ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর যেমন কাটল শেয়ারবাজার

বাজার সংশ্লিষ্ট ও বিশ্লেষকরা অবশ্য বলেছেন গত বছরের ১০ অক্টোবর থেকে যে মাত্রায় দরপতন চলছে সেই তুলনায় বা এখনকার আশঙ্কার তুলনায় গতকালের দরপতন তুলনামূলক কম।
আজকের শেয়ার বাজার
ছবি: সংগৃহীত

দেশের ৩৫ প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকিগুলোর ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর প্রথম কর্মদিবসে পুঁজিবাজারে শেয়ারের দরপতন হলেও বিনিয়োগকারীদের আচরণ নিয়ে সন্তুষ্ট বিশ্লেষকরা।

গতকাল রোববার দেশের প্রধান পুঁজিবাজারের সূচক এক দশমিক ৫২ শতাংশ কমেছে।

বাজার সংশ্লিষ্ট ও বিশ্লেষকরা অবশ্য বলেছেন গত বছরের ১০ অক্টোবর থেকে যে মাত্রায় দরপতন চলছে সেই তুলনায় বা এখনকার আশঙ্কার তুলনায় গতকালের দরপতন তুলনামূলক কম।

গতকাল ঢাকা পুঁজিবাজার ডিএসইএক্স লেনদেন শুরুর প্রথম ৮ মিনিটে তিন দশমিক চার শতাংশ বা ২০০ পয়েন্টেরও বেশি কমে যায়। ফলে বিনিয়োগকারীরা বড় দরপতনের আশঙ্কা করেছিলেন।

তবে বড় বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসায় সেই উদ্বেগ বাস্তবে রূপ নিতে পারেনি। দিন শেষে সূচকটি আগের সেশনের চেয়ে ৯৬ দশমিক পাঁচ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ২৪০-এ।

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত বৃহস্পতিবার অধিকাংশ শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সাবেক সহসভাপতি সাজেদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দিন শেষে মূল সূচক জোরালোভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও বেশি ছিল। এটি বাজারের জন্য ভালো লক্ষণ।'

তিনি আরও বলেন, 'চলমান আর্থিক সংকট, পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা কমে যাওয়া ও ফ্লোর প্রাইসের জন্য শেয়ারবাজারে আটকে যাওয়া টাকা—এমন পরিস্থিতির মধ্যে অনেকে ভেবেছিলেন যে প্রথমদিকে কোনো ক্রেতা নাও থাকতে পারে।'

'কিন্তু বিনিয়োগকারীরা সাহস দেখিয়েছেন,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আস্থার সংকট থাকলেও সামনের দিনগুলোয় বাজার ভালো থাকবে বলে মনে করেন সাজেদুল ইসলাম।

'রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কমেছে এবং যেকোনো বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে বহির্বিশ্ব সম্পর্কিত উত্তেজনাও কমেছে। আশা করা যাচ্ছে, শিগগির বাজার আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে।'

গতকাল শরিয়াহভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ডিএসইএস সূচক ১৪ পয়েন্ট বা এক দশমিক শূন্য দুই শতাংশ কমে এক হাজার ৩৭৪ ও ব্লু-চিপ সূচক ডিএস৩০ শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ কমেছিল দুই হাজার ১৩৭ পয়েন্ট করে।

গত বৃহস্পতিবারের ৬৩৭ কোটি টাকা থেকে লেনদেন সাত দশমিক সাত শতাংশ কমে ৫৮৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। দেশের প্রধান পুঁজিবাজারে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ারের দাম বেড়েছিল ৫৪টির, কমেছিল ২৯৬টির ও অপরিবর্তিত ছিল ৩৬টির।

একই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও। বন্দর নগরীর পুঁজিবাজারের সূচক সিএএসপিআই দুই দশমিক ৫৩ শতাংশ বা ৪৭৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩২৯ পয়েন্টে।

ডিবিএর সাবেক সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম অতিমূল্যায়িত হয়েছে। ধারণা করা হয়েছিল যে ফ্লোরপ্রাইজ তুলে নেওয়া হলে সেগুলোর দাম কমে যাবে। তবে আমাদের প্রত্যাশার তুলনায় বিক্রির চাপ কম ছিল।'

তার মতে, বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারের দিকে নজর রাখছেন। ন্যায্য মূল্যে শেয়ার কেনাবেচা হলে ক্রেতারা এগিয়ে আসবেন।

তিনি মনে করেন, 'অনেক শেয়ারই কম দামে বিক্রি হচ্ছে। সেগুলো দাম আরও কমার সম্ভাবনা নেই।'

গতকাল ডিএসইতে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের দাম বেড়েছিল নয় দশমিক ৮০ শতাংশ। বাংলাদেশ থাই অ্যালুমিনিয়ামের দাম বেড়েছিল নয় দশমিক ৭৬ শতাংশ।

রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির শেয়ার বেড়েছিল ছয় দশমিক ১৯ শতাংশ, কোহিনূর কেমিক্যালস কোম্পানির ছয় দশমিক শূন্য তিন শতাংশ, কে অ্যান্ড কিউয়ের পাঁচ দশমিক ৭২ শতাংশ ও দেশবন্ধু পলিমারের পাঁচ দশমিক ৪০ শতাংশ।

অন্যদিকে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, ড্রাগন সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিং, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের শেয়ারের দাম ১০ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়াও, শতাধিক প্রতিষ্ঠান ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম কমেছে নয় শতাংশের বেশি।

সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ থাই অ্যালুমিনিয়াম, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ন্যাশনাল ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও দেশবন্ধু পলিমারের শেয়ার।

'ফ্লোর প্রাইস কমানোর পর প্রথম কর্মদিবসে বাজারের আচরণে বিস্মিত হইনি,' উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, 'ফ্লোর প্রাইস দীর্ঘদিন ধরে অনেক শেয়ারের দাম স্থির করে রেখেছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার চাপে পড়বে। কেউই শেয়ারের দরপতন চান না।'

তিনি মনে করেন, ধীরে ধীরে এসব শেয়ার এমন এক দামে পৌঁছাবে যা তাদের জন্য যৌক্তিক হবে। তখন তারা আবার ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, 'ফ্লোর প্রাইসের কারণে লেনদেন নিম্ন পর্যায়ে ছিল। একবার তা সংশোধিত হয়ে গেলে লেনদেন আবার বাড়বে। বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তাদের ধৈর্য ধরতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago