সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের নিয়ম মানতে ব্যর্থ ২১ জীবন বিমা কোম্পানি

জীবন বিমা, িবিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ,

বাংলাদেশের ২১টি জীবন বিমা কোম্পানি তাদের মোট সম্পদের ৩০ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের বাধ্যতামূলক নিয়ম মানতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এ কোম্পানিগুলো হলো- আকিজ তাকাফুল, আলফা ইসলামী, বায়রা, বেঙ্গল ইসলামী, বেস্ট লাইফ, চার্টার্ড লাইফ, ডায়মন্ড লাইফ, ফারইস্ট ইসলামী, গোল্ডেন লাইফ, মেঘনা লাইফ ও মার্কেন্টাইল ইসলামী, এনআরবি ইসলামিক লাইফ, পদ্মা ইসলামী, পপুলার লাইফ, প্রাইম ইসলামি, প্রোটেক্টিভ ইসলামি লাইফ, সোনালী লাইফ, সানফ্লাওয়ার লাইফ, সানলাইফ, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ও জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) এক কর্মকর্তা জানান, কোম্পানিগুলোর ২০২৩ সালের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

জীবন বিমাকারীর সম্পদ বিনিয়োগ ও সংরক্ষণ বিধিমালা-২০১৯ এ বলা হয়েছে, বিমা কোম্পানিগুলোকে তাদের সম্পদের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করতে হবে।

আইডিআরএ'র ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানিগুলো 'দীর্ঘদিন ধরে' আইন লঙ্ঘন করে আসছিল। তবে তারা কোনো সময়সীমা উল্লেখ করেনি।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জীবন বিমা কোম্পানিগুলো যদি সরকারি সিকিউরিটিজে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করে, তাহলে তা কোম্পানি ও গ্রাহক উভয়ের জন্য নিরাপদ।

এতে আরও বলা হয়েছে, সরকার এই তহবিল উন্নয়ন কাজেও ব্যবহার করতে পারে, তাই এটাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তবে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের পরিবর্তে ২১টি বিমা কোম্পানি তাদের অর্থ বিনিয়োগে জমি ও সম্পত্তি, শেয়ারবাজার এবং ব্যাংকের সঞ্চয়পত্র বেছে নিয়েছে।

২১টি কোম্পানির মধ্যে ৯টি তাদের সম্পদের ৫ শতাংশেরও কম সরকারি খাতে বিনিয়োগ করেছে, ৪টির ১৫ শতাংশের কম বিনিয়োগ আছে এবং অন্য ৪টির ২৫ শতাংশের কম বিনিয়োগ করেছে।

কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ না করার পেছনে বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করেছে।

ট্রেজারিতে আলফা ইসলামী লাইফের বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নূর আলম সিদ্দিকী অভি বলেন, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটি ভালো করতে পারেনি, তাই বিনিয়োগ করা সম্ভব হয়নি।

তবে গত বছর তারা শতভাগ বিমা দাবি পরিশোধ করেছে এবং তাদের বর্তমান অবস্থা ভালো বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, 'এপ্রিল ও মে মাসে বিমা কোম্পানিটি ইসলামী ব্যাংকগুলোতে ১২ কোটি টাকা ফিক্সড ডিপোজিট রেখেছে। আমরা এ বছরের মধ্যে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ব্যাপারে আশাবাদী।'

আকিজ তাকাফুল তার সম্পদের ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ সিকিউরিটিজে রেখেছে।

আকিজ তাকাফুলের ভারপ্রাপ্ত সিইও মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী বলেন, কোম্পানিটি ২০২১ সালে গঠিত হয়েছে এবং এখনো বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছাতে পারেনি।

'আমাদের লাইফ ফান্ডের পরিমাণ ১১ কোটি টাকা এবং তা ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখা হয়েছে,' বলেন তিনি।

এদিকে সরকারি সিকিউরিটিজে মেঘনা লাইফের বিনিয়োগ ১৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ হলেও কোম্পানিটির ভাইস চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ দাবি করেছেন, ২১ দশমিক ২ শতাংশ।

