In a Facebook post he wrote, "Sheikh Mujibur Rahman is not the Father of the Nation"

21m ago