ডলারের বাড়তি দামে নতুন বছরেও মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

চার মাস স্থির থাকার পর চলতি ডিসেম্বরে ডলারের দাম আকস্মিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় আমদানি খরচ আরও বেড়ে যাচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে ব্যবসায়িক খরচও।

ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ডলারের দাম আরও বেড়ে গেলে নিত্যপণ্যের মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে। ফলে মূল্যস্ফীতি কমানোর প্রচেষ্টা আরও কঠিন হবে।

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) হেড অব অ্যাকাউন্টস এসএম মুজিবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি করা পণ্যের দাম শিগগিরই বেড়ে যাবে।'

২০২৩ সালের মার্চ থেকে নয় শতাংশের ওপরে থাকা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে।

মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বছর নীতিহার পাঁচবার বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করেছে।

এ ছাড়াও, গত মে মাসে ক্রলিং পেগ বিনিময় হার চালু করা হয়। ফলে ব্যাংকগুলো ১১৭ টাকার মধ্যে ডলার কেনাবেচা করতে পারে।

তিনি জানান, বর্তমানে ডলারপ্রতি ১২৬ টাকায় এলসি খোলা হচ্ছে। যদিও এলসির সময় এই হার আরও ওঠানামা করতে পারে।

ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, চিনি ও মসলাসহ নিত্যপণ্যের জন্য বাংলাদেশ আমদানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এক বছর আগের তুলনায় এসব পণ্য বিক্রি হয়েছে প্রায় পাঁচ শতাংশ বেশি।

খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেলে সাধারণত কম ও মধ্যম আয়ের মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আরও সুরক্ষা দিতে ও বাজার স্থিতিশীল করতে সরকার অনেক নিত্যপণ্যের শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কমানোর ঘোষণা দিয়েছে।

এসএম মুজিবুর রহমান মনে করেন, ডলারের দাম বাড়লে এই কর কমানোর সুফল পাওয়া যাবে না।

তার হিসাবে, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত দুই বছরে মানুষের প্রকৃত আয় ৪৫ শতাংশ কমেছে।

একই মত পোষণ করে ইউনিলিভার বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'টাকার আকস্মিক ও তীব্র অবমূল্যায়ন ব্যবসা ও সামগ্রিক অর্থনীতিতে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলবে।'

যেহেতু ডলারের দামের ওপর নির্ভর করে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা সাজানো হয়, তাই ব্যবসার কৌশল বদলাতে হবে বলেও মনে করে তিনি।

'আমদানি নির্ভরতার কারণে মূল্যস্ফীতি শিগগিরই কমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। উল্টো পরিচালন খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।'

ছোট ও মাঝারি শিল্প চালিয়ে নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী ফেরদৌস আরা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যাংকগুলো ১২০ টাকায় ডলার কেনাবেচা করতে পারলেও প্রকৃত বিনিময় হার এখন ১২৫ থেকে ১২৭ টাকার মধ্যে।'

তার মতে, ক্রলিং পেগটি ভালোভাবে কাজ করেনি। কারণ ব্যাংকগুলো এই ব্যবস্থা ভিন্নভাবে চালাচ্ছে।

ডলারের দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আবারও নীতিহার বাড়াতে পারে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'ডলারের বেশি দামের কারণে রপ্তানিকারকরা সুবিধা পাচ্ছেন না। বেশি দামে এলসি খুলতে হচ্ছে।'

'বাংলাদেশ ব্যাংক যখন চাহিদার বিষয়গুলো সমাধানের চেষ্টা করছে, তখন সরবরাহের সমস্যাগুলোও যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে হবে।'

আকিজ স্টিল ও আকিজ সিমেন্টের হেড অব বিজনেস মশিউর রহমান ডালিম দাবি করেন, ডলারের দাম বেশি হলে উৎপাদন খরচ অন্তত দুই শতাংশ বাড়বে।

তার মতে, ডলারের দাম বেশি হওয়ায় নির্মাণ সামগ্রী উৎপাদন শিল্পের ক্ষতি হবে। ইতোমধ্যে স্থবির নির্মাণ ব্যবসা আরও সমস্যায় পড়বে।

তিনি জানান, চাহিদা কম থাকায় বর্তমানে সক্ষমতার মাত্র ৪৫ শতাংশ নিয়ে চলছে ইস্পাত ও সিমেন্ট শিল্প। এ অবস্থায় নির্মাণশিল্প আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিকন মেডিকেয়ার লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ওষুধ খাতও সমস্যায় পড়বে।'

তিনি আরও বলেন, 'বেশি দামে কাঁচামাল আমদানির কারণে উৎপাদন খরচ বাড়লেও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন প্রয়োজন হওয়ায় আমরা পণ্যের দাম বাড়াতে পারব না।'

'এ ছাড়াও, প্রতিযোগিতা বাড়লে বিদেশে আমাদের টেন্ডার হারানোর আশঙ্কা আছে।'

'এমন পরিস্থিতিতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ওষুধ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সরকারের জোরালো সহযোগিতা প্রয়োজন।'

পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের (পিএলসি) চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী এম মাসরুর রিয়াজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণে রিজার্ভ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনা শুরু করায় হঠাৎ করেই ডলারের দাম বেড়েছে।'

পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তাদের বকেয়া এলসি পরিশোধের নির্দেশ দেওয়ায় ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার কিনতে বাধ্য হয়েছে।

গত ৫ থেকে ৬ মাস স্থিতিশীল থাকার পর ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া অপ্রত্যাশিত ছিল বলে মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ।

এ ধরনের পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ ও তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবসাকে প্রভাবিত করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'মধ্যমেয়াদি মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে।'

Comments

The Daily Star  | English

Pahela Baishakh sales better this year

In previous years, Baishakh celebrations and the purchase of new dresses accounted for an estimated one-fourth of annual sales by local fashion outlets.

6h ago