চামড়াজাত পণ্যের নির্ভরযোগ্য উৎস হয়ে উঠছে বাংলাদেশ 

বাংলাদেশে তৈরি স্নিকারস, ব্যাকপ্যাকস, চামড়ার হোমওয়্যার ও মোল্ডেড লাগেজের মতো নতুন পণ্য এখন ভারত, তুরস্ক, আলজেরিয়া, পোল্যান্ড ও চিলির মতো নতুন বাজারে পৌঁছেছে।
চামড়াজাত পণ্য, জুতা, রপ্তানি, ভারত, তুরস্ক, আলজেরিয়া, পোল্যান্ড, চিলি,

বিদেশি ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য ও জুতার চাহিদা বাড়ছে। এ কারণে তাদের কাছে বাংলাদেশ এই খাতের একটি নির্ভরযোগ্য উৎস হয়ে উঠছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কম দাম ও ভালো মানের কারণেই মূলত বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য ও জুতা। তাই এই শিল্পে নিয়ে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চামড়াজাত পণ্যের বৈচিত্র্যের পাশাপাশি বাজার বৈচিত্র্যের কারণে বাংলাদেশ এ ধরনের পণ্যের নির্ভরযোগ্য উৎস হয়ে উঠেছে।

ফলে, বাংলাদেশে তৈরি স্নিকারস, ব্যাকপ্যাকস, চামড়ার হোমওয়্যার ও মোল্ডেড লাগেজের মতো নতুন পণ্য এখন ভারত, তুরস্ক, আলজেরিয়া, পোল্যান্ড ও চিলির মতো নতুন বাজারে পৌঁছেছে।

লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মানজুর বলেন, বিশ্বব্যাপী চামড়ার জুতা ও চামড়াজাত পণ্যের জন্য বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিকশিত হচ্ছে। খাতভিত্তিক উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব এই শিল্পে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে।

তিনি জানান, গত ছয় বছরে প্রায় ১২০টি নতুন কারখানা খোলা হয়েছে এবং অনেক আন্তর্জাতিক বায়িং হাউজ জুতা উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশে কার্যালয় খুলেছে।

গতকাল ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদারগুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো-২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান।

এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মানজুর আরও বলেন, 'ওই রপ্তানিকারকরা আগে চীন ও ভিয়েতনাম থেকে পণ্য সংগ্রহ করতেন। কিন্তু, এখন বাংলাদেশ থেকে করছে, কারণ এখানে কম দামে মানসম্পন্ন পণ্য পাচ্ছে।'

তিনি বলেন, ২০০৯ অর্থবছরের ২২৪ মিলিয়ন ডলারের খাতভিত্তিক রপ্তানি থেকে ২০২৩ অর্থবছরে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

তিনি জানান, বাংলাদেশ এখন জুতা, মানিব্যাগ, স্যান্ডেল, বেল্ট, আনুষঙ্গিক, ফ্লিপ-ফ্লপ ও বিভিন্ন ধরণের বুট সরবরাহ করছে। গ্রাহকের তালিকায় আছে ফিলা, ডিচম্যান, টিম্বারল্যান্ড, অ্যালডো, এইচএন্ডএম, মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার, এস অলিভার ‍ও উলভারিনসহ বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় বৈশ্বিক খুচরা বিক্রেতা।

দুই দশকেরও কম সময় আগে যেখানে খাতভিত্তিক রপ্তানির ৫০ শতাংশেরও বেশি অংশ নিয়ে চামড়ার আধিপত্য ছিল, আজ সেখানে ৯০ শতাংশেরও বেশি তৈরি চামড়াজাত পণ্য।

বর্তমানে দেশে ২৬৪টি কারখানা আছে, যার মধ্যে ৯৮ শতাংশ কমপ্লায়েন্স স্ট্যাটাস পেয়েছে এবং সরাসরি দুই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

এলএফএমইএবির তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ২৬ শতাংশ। দেশটিতে ৪৫৩ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ১৮ মিলিয়ন জোড়া জুতা রপ্তানি করা হয়েছে।

ফুটওয়্যার ডিস্ট্রিবিউটর অ্যান্ড রিটেইলারস অব আমেরিকার তথ্য বলছে, ২০২২ সালে মাত্র আটটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি জুতা রপ্তানি করেছে।

এলএফএমইএবির তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে ভারতে বাংলাদেশের জুতা রপ্তানি ৪৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে, দেশীয় উৎপাদনকারীদের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ হলো সময়। কারণ, প্রতিযোগী দেশগুলো ৪৫ দিন থেকে ৬০ দিন সময় নিলেও বাংলাদেশি জুতা উৎপাদনকারীদের লাগে ৯০ থেকে ১০০ দিন।

সৈয়দ নাসিম মানজুর জানান, উচ্চ মূল্য সংযোজন, পণ্যের বৈচিত্র্য এবং উদীয়মান নকশার সক্ষমতা এই শিল্পকে কম দামি পণ্য উৎপাদন থেকে সরে যেতে সহায়তা করেছে।

তিনি বলেন, 'এখন সময় এসেছে উচ্চমূল্যের অংশে যাওয়ার, ভলিউম-ভিত্তিক রপ্তানি থেকে মূল্য-ভিত্তিক রপ্তানিতে যাওয়ার।'

এবিসি ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আরিফুর রহমান চৌধুরী বলেন, কাঁচামাল দেশেই উৎপাদিত হওয়ায় খাতটি আশাব্যঞ্জক।

তিনি জানান, গত অর্থবছরে তারা ১২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন এবং আগের বছরের তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে।

তাদের কারখানায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মাফ সুজ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ শাহাদাত উল্লাহ বলেন, গত অর্থবছরে তার কোম্পানি ৮৫০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে।

তিনি বলেন, 'চলতি অর্থবছরে এক হাজার কোটি টাকার প্রাক্কলন করা হয়েছে, কারণ বাংলাদেশ বিদেশি ক্রেতাদের কাছে ভালো হাবে পরিণত হচ্ছে।'

'চামড়াজাত পণ্য ও ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের জন্য একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ে তুলতে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৩০ একর জমি কিনেছে তার কোম্পানি,' যোগ করেন তিনি।

পিকার্ড বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, এ খাতের প্রবৃদ্ধির হার বেশ ভালো।

তিনি বলেন, 'গত কয়েক দশকে এ খাতের অর্জনের দিকে তাকালে বোঝা যায়, আমরা আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে শুরু করেছি।'

বাংলাদেশে এপেক্স ফুটওয়্যার, জেনিস শুজ ও বে ফুটওয়্যারসহ প্রায় ৬৪টি দেশীয় চামড়াজাত পণ্য কোম্পানি আছে। তারা মূলত জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রে কিছু পণ্য রপ্তানি করে।

Comments