যুক্তরাষ্ট্রে কমছে তৈরি পোশাকের চালান

তৈরিপোশাক
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে চাহিদা কম ও মজুদ জমে যাওয়ায় গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমে পাঁচ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল অফিসের (ওটেক্সা) তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের একই সময়ে রপ্তানিকারকরা সে দেশ থেকে আয় করেছিলেন আট দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার।

কাপড় ও তৈরি পোশাকের চালান সম্মিলিতভাবে বিবেচনা করলে আয় দাঁড়াবে পাঁচ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। এটি ২৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ কম।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার। গত বছর এই দেশটিতে রপ্তানিকারকরা ১০ দশমিক শূন্য দুই বিলিয়ন ডলার দামের পোশাক পাঠিয়েছিলেন। এটি ছিল এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ওটেক্সার তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরে সারা বিশ্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি ২২ দশমিক ৮১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৮২ বিলিয়ন ডলার।

কাপড় ও তৈরিপোশাক যৌথভাবে বিবেচনা করা হলে এটি ২১ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমে ৮১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর কাছে পোশাক মজুদ থাকায় গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের জাতীয় রপ্তানিতে প্রায় ৮৫ শতাংশ অবদান রাখা তৈরিপোশাকের চালান কমছে।

ক্রিসমাস ও নববর্ষের বিক্রি বাড়লেও এ বছর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে পোশাক পণ্যের বিক্রি কমতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম খুচরা প্ল্যাটফর্ম ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশনের (এনআরএফ) পূর্বাভাস বলছে, চলতি নভেম্বর ও আগামী ডিসেম্বরে ছুটির খরচ রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি তিন থেকে চার শতাংশের মধ্যে বেড়ে ৯৫৭ দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার থেকে ৯৬৬ দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলারের মধ্যে থাকবে।

এনআরএফ'র প্রেসিডেন্ট ও সিইও ম্যাথিউ শ্যায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, 'ছুটির দিনে বিক্রির প্রবৃদ্ধি মহামারির আগের অবস্থায় ফিরে আসলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।'

তার মতে, 'সামগ্রিকভাবে পরিবারগুলোর আর্থিক অবস্থা ভালো আছে। তাদের খরচ করার ক্ষমতা অব্যাহত থাকবে।'

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত তিন বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধির হার ধীর হলেও মার্কিন সরকারের ট্রিলিয়ন ডলার প্রণোদনার ফলে খুচরা খরচের হার অনেক বেড়েছে। এই বছরে ছুটির খরচ ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গড় বার্ষিক ছুটির প্রবৃদ্ধির তিন দশমিক ছয় শতাংশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এনআরএফ'র প্রধান অর্থনীতিবিদ জ্যাক ক্লেইনহেঞ্জ বলেন, 'মূল্যস্ফীতি, গ্যাসের উচ্চমূল্য, কঠোর ঋণ শর্ত ও উচ্চ সুদের হার সত্ত্বেও ক্রেতারা চালকের আসনেই আছেন। তাদের অবস্থা স্থিতিশীল।'

তিনি আরও বলেন, 'আশা করছি, এ বছরের শেষ পর্যন্ত খরচ অব্যাহত থাকবে। তবে ধীর গতিতে।'

ক্লেইনহেঞ্জ মনে করেন, অক্টোবরের মাঝামাঝি পোশাক ও পোশাকের আনুষঙ্গিক পণ্যের বিক্রি মাসের হিসাবে শূন্য দশমিক আট শতাংশ কমেছে। তবে বছরের তুলনায় শূন্য দশমিক আট শতাংশ বেড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে অন্যতম শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগামী জুনের আগে তৈরিপোশাকের রপ্তানি বাড়বে না।'

তিনি আরও বলেন, 'এর কারণ যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের চাহিদা কমেছে এবং খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো তাদের মজুদ করা পণ্য বিক্রি করতে পারেনি।'

তিনি জানান, আগামী মৌসুমের জন্য কার্যাদেশ কম এসেছে। ক্রেতারা স্থানীয় সরবরাহকারীদের পণ্যের দাম কম দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি শুধু দামের ক্ষেত্রেই নয়, পরিমাণেও কমেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও উচ্চ ব্যাংক সুদের হারের কারণে বিক্রি কমছে। ক্রেতারা এখনো অপ্রয়োজনীয় পণ্যের তুলনায় মৌলিক পণ্যগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।'

তার মতে, স্থানীয় পোশাক সরবরাহকারীরা সাধারণত অক্টোবর ও নভেম্বরে প্রচুর অর্ডার পান। সম্প্রতি দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও শ্রমিক অসন্তোষের কারণে কাজের পরিমাণ কম।

'তবে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও যুক্তরাজ্যের মতো নতুন বাজারের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশে বাংলাদেশ ভালো করছে' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Kudos for consensus in some vital areas

Kudos for consensus in some vital areas

If our political culture is to change, the functioning of our political parties must change dramatically.

4h ago