বেক্সিমকোর ছাঁটাই হওয়া ৪০ হাজার কর্মীর চাকরির চেষ্টায় সরকার

বেক্সিমকো
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ও রপ্তানি অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) আওতাধীন কারখানায় বেক্সিমকো গ্রুপের ছাঁটাই হওয়া ৪০ হাজার কর্মীর কাজের চেষ্টা করছে সরকার।

আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর কার্যাদেশ কমে যাওয়ায় গত বছরের ডিসেম্বরে বেক্সিমকোর ১৬ বস্ত্র ও পোশাক কারখানার ৪০ হাজারেরও বেশি কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের কাজের পাশাপাশি সরকার কারখানাগুলোর জন্য বিদেশি ক্রেতাও খুঁজছে।'

ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের চাকরি খোঁজা সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে তিনি জানান, ছাঁটাই হওয়া কর্মীরা আগামী মার্চ পর্যন্ত জনতা ব্যাংক থেকে আংশিক বেতন পাবেন।

তিনি আরও জানান, বেক্সিমকোর কারখানা বিক্রি ও পরিচালনা তদারকির জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) স্বাধীন বোর্ড গঠন করেছে।

বিএসইসির স্বাধীন বোর্ড জানিয়েছে, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও সিরামিক কারখানা ভালো করছে। সেগুলো লাভজনক।

শ্রম সচিব টেলিফোনে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) বেক্মিকোর ১৬ বস্ত্র ও পোশাক কারখানার জন্য বিদেশি ক্রেতা খুঁজছে।'

গত আগস্টে গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেক্সিমকোর আর্থিক কেলেঙ্কারি সামনে চলে আসে।

বর্তমানে কারাগারে থাকা শিল্প গোষ্ঠীটির ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রভাবশালী উপদেষ্টা ছিলেন।

তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক লাভের জন্য রাজনৈতিক প্রভাবকে ব্যবহারের অভিযোগ আছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সালমান ও তার ব্যবসাকে ঘিরে একের পর এক আর্থিক অনিয়ম প্রকাশ পায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যাংক ঋণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।

'বেক্সিমকোর কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের পাওনা ঋণ ২৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি' জানিয়ে শ্রম সচিব আরও বলেন, 'বেক্সিমকোর সম্পত্তি বিক্রির ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।'

বেক্সিমকো বস্ত্র ও পোশাক কারখানা বিক্রির অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য উপদেষ্টা পরিষদ আগামী ২০ জানুয়ারি সচিবালয়ে আবার বৈঠকে বসবে বলেও জানান তিনি।

বেক্সিমকো গ্রুপের অর্থ ও করপোরেট বিষয়ক বিভাগের পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী সরকারের এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে প্রশ্ন রাখেন, 'কোনো ব্যক্তি বা সরকার কীভাবে অন্যের প্রতিষ্ঠান বিক্রি করতে পারে?'

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার যখন কারখানা বিক্রির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে, তখন শিল্পগোষ্ঠীটি আদালতের আশ্রয় নেবে।'

তিনি আরও বলেন, 'বেক্সিমকোর তিন কারখানায় পরিচালক নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতের কাছে আইনি প্রতিকার চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সরকার সম্প্রতি বেক্সিমকো ফার্মা ও বেক্সিমকো লিমিটেডে নয় জন করে ও বেক্সিমকো সিরামিকে সাত পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে।'

গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে বেক্সিমকো প্রতি মাসে ৩০ মিলিয়ন ডলারের বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানি করত।

তার দাবি, সরকার যদি বেক্সিমকোকে এলসি খোলার অনুমতি দেয়, তাহলে তারা বস্ত্র ও পোশাক পণ্য রপ্তানি আবার শুরু করতে পারবে। কারণ শিল্পগোষ্ঠীটি আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রেখেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডার এক শীর্ষ কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আইনি জটিলতায় সরকার কর্তৃক ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিক্রি বা তহবিল তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া দীর্ঘ হতে পারে।'

বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেজা ও বেপজার কারখানায় ছাঁটাই হওয়া বেক্সিমকোর কর্মীদের পুনর্বাসনের বিষয়ে আলোচনা চলছে।'

'রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাগুলোয় শ্রমিকের চাহিদা আছে। আশা করছি, ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের এসব কারখানায় কাজের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। কারণ, বেক্সিমকো গ্রুপের দেওয়া কার্যাদেশ সম্ভবত দেশেই থাকবে।'

বেক্সিমকো গ্রুপের বস্ত্র ও পোশাক কারখানা বিক্রির বিষয়ে তিনি আরও বলেন, 'বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিডা সরকারকে কারখানা বিক্রিতে সহায়তা করছে। বিডা গ্রাহকদের প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদে জমা দিচ্ছে। কেননা, সংস্থাটিকে এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।'

গ্রাহকদের কাছ থেকে কতগুলো প্রস্তাব এসেছে সে বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

বেক্সিমকো শিল্পগোষ্ঠীর বস্ত্র ও পোশাক কারখানা ঢাকার কাছে গাজীপুরে অবস্থিত।

গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর বেক্সিমকো এক বিজ্ঞপ্তিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের জানায়, গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে কারখানায় কর্মী ছাঁটাই কার্যকর হবে।

কর্মী ছাঁটাইয়ের ৪৫ দিনের বেতন সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তিতে শ্রম আইনের উল্লেখ করা হয়েছে। এতে শ্রমিকদের মূল বেতনের অর্ধেক ও কিছু অন্যান্য সুবিধার কথা বলা আছে।

কারখানাগুলো হলো—শাইনপুকুর গার্মেন্টস, আরবান ফ্যাশনস, ইয়েলো অ্যাপারেলস, প্রিফিক্স ফ্যাশনস, আরআর ওয়াশিং, বেক্সিমকো ফ্যাশনস, বেক্সিমকো গার্মেন্টস, নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রিজ, ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস, এসেস ফ্যাশনস, এসকর্প অ্যাপারেলস, ক্রিসেন্ট ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন ও ক্রিসেন্ট এক্সেসরিজ লিমিটেড।

বেক্সিমকো মোট ৭০ হাজার কর্মী আছে। প্রতিষ্ঠানটি ৪০ হাজারের বেশি কর্মীকে ছাঁটাই করেছে।

Comments

The Daily Star  | English

Pathways to the downfall of a regime

The erosion in the credibility of the Sheikh Hasina regime did not begin in July 2024.

9h ago