তিনি বলেন, 'ফিক্সড ডিপোজিট ও সরকারি সিকিউরিটিজ বিমা দাবি নিষ্পত্তির জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল, তাই বিনিয়োগের অনুপাত কমেছে। তবে আমরা বিনিয়োগের সীমা পূরণের চেষ্টা করব।'

এছাড়া পপুলার লাইফ ট্রেজারিতে ১৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে।

পপুলার লাইফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বি এম ইউসুফ আলী বলেন, 'আগে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বেশি মুনাফা পাওয়া যেত, তাই আমাদের কোম্পানি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছে।'

'সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের ঘাটতি আগামী দিনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পূরণ করা হবে।'

তবে মেটলাইফ বাংলাদেশ তাদের সম্পদের সর্বোচ্চ ৮০ দশমিক ৬৫ শতাংশ ট্রেজারিতে রেখেছে।

বাংলাদেশে কার্যরত একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলা আহমেদ বলেন, 'নিরাপদ ও কম অস্থির খাতে কৌশলগত বিনিয়োগের মাধ্যমে পলিসিহোল্ডারদের অর্থের সুরক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের অগ্রাধিকার।

'এটি গ্রাহকদের আমাদের আর্থিক সামর্থ্য নিয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকতে এবং প্রত্যাশিত মুনাফা পেতে সহায়তা করে।'

সিকিউরিটিজে বিনিয়োগে বিমাকারীদের অনীহার বিষয়ে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, সিকিউরিটিজ সবচেয়ে সুরক্ষিত হলেও দীর্ঘমেয়াদে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করতে চায় না।

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. মাঈন উদ্দিন বলেছেন, কোম্পানিগুলো বহু বছর ধরে এই আইন লঙ্ঘন করে আসছে।

এটাকে তিনি নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যর্থতা বলে অভিতিহ করেছেন।

'নিয়ম লঙ্ঘনকারী কোম্পানিগুলোকে শাস্তি দিতে না পারায় পলিসিহোল্ডাররা পলিসির মেয়াদপূর্তির কয়েক বছর পরও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।

তিনি আরও বলেন, জমিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আইডিআর'র কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত।

অবশ্য আইডিআর'র মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যেসব কোম্পানি সরকারি সিকিউরিটিজে খুব কম বিনিয়োগ করেছে তাদেরকে জরিমানা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নিয়ম মেনে বিনিয়োগ করার জন্য বিমা কোম্পানিগুলোকে এক মাস থেকে দুই মাস সময় দেওয়া হয়েছে।

'বিমা কোম্পানিগুলো নিয়ম মেনে বিনিয়োগ করছে কি না তা নিশ্চিত করতে বিনিয়োগের তথ্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হয়। যদি তারা নিয়ম মেনে চলতে না পারে, তাহলে ব্যাখ্যা দিতে হবে এবং তাদের জরিমানাও করা হবে,' যোগ করেন তিনি।

২০২৩ সালের তথ্য পাওয়া না গেলেও আগের বছরগুলোর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জীবন বিমা কোম্পানিগুলো তাদের অর্ধেকের বেশি বিনিয়োগ ট্রেজারি বিল ও বন্ডে ব্যয় অব্যাহত রেখেছে।

২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে বিমা কোম্পানির মোট বিনিয়োগের ৫৪ শতাংশ, ৫২ শতাংশ ও ৫৩ শতাংশ ছিল সরকারি বন্ড ও বিলে।

২০২২ সালে তাদের বিনিয়োগের ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ ছিল জমি ও অন্যান্য সম্পত্তিতে, যা ২০২১ সালে ছিল ৮ দশমিক ০১ শতাংশ। ব্যাংকে তাদের মোট স্থায়ী আমানত ছিল পোর্টফোলিওর ২১ দশমকি ০৭ শতাংশ, যা এক বছর আগে ছিল ২৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

Comments

The Daily Star  | English
tax collection target for IMF loan

IMF to continue talks with Bangladesh for near-term agreement

The global lender said such an agreement would pave the way for completing the combined third and fourth reviews

1h ago