হ্যাট-ক্যাপের রপ্তানি বাড়ছে

হ্যাট

হ্যাট ও ক্যাপ রপ্তানি করে বাংলাদেশ গত অর্থবছরে ৪৪৭ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন ডলার অর্জন করেছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে মুষ্টিমেয় পণ্যের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল এ দেশটির জন্য এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক সংবাদ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুসারে, সারাবিশ্বে হ্যাট-ক্যাপের অন্যতম প্রধান সরবরাহকারী হিসেবে আবির্ভূত হওয়ায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের রপ্তানি আয় আগের বছরের তুলনায় ২২ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়েছে।

এই তালিকায় আছে—হেডব্যান্ড, হ্যাট, বিনি ও ক্যাপ। দেশে এসব রপ্তানিমুখী পণ্যের উত্পাদন প্রায় ২ দশক আগে শুরু হয়েছিল।

২০১৩-১৪ সালে এসব পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ৫৫ মিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ সালে তা বেড়ে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়।

একটি ক্যাপ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাজমুস সাকিব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশ থেকে হ্যাট-ক্যাপ রপ্তানি এতটা বেড়েছে যে তা দেখে অবাক লাগছে।'

বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) তথ্য অনুসারে, ইপিজেডে ক্যাপ তৈরির ৫টি কারখানা আছে। এর মধ্যে অ্যাক্টর স্পোর্টিং লিমিটেড ও ঢাকারিয়া লিমিটেড ঢাকা ইপিজেডে এবং ইয়াং আন হ্যাট (বিডি) লিমিটেড, ইয়াং আন ইন্টারন্যাশনাল (বিডি) লিমিটেড ও উইঙ্ক কোম্পানি লিমিটেডের কারখানা আছে চট্টগ্রাম ইপিজেডে।

অ্যাক্টর স্পোর্টিংয়ের মহাব্যবস্থাপক শফিউল আজম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশে কয়েকটি ক্যাপ তৈরির কারখানা আছে। এগুলো মূলত রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে। এসব কারখানার মালিকরা এসেছেন হংকং ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে।'

তিনি আরও বলেন, 'পশ্চিমের দেশ থেকে হ্যাট-ক্যাপের অর্ডার সাধারণত আসে গ্রীষ্মের শেষের দিকে। খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো বিক্রি বাড়াতে শীতের মৌসুমকে বিবেচনায় রাখে।'

'দেশের রপ্তানিখাতে হ্যাট-ক্যাপ উল্লেখযোগ্য সংযোজন,' যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক থেকে। রপ্তানি আয়ের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য খাতগুলোর মধ্যে আছে চামড়া ও পাট।

ইপিবির তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০টিরও কম আইটেম রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৪০ কোটি ডলারের বেশি আয় হয়েছে। প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে হ্যাট-ক্যাপ রপ্তানি করা হয়।

এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, সস্তা শ্রম ও দক্ষ জনশক্তি থাকায় উত্পাদনকারীরা প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে বিশ্বমানের হ্যাট-ক্যাপ উত্পাদন করতে পারছেন।

বেপজার জনসংযোগ বিভাগের নির্বাহী পরিচালক নাজমা বিনতে আলমগীর ডেইলি স্টারকে জানান, হংকং ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশের বিনিয়োগকারীরা ইপিজেডে হ্যাট-ক্যাপ তৈরি করছেন।

তিনি বলেন, 'ইপিজেডে কারখানাগুলো ক্যাপের মতো পণ্য রপ্তানি করে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ কোটি ৬০ লাখ ডলার আয় করেছে।'

নাজমা আরও বলেন, 'পণ্য বহুমুখীকরণকে বেপজা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এখন ইপিজেডের ৭০ শতাংশ কারখানা তৈরি পোশাকের পরিবর্তে বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদন করছে।'

ক্যাপ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সাবেক কর্মকর্তা নাজমুস সাকিব মনে করেন, স্থানীয় গার্মেন্টস মালিকদের এসব পণ্য সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। যদিও ক্যাপ-হ্যাট তৈরি পোশাক খাতের অংশ। তাই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এর সুবিধা নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, হ্যাট-ক্যাপখাতে বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে বিদেশি হলেও তারা কয়েক হাজার লোকের কাজের ব্যবস্থা করেছে। এটি অর্থনীতিতে পরোক্ষ সুবিধা দিয়েছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফিউচার মার্কেট ইনসাইটসের তথ্য মতে, ২০২৩ সাল থেকে ২০৩৩ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে হ্যাট-ক্যাপের বাজার উল্লেখযোগ্যহারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। তা বার্ষিক ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হারে হতে পারে।

প্রতিষ্ঠানটির তথ্যে জানা গেছে, চলতি বছরে হ্যাট-ক্যাপের বিশ্ব বাজার ২৮ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ২০৩৩ সালের মধ্যে এটি ৫৩ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলেও আশা করা হচ্ছে।

তরুণরা ফ্যাশনের অংশ হিসেবে হেডব্যান্ড, বিনি ও ক্যাপ পরছে। ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে খ্যাতনামা ব্র্যান্ডগুলো আধুনিক ফ্যাশনের হেডব্যান্ড বাজারে আনছে, বলেও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Please don't resign: An appeal to Prof Yunus

A captain cannot abandon ship, especially when the sea is turbulent

8h ago