মেধা পাচারের অভিশাপ থেকে মুক্তি কবে

মেধা পাচার
ছবি: এআই জেনারেটেড

শিক্ষিত চাকরিজীবীদের এখন লক্ষ্যই হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশ ছাড়ার। অন্যসব উন্নয়নশীল দেশের মতো এ দেশেও শিক্ষাবিদ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মী—সবাই নিজেদের ভাগ্য গড়তে চান দেশের বাইরে।

সম্প্রতি ব্রিটিশ কাউন্সিলের পরিচালনায় 'নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ ২০২৪' গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৫৫ শতাংশেরই ইচ্ছা বিদেশে পাড়ি জমানো।

জরিপে দেখা গেছে—তরুণ বাংলাদেশিদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় সৌদি আরব (২৭ শতাংশ), কানাডা (১৮ শতাংশ) ও অস্ট্রেলিয়া (১৩ শতাংশ)।

এসব দেশকে আকর্ষণীয় হিসেবে দেখার প্রাথমিক কারণ হলো শিক্ষার সুযোগ (২৬ শতাংশ), ভাষা-ইতিহাস-সংস্কৃতি (২৫ শতাংশ), কাজের সুযোগ (২৩ শতাংশ) ও ধর্মীয় মিল (১৬ শতাংশ)।

২০১৫ সালে ৬০ শতাংশ তরুণ মনে করতেন দেশ সঠিক পথে আছে। ২০২৩ সালে তা ৫১ শতাংশে নেমে আছে। ২০১৫ সালে কতজন তরুণ বিদেশে যেতে চেয়েছিলেন তা গবেষণায় নিশ্চিত করা যায়নি।

এক মেধাবীর সংগ্রাম

যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী শেখ ফরিদের কথা ধরা যেতে পারে। ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে অনেক মেধাবী বাংলাদেশির হতাশা ও কঠিন সিদ্ধান্তের এক উদাহরণ তিনি।

২০১৬ সালে ৩১ বছর বয়সে স্নাতকোত্তর শেষ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এই গবেষক এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে।

তিনি শিক্ষাবিদ হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষকতার চেষ্টা করার সময় বেশকিছু গবেষণা প্রকল্পে ছিলেন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে 'প্রথম শ্রেণির প্রথম' হয়েছিলেন। দেশে তার যোগ্যতা ও গবেষণার দাম পাননি। মেধার তুলনায় 'মামার জোর' বেশি মূল্যবান হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে আক্ষেপ করে বলেন, 'পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট কয়েকজনের ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর নির্ভর করে। মেধার গুরুত্ব দেওয়া হয় না।'

তার দৃষ্টিতে সবচেয়ে হতাশার দিক হলো—কম যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি ও তার আবেদন উপেক্ষা করা।

যুক্তরাষ্ট্রে ফরিদের পিএইচডি করার সিদ্ধান্তের জন্য ব্যক্তিজীবনে ছাড় দিতে হয়। স্ত্রী-দুই সন্তান দেশে।

মেধা পাচার
ছবি: এআই জেনারেটেড

তিনি তা এভাবে চাননি। তার পরিকল্পনা ছিল দেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়া। তারপর বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়া। দেশের শিক্ষার মান নিয়েও তার দুর্ভাবনা আসে।

ফরিদের মতে, 'আমাদের দেশে শিক্ষার সুযোগ কম। প্রথমত, এটি বাজার উপযোগী নয়। পুরোনো ধাঁচের। আমরা বিশ্বমানের কিছু শিখতে পারছি না।'

দেশে শিক্ষার মান ও বিশ্ববাজারে চাহিদার মধ্যে যে ফারাক তা তাকে বিদেশে পড়তেও অনুপ্রাণিত করে।

ফরিদের মতো অন্য মেধাবীরা দেশে ফিরবেন কিনা তা নিয়েও আছে অনিশ্চয়তা।

'দেশ কি আমার দক্ষতার মূল্যায়ন করবে?'—প্রশ্ন রেখে ফরিদ বলেন, 'দেশে ফিরে যাব কিনা তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। দেশে গেলে কী সুযোগ পাব, তাও ভেবে দেখা দরকার।'

সর্বশেষ 'হিউম্যান ফ্লাইট অ্যান্ড ব্রেইন ড্রেন ২০২৪' সূচকে দেখা যায়, ১০ বিষয়ে বাংলাদেশের স্কোর ছয় দশমিক সাত। প্রতিবেশী মালদ্বীপ, ভারত ও পাকিস্তানের স্কোর সাড়ে পাঁচের নিচে। বৈশ্বিক গড় চার দশমিক ৯৮। ১৭৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৭তম।

ঢাকা থেকে মন্ট্রিয়েল

মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে ফরিদের অনেক মিল। তবে সংকটগুলো যার যার নিজস্ব।

ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি প্রার্থী ৩৩ বছর বয়সী মাহমুদুল হাসান ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করার পর নানান ধরনের সমস্যায় পড়েন।

'যদি পেশায় ভালো করতে চাই, তবে বিদেশি ডিগ্রি দরকার' উল্লেখ করে তিনি জানান, দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক শংসাপত্রের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়। তার মাতৃভূমি ছাড়ার সিদ্ধান্ত পুরোপুরি শিক্ষাবিষয়ক ছিল না। বলেন, 'দেশে আমার যোগ্যতা মূল্যায়ন করা হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় ছিল।'

বিবাহিত ও এক সন্তানের বাবা মাহমুদ দেশের শিক্ষায় বিড়ম্বনা দেখতে পান। তার ভাষ্য, 'অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থাকায় দেশে লেখাপড়ার সুযোগ বেশি। সেই শিক্ষা কতটা কাজে লাগে, তা ভিন্ন কথা।'

শিক্ষার সুযোগ ও চাকরির বাজারের বাস্তবতা দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। দেশে চাকরি পেতে রাজনীতি ও স্বজনপ্রীতি কতটা প্রভাব ফেলে সে কথা জানিয়েছেন ফরিদ ও মাহমুদ।

মাহমুদের দৃষ্টিতে, সরকারি চাকরিতে রাজনীতি বেশি। বেসরকারিতে স্বজনপ্রীতি। উন্নত জীবনের জন্য বিদেশে যাওয়াই একমাত্র বিকল্প।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগকে 'খুব বড় রাজনৈতিক প্রক্রিয়া' হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, অনেক শিক্ষাবিদ এই 'দুষ্টচক্র' থেকে বাঁচতে চান।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ৩০ উপজেলা ও শহরের চার হাজার ২০০ জনের ওপর 'যুব জরিপ ২০১৮' পরিচালনা করে।

জরিপে ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী প্রায় ২০ শতাংশ উন্নত জীবন ও কাজের জন্য বিদেশে যেতে আগ্রহী।

মেধা পাচার
ছবি: এআই জেনারেটেড

সরকারের গৃহ গণনা ২০২২ অনুসারে, দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ২৭ দশমিক ৯৬ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছর। গত দশকে দেশের যুবকের সংখ্যা ১৫ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়ে চার কোটি ৫৯ লাখ হয়েছে।

অর্থনীতি বিশ্লেষক ও ব্যাংক কর্মকর্তা মামুন রশিদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কর্পোরেট খাতে কাজ করার পর আমি বিশ্বাস করি দেশে পেশাগত নেতৃত্বের সমস্যা আছে। তরুণদের মূল সমস্যা সমাধান করছি না। তাদের নতুন নতুন চাহিদা-আকাঙ্ক্ষা বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে না। চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার পরিবর্তে আমরা এখনো প্রথাগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। এতে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হচ্ছে। তরুণদের প্রতিভা বিকাশে ব্যর্থ হচ্ছি। এ কারণে অনেকে বিদেশে চলে যাচ্ছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশ তিন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে মেধাবীদের হারাচ্ছে। প্রথমত, অনেক তরুণ বিদেশে উচ্চশিক্ষায় আরও ভালো সুযোগ খুঁজছেন।'

'দ্বিতীয়ত, সন্তানদের ভবিষ্যতের আশায় অনেক মা দেশ ছাড়ছেন। তৃতীয়ত, সন্তান জন্মের পর সীমিত সুবিধা, দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বেগ এমনকি যানজটের কারণেও অনেকে দেশ ছাড়ছেন।'

'বিদেশে এমন অনেক সুযোগ আছে যা বাংলাদেশে নেই,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'প্রতিবেশী ভারতের কথাই ধরা যাক। দেশটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সফল হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের অনেকে বিদেশে স্থায়ীভাবে থেকে যাচ্ছেন। নিজের দেশে মেধাবী কর্মী পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয়দের যে কাজ করা উচিত তা বিদেশিরা এসে করছেন।'

তার দৃষ্টিতে, এই সমস্যা এখন মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

'তরুণরা যখন কোথাও ভালো সুযোগ দেখবে, তা নিতে দ্বিধা করবে না। আমাদের দেশ আরও গভীর দারিদ্র্যে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে। সরকারকে অবশ্যই সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী শক্তিশালী করার পাশাপাশি অবস্থার উন্নতিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমাদের যুব সমাজকে দেশে রাখার পাশাপাশি তাদের উন্নতি করতে দিতে হবে। যেকোনো মূল্যে তা করতে হবে।'

