সিন্ডিকেটের কারণে সিনেমায় এখন ভালো গান হচ্ছে না: ফাহমিদা নবী

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ফাহমিদা নবী,
ফাহমিদা নবী। ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী। অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন তিনি। নতুন গান, সিনেমার প্লেব্যাকে সিন্ডিকেটসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে। অভিযোগ করেছেন,  সিন্ডিকেটের কারণে সিনেমায় এখন ভালো গান হচ্ছে না।

সম্প্রতি আপনার নতুন ২টি গান প্রকাশিত হয়েছে। গান ২টি নিয়ে আপনার কথা জানতে চাই...

জানান দিয়ে এখন আর গান হয় না। আমি  নীরবে নিভৃতে থাকা মানুষ। বাংলা আধুনিক গান করার চেষ্টা করি। গান গেয়ে যাওয়ার চেষ্টা আছে। এখন আমার মনে হয়- একসময় থাকব না, কিন্তু এই গানগুলোই থেকে যাবে। সেই ধারাবাহিকতায় 'জোনাকি আহারে' ও 'শহর ছেড়ে' গান ২টি প্রকাশিত হয়েছে। 'জোনাকি আহারে' গানটি লিখেছেন হোসনে আরা জলি। আর 'শহর ছেড়ে' গানটি লিখেছেন সুলতানা নূরজহান রোজী। গানটির সুর-সংগীত করেছেন সজীব দাস।

এক সময় গানের আ্যালবাম প্রকাশিত হতো। একেকটা অ্যালবামে ১০-১২টা গান থাকত। কিন্তু, এখন আর সেই অ্যালবাম প্রকাশিত হয় না। এখন ১টা গান প্রকাশিত হয়। সেই দিনগুলোর কথা ভাবলে কী মনে হয়?

এক সময় রের্কডিং স্টুডিওগুলোতে গীতিকার, সুরকার মিউজিশিয়ান মিলে প্রতিদিন কোনো না কোনো গান করতে হতো। অনেক ব্যস্ততা থাকত সবার। অনেক আনন্দ হতো অ্যালবামের গান করতে। সেই আনন্দ এখন আর নেই। কষ্ট হয় বিষয়গুলো ভাবলে। যুগের সঙ্গে অনেক কিছু বদলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই বদল মেনে নিতে হয়। এটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু, দেখার বিষয় আমার রুচির অবক্ষয় হয়েছে কি না। রুচির জায়গায় আমি আগেও যেমন ছিলাম এখনো তেমন আছি।

এখন আর রাস্তাঘাটে সবখানে গান বাজতে শোনা যায় না। এখন গান চলে এসেছে কানে কানে হেডফোনে। এই বিষয়গুলো নিয়ে মন খারাপ হয়?

একটা সবসময় গান বাজতে শোনা যেত। এখন সেটা কল্পনা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কোথাও গান শোনা যায় না। এক সময় এলিফ্যান্ট রোডের ওদিকে গেলে 'গানের ডালি' নামের অ্যালবামের দোকান থেকে সবধরনের গান শোনা যেত, নতুন গান প্রকাশিত হলে সেগুলো শোনা যেত। এখন আর শোনা যায় না। গান এখন কানে কানে হেডফোনে চলে গেছে। অ্যালবামের দোকানগুলো একে একে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সবকিছু বদলে গেছে এটা মেনে নিতে হচ্ছে।

২০০৭ সালে এনামুল করিম নির্ঝর পরিচালিত 'আহা' সিনেমার 'লুকোচুরি লুকোচুরি গল্প' প্লেব্যাকের জন্য শ্রেষ্ঠ শিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। তারপর আপনার সিনেমার গানে যতটা ব্যস্ত হওয়ার কথা ছিল সেটা দেখা যায়নি- তার কারণ কী?

সিনেমার গান একটি সিন্ডিকেট। আমাদের নামগুলো এলে সরানো হয়। এটা কেন হয় তার উত্তর বা কারণ আমরা বলতে পারব না। পরিচালক, প্রযোজকরা সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন। আমার বাবা মাহমুদুন্নবী যখন পুরস্কার পেয়েছিলেন তখন তার গান গাওয়াও এভাবে কমে গিয়েছিল। এখন এসব কিছু মেনে নিয়েছি। এই সিন্ডিকেটের কারণে কিন্তু এখন ভালো গান হচ্ছে না। ভালো গান মানুষের কাছে যেতে পারছে না। এটা খুবই দুঃখজনক বিষয় আমাদের জন্য।

গান ছাড়া একজীবনে আর কী করতে ইচ্ছা করেছে?

এক জীবনে আমার শুধু গান করতেই ইচ্ছা করেছে। গান ছাড়া আর কিছুই ভাবিনি। গানই আমার জীবন মরণ, গানই আমার প্রাণ। ছোটবেলায় আমাকে আর সোমাকে (সামিনা চৌধুরী) জিজ্ঞাসা করা হতো আমরা কী হবো? সোমা বলত, ডাক্তার হবে। আমি সবসময় বলে এসেছি গানের শিল্পী হব। গানের শিল্পী হওয়াতে কিন্তু সংগ্রাম আছে। সেই সংগ্রাম আজও করে যাচ্ছি। গানের শিল্পীদের কোনো অবসর বা রিটায়েরমেন্ট বলে কিছু নেই। প্রকৃত শিল্পী তার সাধনা এবং মেধা নিয়েই জীবন কাটিয়ে দেয়। গানের শিল্পীদের সিনিয়র-জুনিয়ার বলে কোনো কথা নেই। তাদের গান করে যেতে হয়। আমিও ভালোবেসে গান করে যেতে চাই আজীবন।

ফাহমিদা নবীর উল্লেখযোগ্য অ্যালবামগুলো হলো- 'এক মুঠো গান', 'দুপুরে একলা পাখি', 'তুমি কি সেই তুমি', 'মনে কি পড়ে না', 'চারটা দেয়াল হঠাৎ খেয়াল', 'তবু বৃষ্টি চাই', 'ইচ্ছে হয়', 'আমারে ছুঁয়েছিলে' (নজরুলগীতি), 'তুমি অভিমানে' ইত্যাদি।

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তার নতুন ২টি গান 'জোনাকি আহারে' ও 'শহর ছেড়ে'।

Comments

The Daily Star  | English
Kudos for consensus in some vital areas

Kudos for consensus in some vital areas

If our political culture is to change, the functioning of our political parties must change dramatically.

4h ago