১২ বছরে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা অর্ধেক শেয়ার ছেড়েছেন

২০১১ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মোট শেয়ারের ৩৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ ছিল সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। দেশের প্রধান পুঁজিবাজারের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, তা এখন ২০ শতাংশে নেমে এসেছে।
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে খুচরা বিনিয়োগকারীদের হিস্যা গত ১২ বছরে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। কারণ বাজারে দরপতনের কারণে তাদের বিনিয়োগের আগ্রহ ব্যাপকভাবে কমেছে।

২০১১ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মোট শেয়ারের ৩৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ ছিল সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। দেশের প্রধান পুঁজিবাজারের পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, তা এখন ২০ শতাংশে নেমে এসেছে।

সরকারি চাকরিজীবী তরিকুল ইসলাম তেমনই একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী। দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন যখন শেয়ারবাজারে প্রবেশ করে, তখন তিনি বিনিয়োগে আগ্রহী হন। ২০০৯ সালে তরিকুল ইসলাম স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে ৮ লাখ টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন।

এক বছরের ব্যবধানে তার শেয়ারের মূল্য ৩২ লাখ টাকায় উঠে যায়। তিনি ভেবেছিলেন এই উত্থান অব্যাহত থাকবে। কারণ তখন দেশের অর্থনীতিও ভালো করছিল, তাই তিনি শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা উঠিয়ে নেননি।

কিন্তু ২০১০ সালের শেষের দিকে বাজারে ধস নামলে শেয়ারের দাম কমতে শুরু করে। ২০১৪ সালের মধ্যে তার শেয়ারের মূল্য দুই লাখ টাকায় নেমে আসে। শেষ পর্যন্ত তিনি লোকসানেই শেয়ার বিক্রি করে দেন। তারপর আর কখনো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেননি।

শুধু তরিকুল ইসলাম নন, তখন এই পরিস্থিতির শিকার হওয়া অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্রোকারেজ ফার্ম ও মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে মার্জিন ঋণ নেওয়া বিনিয়োগকারীরা।  দিন শেষে খালি হাতে ঘরে ফিরতে হয়েছে তাদের। অনেকক্ষেত্রে তারা ঋণী হয়ে পড়েন।

ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পাননি বাজারের মধ্যস্থতাকারীরাও। কারণ অনেকে বিও অ্যাকাউন্টধারীদের ঋণ দেওয়া অর্থ ফেরত পাননি।

২০২১ সালে দুটি বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন মোহাম্মদ বেলাল হোসেন। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ তাকে টেনশন ছাড়া আর কিছুই দেয়নি।

তিনি মূলত ভালো কোম্পানিগুলোর শেয়ারে বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু জাতীয় সঞ্চয়পত্রের হারের চেয়েও কম রিটার্ন পেয়েছেন। একইভাবে আইপিওর মুনাফাও শেষ দিকে কম হচ্ছিল।

তিনি বলেন, 'তাই শেয়ারবাজার ছেড়ে দিয়ে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমে টাকা রেখেছি।'

২০১০ সালে অনেক খুচরা বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারের উত্থানে আকৃষ্ট হন। তখন শেয়ারের দাম স্পন্সরদের কাছেও লাভজনক ছিল। ফলে, তারা শেয়ার বিক্রি করেন। অন্যদিকে ওই সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি মূল্যায়ন না করেই শেয়ার কিনেছিলেন।

প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মনিরুজ্জামান মনে করেন, এতে বাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বেড়েছিল।

তিনি বলেন, 'কিন্তু যখন বাজারে ধস নামে, তখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দামের ব্যাপক পতন দেখে শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেন এবং বাজারে তাদের আধিপত্য কমে যায়।'

ওই সময় ডিএসইর আগের সাধারণ মূল্য সূচক (ডিজেন) এক বছরের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৮ হাজার ৯১৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু ২০১৩ সালে তা অর্ধেক হয়ে ৪ হাজার ১০০তে নেমে আসে।

এই বিপর্যয়ের ফলে সরকার বাজার সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল, সেই অনুযায়ী প্রধান পুঁজিবাজারে ডিএসইএক্স নামে নতুন একটি সূচক চালু করা হয়।

২০২০ সালে এটি সাড়ে চার হাজারের নিচে নামার আগে ২০১৮ সালে প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে সাড়ে ছয় হাজারে পৌঁছেছিল। এছাড়া, ২০২২ সালে ফ্লোর প্রাইস চালু, করোনার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ অভ্যন্তরীণ কারণে সৃষ্ট সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে গত দেড় বছর ধরে ৬ হাজার ৩০০ এর আশপাশে আছে।

এ সময় বিও অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যাও কমেছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০-১১ অর্থবছর শেষে ১০ লাখ ৩১ হাজার নতুন বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। এতে আর্থিক বছরের শেষে এই সংখ্যা ২৭ লাখ ৬৩ হাজারে পৌঁছেছিল।

চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৭ লাখ ৭৮ হাজার বিও অ্যাকাউন্ট ছিল। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তাদের মধ্যে ৩ লাখ ৭ হাজার অ্যাকাউন্টের কোনো শেয়ার নেই।

এজ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইমাম বলেন, শেয়ারে বিনিয়োগে কম মুনাফা হচ্ছে, বিপরীতে সঞ্চয়পত্র ভালো মুনাফা দিচ্ছে। তাই অনেক খুচরা বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়ে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'মানুষ এখনো টাকা রাখার জন্য ব্যাংক পছন্দ করে। এছাড়া তারা আবাসন খাতেও বিনিয়োগ করতে চান। এই বিনিয়োগকারীরা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের কাছে যায় না।'

Comments

The Daily Star  | English
Sherpur Floods: The unseen struggle of Indigenous and Bangalee communities

Sherpur flash flood: The unseen struggles of Indigenous and Bangalee families

Though the floodwaters didn’t linger in most places, they left behind uncertainty for lakhs of people.

3h ago