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণায় দেখা গেছে, গড় উৎপাদনশীলতায় দক্ষিণ এশিয়ায় পিছিয়ে বাংলাদেশ। দেশের বিশাল শ্রমশক্তি থাকলেও বেশিরভাগই অদক্ষ।

'ইউনিলিভার বহুল প্রত্যাশিত ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করে' জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ডিরেক্টর অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপস অ্যান্ড কমিউনিকেশনস শামীমা আক্তার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই ব্যক্তিদেরই আমরা প্রতিষ্ঠানে ধরে রাখতে চাই। অথচ তাদের অনেককেই আমরা হারাচ্ছি।'

'সমস্যাটি কেবল প্রশিক্ষণের বিষয় নয়। এটি বৃহত্তর সামাজিক বিষয়। দেশে সামাজিক নিরাপত্তার অভাব ও ভবিষ্যতের সুযোগ না থাকায় অনেক তরুণ দেশ ছাড়ছেন।'

ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড ও ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার লিমিটেড ছেড়ে যাওয়া কর্মীদের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'তাদের ২৮ শতাংশ দেশ ছাড়ার জন্য চাকরি ছেড়েছেন। ২০২৩ সালে তা ছিল ২৪ শতাংশ। ২০২২ সালে ছিল ২৮ শতাংশ।'

তিনি বলেন, 'এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের জনশক্তিকে দক্ষ করে তুলতে হবে। শিক্ষা ও বাস্তব জগতের দক্ষতার মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনতে হবে।'

'প্রশিক্ষণ নেওয়া সত্ত্বেও অনেকে মনে করেন বাংলাদেশ তাদের পরিবারের জন্য নিরাপদ নয়। উচ্চ মেধাবীরাও দেশ ছাড়তে ইচ্ছুক। তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় আছেন। মূল প্রশ্নটি হল—দেশ কি তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে যুব সমাজকে ধরে রাখতে পারবে? তারা যদি আরও ভালো সুযোগ নিয়ে বিদেশে যান তবে কেন সেখানে স্থায়ী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন না?'

তিনি আরও বলেন, 'যুব সমাজের ক্ষমতায়নের জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নিঃসন্দেহে দরকার। তবে অবশ্যই এর বাস্তব ফল থাকতে হবে।'

'সম্প্রতি আমরা সিপিডির (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ) সমীক্ষায় দেখেছি, ৮১ শতাংশ কারিগরি ও বৃত্তিমূলক স্নাতক কম মজুরির সমস্যায় ভুগছেন।'

আয়নার নিজের মুখ

পদ্ধতিগত বাধার অভিশাপ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ছড়িয়ে আছে।

বর্তমানে যুক্তরাজ্যের কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল ফেলো হিসেবে কাজ করছেন ৩৭ বছর বয়সী ড. সৈয়দা ফারহানা সাবাহ। বাংলাদেশের পেশাগত উন্নয়ন নিয়ে একই ধরনের উদ্বেগ তার।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পাস করার পর তিনি দেখতে পান যে দেশে উন্নত চিকিৎসায় প্রশিক্ষণ নেওয়ায় সীমাবদ্ধতা আছে।

তার দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত শুধু পেশাগত উন্নয়নের জন্য ছিল না। এটি ছিল পারিবারিক।

স্বামী সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ও ১০ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে তিনি যুক্তরাজ্যে ভালো সুবিধা নিয়ে আছেন।

'যুক্তরাজ্য অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা ও নির্ভরযোগ্য ক্যারিয়ারের সুযোগ দিচ্ছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবায়। বাংলাদেশে তা ধারণাও করা যায় না।'

তিনি যখন সেখানে পৌঁছান তখন সামগ্রিক পরিস্থিতিতে দেশের সঙ্গে বৈপরীত্য ছিল চোখে পড়ার মতো।

'সবকিছু ঝকঝকে পরিষ্কার। নির্ভরযোগ্য পাবলিক সার্ভিস। সহজে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়। সেখানে সুরক্ষিত জীবনের পরিবেশ তৈরি করা আছে।'

তিনি যে জীবনের আশা করেন তাই সেখানে পেয়েছেন।

পর্যায়ক্রমিক অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তার সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশও তাকে দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেছিল।

মুহতাসিম রায়েদের বক্তব্য বাংলাদেশের মেধা পাচার সম্পর্কে ভিন্ন চিত্র দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে বিউটি কো-ল্যাবে বিজনেস অ্যানালিটিক্স ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন তিনি। তার ঘটনা থেকে জানা যায় রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা কীভাবে প্রতিভাকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।

তার ভাষায়, 'যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক ব্যবস্থা অনেক বেশি উন্নত। বাংলাদেশে তা অনুপস্থিত।'

যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক স্বাধীনতা সম্পর্কে তার পর্যবেক্ষণ ছিল অন্যদের চোখ খুলে দেওয়ার মতো। তিনি বলেন, 'ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এখানে এসেছিলাম। মানুষ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিলেন। ব্যঙ্গচিত্র তৈরি করছিলেন। তার তীব্র সমালোচনা করছিলেন।'

'বাংলাদেশে পরিচিত সবাইকে মুখ বন্ধ রাখতে দেখেছিলাম। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু বলার পর সবাই উদ্বিগ্ন থাকতেন।'

ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের স্কুল অব লিবারেল আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেসের ডিন অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আর্থিক পরিস্থিতির তুলনায় জাতীয় অবস্থার কারণে বেশি মানুষ দেশ ছাড়েন।'

তিনি বলেন, 'প্রধান দুই কারণে মানুষ দেশ ছাড়েন। একটিতে শিক্ষিতরা জড়িত, যেমন শিক্ষার্থীরা। তারা গ্লোবাল নর্থে যান। অদক্ষ শ্রমিকরা যান অন্যান্য দেশে। তারা রেমিট্যান্স পাঠান।'

'শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলো শ্রমঘন খাতের পরিবর্তে জ্ঞানভিত্তিক শিল্পের দিকে বেশি মনোযোগী।'

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মেধা পাচারের প্রাথমিক কারণ চাকরির নিরাপত্তার অভাব। অনেক তরুণ যোগ্যতা মতো চাকরি পাচ্ছেন না। এমনকি যদি তারা তা পানও তবে ভবিষ্যতে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। চাকরির নিরাপত্তাও বড় উদ্বেগের বিষয়। আইনি দুর্বলতা কর্মীদের অরক্ষিত করে তোলে। বেতন ও সুযোগ-সুবিধা কম। এগুলো তরুণদের দেশে থাকতে নিরুৎসাহিত করে।'

তিনি মনে করেন, সামাজিকমাধ্যম দেশের যুব সমাজের সামনে বৈশ্বিক চাকরির বাজারের সঙ্গে পরিচিত করেছে। দেশে কাজের পরিস্থিতি তরুণদের মনে হতাশা সৃষ্টি করেছে।

'আরেকটি বিষয় হলো—বাংলাদেশের শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তার অভাব। দক্ষতা উন্নয়নে সরকারের সহায়তা অপর্যাপ্ত। এমনকি মেধাবী তরুণদেরও দেশে চাকরি পেতে লড়াই করতে হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'দেশের শ্রম আইনে তরুণ পেশাজীবীদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা দেওয়া হয় না। আউটসোর্সিং কাজের সঙ্গে জড়িতদেরকে এর আওতায় ফেলা হয় না। চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ভবিষ্যৎ উন্নয়নের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে আইন দরকার।'

পরিবর্তন না আসলে তরুণরা দেশে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন বলে আশঙ্কা করেন তিনি।

'শ্রীলঙ্কা, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো থেকে দক্ষ কর্মীরা বাংলাদেশে উচ্চ পদে কাজ করছেন। আমাদের তরুণরা বিদেশে কাজের খোঁজে যাচ্ছেন। তরুণদের দক্ষ করতে শিক্ষা ব্যবস্থারও সংস্কার জরুরি। বর্তমানে, দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের সুযোগ কম। চাকরির সুযোগ-সুবিধায় বৈষম্য তরুণদের আরও হতাশ করে। তাদের অন্য কোথাও সুযোগ খোঁজার দিকে ঠেলে দেয়।'

সিপিডির ডিশটিংগুইশড ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এমন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেন যেগুলোয় ওপর দেশে চাকরির সুযোগ নেই বা কম। এখানকার চাকরির বাজার খুবই ছোট। বিদেশে যেসব আর্থিক সুবিধা পাওয়া যায় দেশে তা পাওয়া যায় না। ফলে অনেকে দেশ ছাড়ছেন।'

'এটি মোকাবিলায় রপ্তানি ও কর্মসংস্থান খাতে বহুমুখীকরণকে উৎসাহিত করতে হবে। নতুন প্রযুক্তি ও শিল্পোদ্যোগকে উৎসাহিত করতে হবে। অনেকে বিদেশে পড়ালেখা শেষ করার পরে যেন দেশে ফিরে আসেন সেই ব্যবস্থা করতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
road accidents death in Bangladesh April

Road accidents killed 583 in April: Jatri Kalyan Samity

Bangladesh Jatri Kalyan Samity (BJKS), a passenger welfare platform, said that a total of 583 people were killed and 1,202 injured in 567 road accidents across the country in the month of April, citing media reports

4h ago