আইএমএফের চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার পথে বাংলাদেশ

আইএমএফ ঋণের চতুর্থ কিস্তি
গত বছরের জানুয়ারিতে আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণের অনুমোদন দেয়। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তি পেতে ১২টি শর্তের সবগুলোই পূরণের পথে থাকলেও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।

আইএমএফের শর্তাবলী পর্যালোচনা করতে আইএমএফ মিশনের প্রধান ক্রিস পাপাদাকিসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আগামী ৩ থেকে ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সফর করবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, প্রতিনিধি দলটি ৩ ডিসেম্বর অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করবে।

এই সফরে আইএমএফ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে বলে জানা গেছে।

আইএমএফের শর্তগুলোর মধ্যে আছে নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ, বাজেট ঘাটতি, আন্তর্জাতিক লেনদেনর ভারসাম্য, রিজার্ভ মানি, কর রাজস্ব, অগ্রাধিকার সামাজিক ব্যয় এবং সরকারের মূলধন বিনিয়োগ।

অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, সরকার এসব শর্তের ছয়টি পূরণ করলেও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।

আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জুন পর্যন্ত সরকারের কর আদায়ের কথা ছিল তিন লাখ ৯৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা।

কিন্তু অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত সরকার তিন লাখ ৬৯ হাজার ২০৯ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে। অর্থাৎ আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকা কম।

আইএমএফের বেঁধে দেওয়া আরেকটি বড় শর্ত ছিল, দেশের নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ বাড়ানো। তবে চলতি বছরের মে মাসে তৎকালীন সরকারের অনুরোধে আইএমএফ এই সীমা কমিয়েছিল।

৩০ জুনের মধ্যে নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। তবে মে মাসের শেষের দিকে আইএমএফ তা কমিয়ে ১৪ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনে। ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ ছিল ১৬ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার।

এই ঋণ কর্মসূচির আগের প্রতিটি কিস্তিতে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছিল বাংলাদেশ।

আইএমএফের ঋণ কর্মসূচিতে দুই ধরনের শর্ত আছে, যথাক্রমে সাতটি পারফরম্যান্স মানদণ্ডের সঙ্গে যুক্ত এবং বাকিগুলো কাঠামোগত মানদণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত।

কর্মকর্তারা জানান, জুনের মধ্যে ২৭টি কাঠামোগত সংস্কার শর্তের মধ্যে পাঁচটি পূরণ করার কথা ছিল বাংলাদেশের।

আইএমএফের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ এই পাঁচটি শর্ত পূরণ করেছে কিনা তা মূল্যায়ন করবে এবং চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে আগামী বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে পূরণ করা অন্যান্য কাঠামোগত সংস্কার শর্তাবলী নিয়ে পর্যালোচনা করবে।

কাঠামোগত সংস্কারের অন্যতম শর্ত ছিল একটি হালনাগাদ মধ্যমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রকাশ, যেখানে ২০২৫ অর্থবছর থেকে ২০২৭ অর্থবছর পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত থাকবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে তা প্রকাশ করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইএমএফ প্রতিনিধি দলের এই সফরে মূল্যস্ফীতি, ভর্তুকি কমানো ও রাজস্ব আদায়ে সংস্কারসহ অন্যান্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করা হবে।

চলমান চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির পাশাপাশি সরকার ইতোমধ্যে আইএমএফের কাছে আরও তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, সফররত আইএমএফ মিশনের সঙ্গে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তবে ওই ঋণ পেতে হলে সরকারকে আইএমএফের বেঁধে দেওয়া বাড়তি শর্ত পূরণ করতে হবে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, আইএমএফের ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা অতিরিক্ত ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক। তবে সুনির্দিষ্ট কিছু শর্ত সরকারকে পূরণ করতে হবে।

এসব শর্ত ব্যাংকিং খাত, কর নীতি, ভর্তুকি কমানো, বিনিময় হার ব্যবস্থাপনাসহ আরও অনেক কিছুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, নতুন ঋণ বিদ্যমান ঋণ প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বা অন্য কোনো আকারে দেওয়া হবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।

Comments

The Daily Star  | English

Pope Francis dies at 88

His death came just a day after he delighted the crowds of worshippers at the Vatican on Easter Sunday with an appearance on the balcony at Saint Peter's Basilica.

41m ago