ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারে পাঁচ বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়

আইবিএএস++ সরকারি সেবা গ্রহণের প্রক্রিয়াগুলোয় জড়িত অপচয় ও দুর্নীতি দূর করতে সক্ষম করবে।
আইবিএএস++, ইন্টিগ্রেটেড বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্ট সিস্টেম, অর্থ মন্ত্রণালয়, বিশ্বব্যাংক,

ইন্টিগ্রেটেড বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্ট সিস্টেম (আইবিএএস++) বাস্তবায়নের ফলে আগামী পাঁচ বছরে দেশের আনুমানিক ৫৯ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

আইবিএএস++ সরকারি সেবা গ্রহণের প্রক্রিয়াগুলোয় জড়িত অপচয় ও দুর্নীতি দূর করতে সক্ষম করবে।

আইবিএএস++ বেতন, পেনশন ও সামাজিক সুবিধার জন্য ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের পাশাপাশি রিয়েল টাইম রাজস্ব আদায়ের স্বয়ংক্রিয় চালান ব্যবস্থা চালু করে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে একীভূত করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় দাতাদের সহায়তায় এই ধরনের বেশ কয়েকটি পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট (পিএফএম) সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে পিএফএম সামিট ২০২৩-এ অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিশ্বব্যাংকের সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

আট লাখ ৪০ হাজার পেনশনভোগী আইবিএএস++ এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বছরে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা ব্যাংক সার্ভিস চার্জ, ভ্রমণ খরচ ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খরচ বাঁচবে।

এতে আরও বলা হয়, সরকার স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির মাধ্যমে তিন কোটি উপকারভোগীকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ভাতা ও উপবৃত্তি দিচ্ছে। এক্ষেত্রেও মানুষের খরচ সাশ্রয় হবে।

জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের লেনদেন অটোমেশনের মাধ্যমে সরকার ক্রয় সীমা প্রয়োগ ও সুদের হার যৌক্তিক করার মাধ্যমে সরকারের বাঁচবে ২৫ হাজার কোটি টাকা।

জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের প্রায় ৩৯ লাখ ৩১ হাজার উপকারভোগী স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের অর্থ পাচ্ছেন।

ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে বেতন পাওয়া প্রায় ১২ লাখ ১৯ হাজার সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ৯৮ শতাংশসহ ৩ কোটি ৭১ লাখ উপকারভোগী এই সংস্কার ব্যবস্থার আওতায় এসেছেন।

যদিও বাংলাদেশ পিএফএম ব্যবস্থার উন্নতিতে অগ্রগতি অর্জন করেছে, তবে এখনো অনেক উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে।

এসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যে আছে ঠিকভাবে প্রকল্প না নেওয়া, দেরিতে টাকা ছাড় করা, সামাজিক খাতের টাকা প্রদানে অপচয়, ধীর ক্রয় প্রক্রিয়া ও অডিটের অপর্যাপ্ত ফলো-আপ।

অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, 'বাংলাদেশের অর্থনীতি অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো করছে।'

তিনি আরও বলেন, 'জিডিপি ও জিডিপিতে বিনিয়োগ অনুপাত বাড়ছে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু না হওয়া পর্যন্ত মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে প্রতি বছর বেশি সংখ্যক মানুষ বিদেশে গেলেও রেমিট্যান্স আয় কমছে।'

'আমরা রেমিট্যান্স আয়ের গতি ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছি, তাই প্রত্যাশিত আয় আসেনি,' যোগ করেন তিনি।

রেমিট্যান্স আয় বাড়ানোর জন্য সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'কেবলমাত্র রেমিট্যান্স বাড়লেই বৈদেশিক মুদ্রা ও অন্যান্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে পারে।'

বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলাই সেক বলেন, শক্তিশালী পিএফএম ব্যবস্থা কার্যকর ও দক্ষ সেবা প্রদান এবং সুশাসন নিশ্চিত করে।

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, অন্তর্ভুক্তি, স্থায়িত্ব, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব—এই ছয়টি দিক নিয়ে তিনি কথা বলেন।

সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ এবং সরকারি সেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফজলে কবির বলেন, পিএফএম ব্যবস্থা জনগণের জন্য যথাযথ সেবা নিশ্চিত করতে ও সরকারি তহবিলের সুষ্ঠু ব্যবহারে ভালো কাজ করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর ও সাবেক সিনিয়র অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, সরকার অনেক প্রযুক্তিগত সংস্কার এনেছে এবং এখন মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রয়োজন।

তিনি মনে করেন, আমলাদের আরও পেশাদার হওয়া উচিত এবং তাদের কাজে দক্ষতা অর্জনের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

সাবেক অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার, অর্থ বিভাগের সচিব মো. খায়রুজ্জামান, বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের গভর্ন্যান্স গ্লোবাল প্র্যাকটিসের প্র্যাকটিস ম্যানেজার হিশাম ওয়ালি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সিরাজুন নূর চৌধুরী এবং যুগ্মসচিব আবু দাইয়ান মোহাম্মদ আহসানউল্লাহ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

Comments