সর্বোচ্চ আয়কর ২৫ শতাংশই থাকছে
বিত্তশালীদের 'করভার লাঘবে' আয়ের ওপর ৩০ শতাংশ কর ও অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগকারীদের কর অবকাশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। তবে কালো টাকা সাদা করার জন্য সাধারণ ক্ষমার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে।
একইসঙ্গে সংসদ সদস্যদের আমদানি করা গাড়ির ওপর থেকে প্রথমবারের মতো শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে।
গতকাল অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর সংসদ সদস্যদের কয়েকটি সংশোধনীসহ অর্থ আইন-২০২৪ পাস হয়।
এর আগে, গত ৬ জুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণাকালে অর্থমন্ত্রী উচ্চ আয়ের মানুষের বার্ষিক আয় ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার ওপর প্রযোজ্য করের সর্বোচ্চ সীমা ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন।
সংশোধিত অর্থ আইন অনুযায়ী, করদাতাদের ওপর 'করের বোঝা লাঘবে' সরকার তা ২৫ শতাংশে বহাল রেখেছে। তবে, পরবর্তী অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সর্বোচ্চ করের হার হবে ৩০ শতাংশ।
এছাড়া, বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগকারীদের জন্য বিদ্যমান ১০ বছরের কর অবকাশ সুবিধা বাড়িয়েছে সরকার। পাশাপাশি মূলধনী যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও নির্মাণ সামগ্রী আমদানিতে শূন্য শুল্ক সুবিধা অব্যাহত রেখেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী ১ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছিলেন।
অর্থনীতিবিদ, বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীদের সমালোচনা উপেক্ষা করে ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি না করে ও ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
নতুন বিধান অনুযায়ী, কোনো করদাতা ফ্ল্যাট ও জমির মতো স্থাবর সম্পত্তির জন্য নির্ধারিত হারে কর এবং নগদ, সিকিউরিটিজ, ব্যাংক আমানত ও সঞ্চয় স্কিমসহ অন্যান্য সম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিলে কোনো কর্তৃপক্ষ তার সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
গতকাল সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের, হামিদুল হকসহ বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য সাধারণ ক্ষমার এই নিয়মের বিরোধিতা করেন।
কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদুল হক সংসদে বলেন, 'এটি সরকারের দ্বিমুখী নীতি হয়ে গেল, কারণ সরকার দুর্নীতি নির্মূলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই সাধারণ ক্ষমা বন্ধ হওয়া উচিত।'
প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার পর আইনপ্রণেতাদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি সুবিধা প্রত্যাহারে সংসদ সদস্য (এমপি) আদেশ ১৯৭৩ সংশোধনের পরিকল্পনার জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রশংসা করা হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২৫ অর্থবছরে অন্যান্য করের সঙ্গে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বহাল থাকার কথা ছিল।
যেহেতু গতকাল কোনো সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়নি, তাই সংসদ সদস্যদের জন্য এই সুবিধা বহাল থাকলো।
বর্তমানে গাড়িকে বাংলাদেশে বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এগুলো সর্বোচ্চ ৫০০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক সাপেক্ষে আমদানি করতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ৮০০ শতাংশ হয়ে যায়। এছাড়া অন্যান্য শুল্ক ও কর রয়েছে, যা নিয়মিত আমদানিকারকদের দিতে হয়। বিপরীতে, ১৯৮৮ সাল থেকে সংসদ সদস্যদের কোনো শুল্ক পরিশোধ করতে হয় না।
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা বলছেন, এই উদ্যোগ সংসদ সদস্যদের (পারিশ্রমিক ও ভাতা) আদেশ, ১৯৭৩ (রাষ্ট্রপতির আদেশ) এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে সংসদ সদস্যরা যে ৫৭২টি গাড়ি আমদানি করেছেন, তার মধ্যে অন্তত ৫৬৩টি এসেছে জাপান থেকে। ব্র্যান্ডের মধ্যে টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, রেঞ্জ রোভারস ও মিতসুবিশি পাজেরো আছে।
সরকারি কর্তৃপক্ষ, বিভাগ ও বেসরকারি সংস্থার মালিকানাধীন গাড়ির ওপর পরিবেশগত সারচার্জ আরোপের সিদ্ধান্ত থেকেও সরে এসেছেন অর্থমন্ত্রী। দ্বিতীয় গাড়ির সারচার্জ বহাল রাখা হয়েছে।
ফিন্যান্স অ্যাক্ট অনুযায়ী, কোম্পানিগুলোর মতো ট্রাস্টকেও ১৫ শতাংশ মূলধনী মুনাফা কর দিতে হবে। এর আগে, ট্রাস্টগুলোকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। শেয়ারবাজারে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত মূলধনী মুনাফার ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি অব্যাহত থাকবে।
স্বতন্ত্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে অন্তত পাঁচ বছর সিকিউরিটিজ ধরে রাখলে মুনাফা কর হবে ১৫ শতাংশ। যদি তারা পাঁচ বছরের কম সময়ে বিক্রি করে তাহলে মূলধনী মুনাফা অন্যান্য আয় হিসেবে বিবেচিত হবে এবং নিয়মিত আয়করের হার প্রযোজ্য হবে।
বিয়ে ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য কমিউনিটি ও কনভেনশন সেন্টার ভাড়া সংক্রান্ত রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দেখানোর নিয়ম শিথিল করেছে সরকার।
নতুন বিধান অনুযায়ী, আট সিটি করপোরেশনে এ ধরনের ভেন্যু ব্যবহার করতে আয়কর দাখিলের প্রমাণ লাগবে।
জাতীয় সংসদে আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও কৌশলের কারণে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নেমে আসবে।
Comments