বাজারভিত্তিক হচ্ছে ডলারের দাম

ডলার
ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণে ক্রলিং পেগ ব্যবস্থা চালুর প্রায় সাত মাস পর বর্তমান প্রেক্ষাপটে টাকার বিপরীতে আবারও ডলারের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ক্রলিং পেগ মিডরেট ১১৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৯ টাকা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ঠরা।

তারা বলছেন, সম্প্রতি ডলারের দাম ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। ডিসেম্বরে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্সের মাধ্যমে আসা ডলার ১২৮ টাকাতেও কেনা হচ্ছে।

নতুন ঘোষণায় ডলারের দাম দেড় থেকে দুই শতাংশ পর্যন্ত উঠানামা করতে পারবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আরও জানান, ব্যাংক লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে দৈনিক আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার প্রকাশ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার পুরোপুরি কার্যকর ছিল না।

এ ছাড়াও, রেমিট্যান্স কেনার হার হবে প্রতি ডলারে ১২৩ টাকা। তবে, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের বিনিময় হার একই হবে।

মুদ্রাবাজারে অস্থিরতার সঙ্গে জড়িত ব্যাংকগুলোকে সর্বনিম্ন ১০ লাখ টাকা থেকে শুরু করে আর্থিক জরিমানা হতে পারে বলে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গতকাল প্রায় ২৭ ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান ও শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় চার ডেপুটি গভর্নর, সংশ্লিষ্ট নির্বাহী পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে জনতা, রূপালী, সোনালী, অগ্রণী, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ, এইচএসবিসি, ঢাকা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল, পূবালী ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত এক সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে পরিস্থিতির উন্নতির তথ্য তুলে ধরেছেন।

জরুরি ভিত্তিতে বকেয়া এলসি ছাড়ের কারণে নভেম্বরে রিজার্ভ কমে যাওয়ার পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিপিএম-৬ হিসাব অনুসারে সম্প্রতি দেশে রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়তে থাকায় দেশে ডলারের পরিমাণ বাড়ছে।

সূত্রটি আরও জানিয়েছে, ব্যাংকগুলোকে ডলারের মিডরেটের আশেপাশে যুক্তিসঙ্গত উপায়ে রপ্তানি বা রেমিট্যান্সের জন্য একই দাম দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

কেনাবেচার হারের পার্থক্য প্রতি ডলারে এক টাকার বেশি হওয়া উচিত নয় বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

গ্রাহকদের যে হারে ডলার বিক্রি হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে তা প্রকাশ করতে ও প্রকাশিত হার অনুযায়ী কঠোরভাবে লেনদেনের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তিনি বলেন, 'ব্যাংকগুলোকে লেনদেনের প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে দিতে হবে। ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে স্বচ্ছতা বাড়াতে দিনে দুইবার ডলারের বাজারদাম প্রকাশ করতে হবে।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনাগুলোর পরিপালন কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে অভিযোগ সেল গঠন করা হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহকদের কাছ থেকে আসা কোনো বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা হবে।'

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী নাসের এজাজ বিজয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, 'এই উদ্যোগগুলো বাজারভিত্তিক বিনিময় হারে যাওয়ার একটি ধাপ।'

তিনি ডেইলি স্টারকে জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য শেষ পর্যন্ত বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থায় যাওয়া। অন্তর্বর্তী সময়ে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাবাজারের স্বচ্ছতা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।'

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে বিদেশে মধ্যস্থতাকারীদের দায়ী করা হচ্ছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমদানিকারকদের ডলার বিনিময় হারের সুবিধা নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে আরও সচেষ্ট হতে বলা হয়েছে।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা সাংবাদিকদের জানান 'ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে রেমিট্যান্স সংগ্রহের জন্য প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ দাম ১২৩ টাকা ঘোষণা করেছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Private investment sinks to five-year low

Private investment as a percentage of the gross domestic product has slumped to its lowest level in five years, stoking fears over waning business confidence and a slowdown in job creation.

10h ago