নভেম্বরে বিশ্বব্যাংকের ২৫০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পেতে পারে বাংলাদেশ

শর্ত পূরণ করায় বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে আরও ২৫০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা আশা করছে সরকার।
World Bank logo

শর্ত পূরণ করায় বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে আরও ২৫০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা আশা করছে সরকার।

বাংলাদেশ ফার্স্ট রিকভারি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিটের (ডিপিসি) আওতায় এই বাজেট সহায়তা দেওয়া হবে।

বাংলাদেশের 'প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে শক্তিশালী আর্থিক খাত গড়ে তোলার সহায়তা'র অংশ হিসেবে ওয়াশিংটনভিত্তিক এই সংস্থা দুই কিস্তির প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড় দিতে যাচ্ছে।

গত অর্থবছরে এই তহবিল আসার কথা ছিল। কিন্তু সরকার ১২টি শর্ত পূরণ করতে না পারায় বিশ্বব্যাংক অর্থ ছাড় দেয়নি।

শর্তগুলোর মধ্যে ছিল শুল্ক কমানোর নীতিসহ জাতীয় শুল্ক নীতি এবং মন্ত্রিসভা অনুমোদিত সহজ শুল্ক কাঠামো। গত ১৬ জুলাই তা করা হয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করে।

জাতীয় শুল্ক নীতিতে ২০২০-২১ অর্থবছরের শেষে আমদানির সুরক্ষা হার ২৯ দশমিক ছয় শতাংশ থেকে চলতি অর্থবছরে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে।

আরেকটি শর্ত হলো—দেশের সব কর অঞ্চলে উৎস আয়কর স্থগিতের জন্য এ-চালান ব্যবস্থা চালু করা। এখন পর্যন্ত এটি সীমিত আকারে করা হয়েছে।

এটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়কর ও অভ্যন্তরীণ মূল্য সংযোজন কর আদায় ২ লাখ ৪৪ হাজার ২০০ কোটি টাকায় উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ডিপিসি'র অন্যতম উন্নয়ন লক্ষ্য হচ্ছে শুল্ক আধুনিকীকরণ। কারণ অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুসারে প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে পৌঁছানো এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে প্রবেশ নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্টের (ই-জিপি) ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে সরকারি ক্রয় দক্ষতাকে সমর্থন করে ডিপিসি। এটি এমন একটি ব্যবস্থা যা ইতোমধ্যে সরকারের এক দশমিক এক বিলিয়ন ডলার বাঁচাতে অবদান রেখেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, সরকার শর্তগুলো বাস্তবায়ন করে অর্থ ছাড়ের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে।

তারা আরও জানান, বিশ্বব্যাংক যদি বাংলাদেশের এই অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট হয় তবে নভেম্বরের মধ্যে অর্থ ছাড় করা হতে পারে।

বিশ্বব্যাংক বলেছে, 'মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো পরিস্থিতিতে ই-জিপির ব্যবহার বাড়ানোয় অধিকতর স্বচ্ছতার সঙ্গে সময়োচিত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।'

পরে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির (বিপিপিএ) দায়িত্ব ও ক্ষমতা বাড়াতে বিপিপিএ আইন প্রণয়ন করতে বলা হয়।

গত ৫ জুলাই পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বিলটি সংসদে উত্থাপন করলে তা আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

যদি এই শর্ত সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে চলতি অর্থবছরে জিপি পদ্ধতি ব্যবহার করে ক্রয়ের গড় সময় ৫০ দিনে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।

এই বাজেট সহায়তার জন্য বিশ্বব্যাংকের আরেকটি প্রধান কাজ ছিল ব্যাংক কোম্পানি আইনে সংশোধন করা যাতে আন্তর্জাতিক চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পর্যবেক্ষণ কাঠামো শক্তিশালী করা যায়। গত ২১ জুন জাতীয় সংসদে এই সংশোধনী অনুমোদন করা হয়।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ইতোমধ্যে সাধারণ প্রভিডেন্ট ফান্ড ইস্যু ও কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ইন্সট্রুমেন্টকে জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে যুক্ত করতে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি দুই লাখ কোটি টাকায় নেমে আসবে।

আরেকটি শর্ত হলো—অস্থাবর সম্পদ জামানত হিসেবে বন্ধক রেখে ব্যাংক ঋণ দেওয়ার পথ সুগম করতে নিরাপদ লেনদেন আইন প্রণয়ন এবং অস্থাবর সম্পদের জন্য নোটিশ-ভিত্তিক সিকিউরিটি ইন্টারেস্ট রেজিস্ট্রি প্রতিষ্ঠা করা।

গত ২০ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে বিলটি উত্থাপন করেছেন।

বিশ্বব্যাংক 'মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা' গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে পরিবেশকে পুনরুজ্জীবিত করার কথা বলা হয়েছে।

এ ছাড়া, চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, এটি অর্জন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলাই সেক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকারের আর্থিক খাতের নীতিমালার বিস্তৃত কর্মসূচিকে সমর্থন করে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে রিকভারি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Public medical colleges: 86 doctors, 136 students punished since August 5

Over the last two months, at least 86 physicians and 136 students in eight public medical colleges and hospitals across the country have faced different punitive actions on various allegations, including “taking a stance against” the quota reform movement.

10h ago