১৭ শতাংশ আমানতকারী হারিয়েছে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান

এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ১৭ শতাংশ আমানত হিসাব কমেছে।
এমডি নেই এক ডজন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে!

সুদহার বাড়ায় ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (এনবিএফআই) আমানতের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু আমানত হিসাবের সংখ্যা অনেক কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল শেষে এনবিএফআইগুলোতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ৪৩ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। তার মানে, আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

অন্যদিকে গত বছর আমানত হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার ২২১টি, ২০২২ সালে যা ছিল ৫ লাখ ২১ হাজার ৫৫৬টি। অর্থাৎ প্রায় ১৭ শতাংশ আমানত হিসাব কমেছে।

অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কান্তি কুমার সাহা বলেন, স্বনামধন্য এনবিএফআইগুলো সুদহার বৃদ্ধির জন্য গ্রাহক টানতে পারায় আমানতের পরিমাণ বেড়েছে।

গত বছরের জুনে সুদহারের সীমা তুলে নেওয়ার পর ব্যাংক ও এনবিএফআই উভয়ই আমানতের ওপর উচ্চ সুদহার দিচ্ছে।

তিনি বলেন, 'দুটি কারণে আমানত হিসাবের সংখ্যা কমেছে। একটি হলো, এ খাতের ঋণ অনিয়ম ও কেলেঙ্কারির ঘটনায় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে অনেক আমানতকারী এনবিএফআই থেকে অর্থ তুলে নিয়েছেন। আরেকটি কারণ হলো, চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে কিছু আমানতকারী তাদের অর্থ তুলে নিয়েছেন।

গত বছরের মার্চ থেকে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে আছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

কান্তি কুমার সাহা, খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ প্রয়োজনীয় খাবারের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্সের সিইও আরও বলেন, কিছু আমানতকারী এনবিএফআই থেকে অর্থ তুলে নিয়ে ব্যাংকে জমা রাখছেন, কারণ ব্যাংকগুলো এখন আমানতের ওপর উচ্চ সুদ দিচ্ছে।

'ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের মধ্যে যারা এনবিএফআইগুলোতে অতিরিক্ত অর্থ রেখেছিলেন, তারাও এখন সেই অর্থ তুলে নিচ্ছেন,' যোগ করেন তিনি।

একই কথা বলেন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিইজি) চেয়ারম্যান ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে আমানতকারীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাই তারা অর্থ তুলে নিচ্ছেন, এতে আমানত হিসাবের সংখ্যা কমেছে।'

তিনি বলেন, 'মূল্যবৃদ্ধির কারণে ক্ষুদ্র আমানতকারীরা সঞ্চয় ভাঙাতে বাধ্য হচ্ছেন।'

'এনবিএফআইয়ের আমানতের পরিমাণ বেড়েছে, কারণে আমানতের সঙ্গে সুদ যোগ হয়েছে,' যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশে তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসহ ৩৫টি এনবিএফআই আছে, তাদের মোট ৩০৮টি শাখা রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এ খাতে ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ৭০ হাজার ৩২১ কোটি টাকা।

Comments