বিমা দাবি পরিশোধে কমিশন ও সার্ভিস চার্জ নেওয়া যাবে না

বিমা দাবি, জীবন বিমা, নন-লাইফ বিমা কোম্পানি, আইডিআরএ,

বাংলাদেশের কোনো জীবন বিমা কোম্পানি এখন থেকে আর বিমা দাবি পরিশোধের সময় গ্রাহকের কাছ থেকে ছাড়, কমিশন, সার্ভিস চার্জ বা ফি (যে নামে অভিহিত করা হোক না কেন) নিতে পারবে না।

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গত ২৮ এপ্রিল গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষা ও সংরক্ষণের পাশাপাশি বিমাকারীর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে 'বিমা দাবি ব্যবস্থাপনা গাইডলাইন ২০২৪' জারি করেছে। ওই গাইডলাইনে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের বিমা কোম্পানিগুলোর গড় দাবি নিষ্পত্তির অনুপাত বৈশ্বিক মানের চেয়ে অনেক কম। দাবি নিষ্পত্তির জন্য বৈশ্বিক গড় ৯৭-৯৮ শতাংশ। ভারতে ২০২২-২৩ সালে দাবি নিষ্পত্তির হার দাঁড়িয়েছে ৯৮ দশমিক ৪৫ শতাংশে।

তবে আইডিআরএ'র তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের বিমা খাতে দাবি নিষ্পত্তির হার ছিল ৬৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। এর মধ্যে জীবন বিমা খাতে নিষ্পত্তি হয়েছে ৭২ শতাংশ, নন-লাইফ বিমার ক্ষেত্রে তা ছিল ৪১ শতাংশ।

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র (আইডিআরএ) জাহাঙ্গীর আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিমা দাবি নিষ্পত্তি প্রাতিষ্ঠানিক করতে ও বিমা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে একটি গাইডলাইন্স থাকা প্রয়োজন।'

তিনি আরও বলেন, 'তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিমা প্রতিষ্ঠানে বিমা দাবি প্রাপ্তির দীর্ঘসূত্রিতা ও ভোগান্তি কমিয়ে দ্রুত সময়ে বিমা দাবি প্রাপ্তিসহ গ্রাহকের স্বার্থ নিশ্চিত করতে দাবি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গাইডলাইন করা হয়েছে।'

গাইডলাইনে বলা হয়েছে, গ্রাহক প্রয়োজনীয় নথি দাখিলের পর আইন অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে বিমা দাবি পরিশোধ করতে হবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, বিমা দাবি পরিশোধ হলে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহকের মোবাইলে অর্থের পরিমাণসহ বার্তা পাঠাতে বলা হয়েছে।

এছাড়া বিমাকারীকে বিমা দাবি নিষ্পত্তিতে সবসময় আর্থিক সঙ্গতি বা আর্থিক তারল্য বজায় রাখতে হবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, গ্রাহকের কাছে বার বার নথিপত্র চাওয়া যাবে না। আবেদনের শুরুতে যেসব নথি বিমা গ্রাহক দেননি, সেসব নথি একসঙ্গে দ্রুত দিতে বিমা গ্রাহককে লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে।

যেসব ক্ষেত্রে জরিপকারী নিয়োগের বা তদন্তের প্রয়োজন নেই। সেক্ষেত্রে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বিমা দাবি পরিশোধ পদ্ধতি ম্যানুয়ালে উল্লেখ ও সে অনুযায়ী কার্যক্রম নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে বিমা দাবি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সাহায্যকারী ডেস্ক ও অভিযোগ বক্স বসানোসহ গ্রাহক সুরক্ষা ও অভিযোগ প্রতিকার কমিটিতে বিমাকারী বা পরিচালনা পর্ষদের দক্ষ কর্মী নিয়োগ এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কার্যক্রম জোরদার করার কথা বলা হয়েছে।

গাইডলাইনে আরও বলা হয়েছে, বিমা দাবি নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া কোন পর্যায়ে আছে, গ্রাহক যেন সরাসরি তা অনলাইনে দেখতে পারেন সেজন্য বিমাকারী এ সংক্রান্ত ট্র্যাকিং সিস্টেম চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এদিকে বিমা গ্রাহক ক্ষতি বা দুর্ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিমা চুক্তিতে উল্লেখ করা সময়ের মধ্যে দ্রুত বিমাকারীকে অবহিত করার পাশাপাশি বিমা দাবির সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র বিমাকারীর কাছে দাখিল করবেন।

অন্যদিকে বিমা গ্রাহক তার দাখিল করা সব নথি স্বপক্ষে প্রাপ্তি স্বীকার নিবেন এবং প্রমাণ হিসেবে সংরক্ষণ করবেন।

বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি এ কে এম মনিরুল হক বলেন, 'আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেই গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। তবে এই গাইডলাইন আরও আগে করা হলে ভালো হত।'

দেশের বিমা অনুপ্রবেশের হার শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ। অন্যদিকে ভারতে ৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং পাকিস্তানে শূন্য দশমিক ৯১ শতাংশ।

বর্তমানে বাংলাদেশে ৩৬টি জীবন বিমা এবং ৪৬টি নন-লাইফ বিমা কোম্পানি রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার মানুষ বিমা সুবিধার আওতায় আছে।

Comments

The Daily Star  | English

Govt publishes gazette of 1,558 injured July fighters

Of them, 210 have been enlisted in the critically injured "B" category, while the rest fall under the "C" category of injured fighters

5h ago