খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি, কেন?

এক এক করে সব জিনিসের দাম বেড়েই চলছে। সবজির দামও আকাশছোঁয়া। গত বেশ কয়েকদিন ধরেই এসব নিয়ে রাজধানীবাসীর ভোগান্তি চরমে।

কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দাম বেড়ে কেজিপ্রতি ১০০ টাকার আশেপাশে।

কিছু সবজি ১০০ টাকা ছাড়িয়ে কম ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষগুলোর নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছে।

গত এপ্রিল থেকে টানা ছয় মাস ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি।

চাহিদা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গত বছরের মে থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিসুদের হার বাড়ালেও ২০২৩ সালের মার্চ থেকে সার্বিক মূল্যস্ফীতি নয় শতাংশের ওপরে।

গত মাসে নীতিসুদ সাড়ে নয় শতাংশে উন্নীত করাসহ বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২ সালের মে মাসের পর থেকে ১০ বারের মতো সুদের হার বাড়িয়েছে।

প্রশ্ন হলো, খাদ্যপণ্যের দাম কেন বেশি? চাহিদা-সরবরাহভিত্তিক মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সম্পর্ক আছে কি? এই কারণেই কি কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকার মান বাড়াতে ও অতিরিক্ত চাহিদা কমাতে নীতিসুদের হার বাড়িয়ে চলেছে?

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আমাদের তেমন কিছুই করার নেই।'

তার মতে, বন্যার কারণে সরবরাহ কমেছে। খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। নীতিসুদ দিয়ে সমাধান হবে না। 'বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়া ভিন্ন ঘটনা। সরবরাহ বাড়িয়ে এর মোকাবিলা করতে হবে।'

গত দুই মাসে সার্বিকভাবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমলেও ক্রেতাদের ওপর চাপ কমাতে তা যথেষ্ট নয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, গত মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক চার শতাংশে। এক মাস আগে ছিল ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুধু নীতিসুদ হার বাড়িয়ে খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। যদি মূল্যস্ফীতির ওপর উচ্চ নীতিসুদ হারের প্রভাব দেখতে চান তবে অপেক্ষা করতে হবে। এখন যা প্রয়োজন তা হলো বাজারে খাদ্যপণ্যের সরবরাহ বাড়ানো। সরবরাহ না বাড়লে পণ্যের দাম কমবে না।'

সরকারের উচিত অন্তত নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খাদ্যপণ্যের দাম কমাতে এর ওপর থেকে আমদানি শুল্ক তুলে নেওয়া।

গত মাসের শেষে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছিল, ঈদুল আযহায় খাদ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় গত এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে।

গত এপ্রিলে তাপপ্রবাহ ও মে মাসে ঘূর্ণিঝড় 'রেমাল'র কারণে কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি গত মার্চে নয় দশমিক ৮৭ শতাংশ থেকে বেড়ে এপ্রিলে ১০ দশমিক ২২ শতাংশ হয়। জুনের শেষে তা ১০ দশমিক ৪২ শতাংশে পৌঁছায়।

চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, লোহিত সাগরে উত্তেজনা ও গাজা সংকটসহ বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় উৎপাদন উপকরণের দাম বেড়েছে।

গত অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে শহর ও গ্রামাঞ্চলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

গত আগস্টে দেশের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ফসলের ক্ষতি হলে সবজির সরবরাহ কমে যায়।

এখন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চলমান বন্যায় একই ধরনের ক্ষতি হচ্ছে।

ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরির মতে, 'খাদ্যপণ্য মৌলিক চাহিদা। নীতিসুদের হার বাড়িয়ে চাহিদা কমানো সম্ভব নয়।'

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নীতিসুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর সুযোগ কম। পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে হবে। এটা রাজস্ব নীতির বিষয়।'

তার দৃষ্টিতে, 'এখানকার বাজার প্রতিযোগিতামূলক নয়। যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতাও দূর করতে হবে।'

তিনি মনে করেন, 'বাজার পর্যবেক্ষণ ও বেশি মুনাফার সুযোগ কমাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চেষ্টা চালাচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হলেও এই পদ্ধতি কার্যকর বা পর্যাপ্ত নয়।'

'যখন জরিমানা করা হয়, তখন ব্যবসায়ী জরিমানার খরচ তুলতে পণ্যে দাম বাড়িয়ে দেয়' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

'বাজারে সরবরাহ বাড়াতে ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।'

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) প্রধান অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খাদ্যপণ্যের বেশি দামের সঙ্গে বাজার ও সরবরাহ ব্যবস্থার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। অযৌক্তিক রাজনৈতিক প্রভাব ও চাঁদা নিতে নতুন মানুষ এসেছে।'

'যদি খাদ্যপণ্যের দামে স্থিতিশীলতা চাই তবে সমস্যাটি কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা দরকার।'

এই দুই অর্থনীতিবিদের বিশ্বাস, সমন্বিত উদ্যোগ নিলে দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

সেলিম রায়হান বলেন, 'মানুষের অবস্থা শোচনীয়। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ কমেছে। নিত্যপণ্যের দাম জনসাধারণের নাগালের বাইরে থাকুক এমন পরিস্থিতি দেখতে চাই না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Govt to procure potato directly from farmers this year

The agricultural adviser visits BADC’s cold storage, central seed testing laboratory, and vegetable seed processing centre

1h ago