আট মাসে ৬৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, কৃষিপণ্য রপ্তানি, কৃষিপণ্য, রপ্তানি, বাংলাদেশের অর্থনীতি,

চলতি অর্থবছরে দেশের কৃষিপণ্য রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। গত তিন বছরে রপ্তানি ধীরে ধীরে কমলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সরবরাহ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ও ডলার সংকট কিছুটা কেটে যাওয়ায় এই খাতে উন্নতি হচ্ছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বলছে, গত আট মাসে কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে ৬৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ৬১ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

এই তালিকায় আছে—চা, শাকসবজি, তামাক, ফল, মশলা, শুকনো খাবার, তৈলবীজ, পান, প্রাণী বা উদ্ভিদ থেকে পাওয়া চর্বি ও তেল, চিনি ও মিষ্টি খাবার, পানীয়, স্পিরিট ও ভিনেগার এবং তেলসহ অন্যান্য পণ্য।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর মাত্র চার মাস আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ থেকে ৬৩ মৌলিক প্রক্রিয়াজাত পণ্যসহ সাত শতাধিক কৃষিপণ্য রপ্তানি করা হয়।

প্রধান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে আছে হিমায়িত মাছ, চিংড়ি ও অন্যান্য হিমায়িত খাদ্য পণ্য, চা, মসলা, শুকনো ফলসহ অন্যান্য ফল এবং কিছু প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্য।

প্রধান পণ্যগুলো রপ্তানি করা হয় মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যে।

বর্তমানে, প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্য প্রস্তুতের ৪৮৬টি প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে ২৪১ প্রতিষ্ঠান রপ্তানি ও বাকিগুলো দেশের বাজারে সরবরাহ করে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশ ১৪৫টিরও বেশি দেশে খাদ্যশস্য, হিমায়িত মাছ, প্রক্রিয়াজাত মাংস, চা, শাকসবজি, তামাক, ফুল, ফল, মসলা, শুকনো খাবার, গবাদিপশু, পোল্ট্রি ও মাছের খাবারসহ অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি করে।'

'সরবরাহ ব্যবস্থা অনেকটা স্থিতিশীল হওয়ায় কৃষি পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'গত দুই বছরে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। পণ্য পরিবহন খরচ বেড়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট দেশের কৃষি খাতকে প্রভাবিত করেছে।'

'আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় আমরা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছি।'

তার মতে, এখন পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে। সরবরাহ ব্যবস্থা স্থিতিশীল হচ্ছে। ডলারের প্রাপ্যতা বাড়ছে। কৃষি খাতে রপ্তানি পরিস্থিতির উন্নয়নে এসব সহায়তা করছে।

কোনো প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম দুর্যোগ সৃষ্টি না হলে আগামীতে এ খাতে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে বলেও মনে করেন কামরুজ্জামান কামাল।

পারটেক্স স্টার গ্রুপের ড্যানিশ ফুডসের হেড অব মার্কেটিং মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কাঁচামাল সংকট কেটে যাওয়ায় রপ্তানি আদেশ বাড়ছে।'

এ ছাড়া, কাঁচামাল আমদানি নিয়ে চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি ডলার সংকট কিছুটা কমায় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও স্থিতিশীলতা অর্জন করা সম্ভব হবে।

এই প্রেক্ষাপটে শুকনো খাবার, বিশেষ করে বিস্কুট জাতীয় পণ্যের রপ্তানি বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'ইউরোপে যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ থেকে শুকনো ও প্রক্রিয়াজাত খাবার রপ্তানিসহ বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থায় বাধা পড়ে।'

তিনি জানান, ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করতে না পারায় গত অর্থবছরে রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমে যায়।

কাঁচামাল সরবরাহ ব্যবস্থা শক্তিশালী হওয়ায় আগামীতেও রপ্তানি বাড়বে বলে মনে করেন মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।

বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রপ্তানির পরিমাণ ও আয় বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ রমজানের চাহিদা।'

বাংলাদেশ ফ্রোজেন স্ন্যাকস যেমন ফ্ল্যাট ব্রেড, পরোটা, সিঙ্গারা ও পুরি রপ্তানি করে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'সেমাই জাতীয় পণ্যও প্রচুর রপ্তানি হচ্ছে দেখেছি।'

তিনি জানান, প্রবাসী ও মধ্যপ্রাচ্যে অভিবাসী শ্রমিকরা সাধারণত বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের প্রধান ক্রেতা।

কৃষিপণ্যের দাম কমে যাওয়ায় বেশি রপ্তানি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'বিদেশ থেকে ক্রেতাদের অর্ডারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সুগন্ধি চাল পাঠাতে পারলে আমাদের রপ্তানি আরও বেশি হতো।'

Comments

The Daily Star  | English
US attack on Iran nuclear sites

Iran denounces US attack as ‘outrageous’

Iran says 'no signs of contamination' after US attacks on key nuclear sites

9h ago