ডলারের দাম কেন কমতে দিতে চায় না বাংলাদেশ ব্যাংক

ডলারের দাম কমানোর প্রভাব
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনকে মূল্যস্ফীতির জন্য দায়ী করা হচ্ছিল। কিন্তু এখন টাকার মান বাড়তে শুরু করতেই উল্টো পথে হাঁটছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ডলারের দরপতন ঠেকাতে নিজেরাই ডলার কেনা শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের একটি বড় সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মহামারির পর থেকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যায়। শক্তিশালী ডলারের কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে নিত্যপণ্যের দামে। ২০২৩ সালের মার্চ থেকে দেশে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে ছিল। জুনে তা কিছুটা কমে ৮.৪৮ শতাংশে নামলেও সাধারণ মানুষের ওপর চাপ কমেনি।

অর্থনীতিবিদ ও নীতি নির্ধারকেরা যখন ডলারের উচ্চমূল্যকে দেশের দীর্ঘমেয়াদী মূল্যস্ফীতির জন্য দায়ী করছেন, ঠিক তখনই টাকার মান কিছুটা বাড়তেই বাজারে হস্তক্ষেপ করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত পাঁচ দিনে ডলারের বিপরীতে টাকার মান বেড়ে প্রতি ডলার ১২০ টাকায় নেমে আসে। কিন্তু এরপরই বাজার থেকে মাত্র দুই দিনে ৪৮৪ মিলিয়ন ডলার কিনে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে বুধবার ডলারের আন্তব্যাংক বিক্রয়মূল্য আবার বেড়ে ১২১ টাকা ২০ পয়সায় উঠেছে।

মূল প্রশ্ন হলো—যখন ডলারের দাম কমে মূল্যস্ফীতি কমার সুযোগ তৈরি হয়, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেন তা হতে দিচ্ছে না?

এর একটি কারণ হলো, দেশের মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি বাজারভিত্তিক নয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে গত মে মাসে ডলারের দাম অনেকটাই বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ডলারের দর ধরে রাখার চেষ্টা করে। এই সীমার বাইরে গেলেই তারা বাজারে হস্তক্ষেপ করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হুসাইন খান এই পদক্ষেপের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, 'আমরা বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল রাখতে চাই, কারণ ডলারের দরের বড় উত্থান বা পতন কোনোটিই ভালো নয়। ডলারের দর খুব বেশি কমে গেলে রপ্তানিকারকরা ক্ষতির মুখে পড়েন এবং প্রবাসীরা আয় পাঠানোতে নিরুৎসাহিত হন।'

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই হস্তক্ষেপের সমালোচনা করেছেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। তিনি মনে করেন, ডলারের দর আরও কমতে দিলে মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে তা সহায়ক হতো।

তিনি বলেন, 'গত তিন বছরে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি কেন বেড়েছে, তা নিয়ে বিভিন্ন বিশ্লেষণে একটি বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন—ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। তাই এখন যখন ডলারের দর কমছে, তখন সেই সুযোগটি কাজে লাগানো উচিত।'

জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ডলারের বিনিময় হার ১২০ টাকা থেকে কমিয়ে ১১০ টাকার কাছাকাছি নিয়ে আসা গেলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ত। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, 'তাহলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের এই সুযোগটি কেন হাতছাড়া করা হচ্ছে?'

Comments

The Daily Star  | English

Curfew extended in Gopalganj indefinitely

It will be relaxed for three hours between 11am and 2pm

1h ago