ক্ষতির মুখে পর্যটন ব্যবসা

টাঙ্গুয়ার হাওর, জাফলং, শ্রীমঙ্গল, কুয়াকাটা, কক্সবাজার, পর্যটন শিল্প,
চলমান কারফিউয়ের কারণে বেশিরভাগ পর্যটক তাদের বুকিং বাতিল করায় গতকাল কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি কম ছিল। ছবি: মোকাম্মেল শুভ

বেসরকারি চাকরিজীবী জাহরা মায়িশা (২৬) স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে যান শ্রীমঙ্গলে। সেখানে ছুটি কাটিয়ে গত ১৬ জুলাই ঢাকায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে তৈরি হওয়া সহিংসতার কারণে তারা ঢাকা ফিরতে পারেননি। তাই এই দম্পতি আরও দুদিন সেখানে থাকার সিদ্ধান্ত নেন।

এরপর ২০ জুলাই সরকার দেশব্যাপী কারফিউ জারি করে। ফলে তাদের সেই পরিকল্পনাও ভেস্তে যায়।

সেখানে দুই দিন থাকার জন্য তাদের বাজেট ছিল প্রায় ১৮ হাজার টাকা। তবে সময়মতো ফিরতে না পারায় তাদের হোটেল ভাড়া ও খাবারের খরচ অনেক বেড়ে যায়।

এর আগে, ১৮ জুলাই থেকে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় তাদের দুর্দশা আরও বাড়ে। কারণ এই দম্পতিকে নগদ অর্থের জন্য পুরো শহরে এটিএম বুথ খুঁজতে হয়।

শেষ পর্যন্ত গত ২৪ জুলাই তারা ঢাকার ফ্লাইট বুক করতে পারেন।

এই ভ্রমণে তাদের অনুমানের চেয়ে প্রায় চারগুণ বেশি খরচ হয়েছে। অর্থাৎ তাদের প্রায় ৭৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে।

এভাবে গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে অনেক দর্শনার্থী আটকা পড়েন। তাদের মধ্যে এই নবদম্পতিও ছিলেন।

এদিকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে বেশকিছু পর্যটন স্পটের পূর্ব নির্ধারিত ট্রিপ বাতিল করা হয়।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি  তৌফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'এমন পরিস্থিতির জন্য ট্যুর অপারেটর বা পর্যটক কেউই প্রস্তুত ছিলেন না।'

তিনি আরও বলেন, 'এই ব্যবসায়িক ধাক্কা ট্যুর অপারেটর, পর্যটক ও পর্যটন-কেন্দ্রিক ব্যবসায়ের জন্য তিক্ত অভিজ্ঞতা। তবে আমরা আশা করছি, এর প্রভাব দীর্ঘ হবে না।'

সিলেটের টাঙ্গুয়ার হাওরে হাউসবোট সার্ভিস পরিচালনাকারী ট্যুর গ্রুপ বিডির মালিক ইমরানুল আলম বলেন, জুলাই থেকে আগস্ট এ অঞ্চলের পর্যটনের পিক সিজন।

টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি শ্রীমঙ্গলের চা বাগান ও জাফলংয়ের জলপ্রপাত এ সময় বহু দর্শনার্থীকে আকৃষ্ট করে। তবে বেশিরভাগ বুকিং বাতিল হয়ে গেছে, তাই গত এক সপ্তাহে কোনো পর্যটক এই স্পটগুলোতে যাননি।

ইমরানুল আলম জানান, টাঙ্গুয়ার হাওরে অন্তত ২০০ হাউসবোট রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ বর্ষা মৌসুমে বুকিং থাকে।

কিন্তু সব হাউসবোট আপাতত অলস বসে আছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, আকার ও সুযোগ-সুবিধার ওপর নির্ভর করে একটি হাউসবোট প্রতি সপ্তাহে তিন লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা আয় করে।

ইমরানুল আলমের অনুমান, হাউসবোট অপারেটরসহ অন্যান্য সেবা সরবরাহকারীরা কমপক্ষে ২ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে।

সাজেকের খাসরাং হিল রিসোর্টের ম্যানেজার সুব্রত চাকমা জানান, সরকার কারফিউ জারি করায় ও খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ থাকায় প্রায় ২০০ পর্যটক তিন দিন ধরে আটকা ছিলেন।

তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পর্যটকদের পরিবহনের ব্যবস্থা করে তাদের চলে যেতে সহায়তা করেছে।

তিনি বলেন, পর্যটকরা কোনো খাদ্য সংকটে না পড়লেও ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। তাই তারা উদ্বিগ্ন ছিলেন।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার সভাপতি রুম্মান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, গত সাত দিনে কুয়াকাটার ব্যবসায়ীরা প্রায় ৫০ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছেন।

কুয়াকাটায় আটকে পড়া দেড় শতাধিক পর্যটক মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় বাড়ি ফিরেছেন।

রাজধানীর মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা আবুল হাসান বলেন, 'বর্ষার সৌন্দর্য উপভোগ করতে গত ৫ জুলাই পরিবার নিয়ে কুয়াকাটায় আসি। আমাদের পরিকল্পনা ছিল ১৭ জুলাই পর্যন্ত এখানে থাকার। কিন্তু আমরা এখানেই আটকে গেছি।'

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, কারফিউ জারির আগে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার পর্যটক কক্সবাজার বেড়াতে আসতেন।

তিনি বলেন, 'কিন্তু কারফিউয়ের পর পর্যটকরা শহর ছেড়ে চলে যান এবং নতুন কোনো পর্যটক আসছেন না, ফলে ব্যবসায় ধস নেমেছে। আমরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।'

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'আমরা জানি না কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং আমরা পর্যটক পাব।'

কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, পর্যটকের অভাবে তার ঝাওবনসহ অনেক রেস্তোরাঁ বন্ধ রয়েছে।

তিনি বলেন, 'আমাদের ব্যাপক লোকসান গুনতে হচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Rangpur mob violence victims’ families decry police inaction

Four arrested, some culprits have gone into hiding, local police say

53m ago