একুশের গান করার অনুভূতির সঙ্গে অন্যকিছু মেলানো যাবে না: রফিকুল আলম

রফিকুল আলম। ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ/স্টার

স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী রফিকুল আলম। আধুনিক গান যেমন করেছেন, দেশের গানও করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে গানের ভূবনে তার পথচলা। মাতৃভাষা দিবস নিয়েও অনেক গান করেছেন তিনি।

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে তিনি কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

একুশ আমাদের চেতনার নাম, ভাষা দিবসের গান গাওয়ার বিষয়ে যদি বলতেন?

রফিকুল আলম: স্বাধীনতার পর এক এক করে বেতার ও টেলিভিশনে অনেকগুলো ভাষার গান করেছি। যে গানগুলো মহান ভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে। ১৯৮৯ সালে আবু হেনা মোস্তফা কামালের লেখা একটি গান করি বেতারে। সেটার সুর করেছেন অজিত রায়। এরপর আমার ভাষার গানের অ্যালবামে রাখি গানটি। 'অপমানে তুমি সেদিন জ্বলে উঠেছিলে বর্ণমালা' গানটি খুব তাড়াতাড়ি জনপ্রিয়তা পায়। মানুষ গানটি দারুণভাবে গ্রহণ করেন।

অপমানে তুমি সেদিন জ্বলে উঠেছিলে বর্ণমালা গানটি দেশে বাইরে বাঙালিদের মাঝে কতটা সাড়া ফেলেছিল?

রফিকুল আলম: যখনই দেশের বাইরে যাই এই গানটি কয়েকবার গাইতে হয়। প্রবাসী বাঙালীরা গানটি শুনতে চায়। এমন একটি গান যতবারই শোনাই মনটা ভরে যায়। দেশে যেমন গানটির কদর, দেশের বাইরেও কদর অনেক। আমার শিল্পী জীবন এখানেই সার্থক মনে হয়, যখন শহীদ দিবসের জন্য গাওয়া গানটি মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়। গানটির মিউজিক ভিডিও হয়েছিল অনেক পরে। বিটিভিতে প্রচারিত হয়েছিল। সব শ্রেণির মানুষ গানটি নিয়ে নেয়। এভাবে একুশে নিয়ে বহু গান আমি করেছি।

ভাষা দিবস নিয়ে প্রথম কোন গানটি করেন?

রফিকুল আলম: ১৯৭৩ সালে। রফিকুজ্জামান লিখেছিলেন গানটি। সুজেয় শ্যাম সুর করেছিলেন। গানটি হচ্ছে- আমরা জেনেছি জীবন মৃত্যু একই সমান…। ১৯৭৬ সালে আবু হেনা মোস্তফা কামালের লেখা এবং সত্য সাহার সুরে আরেকটি গান করেছিলাম, যা আমার সংগীত জীবনে উল্লেখযোগ্য।

একুশ নিয়ে আপনার এত গান, আপনি স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী কিন্তু এখনো একুশে পদক পান নি, এ নিয়ে কিছু বলবেন?

রফিকুল আলম: দেখুন, এদেশের জন্য আমার যা অবদান, সেই স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে শুরু করে আজ অবধি, আমি স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাশা করি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায়, মহান নেতা বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশ পরিচালনায় সফল। আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং চেতনায় সারাজনম কাজ করে যাওয়া শিল্পী।

আমি স্বাধীনতার পর পর বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রকল্পে, বাংলা একাডেমির অধীনে গবেষক হিসেবে ৩ বছর কাজ করেছি। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ভারতের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে ৯ মাস বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের যেসব রিপোর্ট করা হয়েছিল, লিখিত যেসব তথ্য ছিল, বিশ্বনেতাদের লিখিত যেসব রেকর্ড, বাংলাদেশ ডকুমেন্ট বই বের হয়, এটা আমরা ৪ জন মিলে অনুবাদ করেছিলাম। এটা আমার জীবনের অন্যতম একটি কাজ।

শহীদ দিবসের জন্য গান করেছেন অনেক, এ নিয়ে কিছু বলুন।

রফিকুল আলম: একুশের গান করার অনুভূতির সঙ্গে অন্যকিছু মেলানো যাবে না। কোনোকিছুর সঙ্গে তুলনা করা চলবে না। এটার অনুভূতি আলাদা। দেখুন, আমার আপন চাচাত ভাই আবুল হোসেন ভাষা সৈনিক ছিলেন। উওরাঞ্চলের বড় নেতা ছিলেন। তিনি ছোটবেলা থেকে সব বুঝিয়েছেন আমাদের। আমাদের সমস্ত পরিবার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে বঙ্গবন্ধুর প্রথম ভাষণে আমার চাচাত ভাই আবুল হোসেন নিয়ে গিয়েছিলেন। ভাষা নিয়ে যখন গানের জন্য আমাকে ডাকা হয় কখনো না করি না। ভাষা দিবসের গানে আবেগটা  বেশি আসে।

প্রভাতফেরি নিয়ে কোনো স্মৃতি?

রফিকুল আলম: ছোটবেলা থেকে প্রভাত ফেরিতে যেতাম। মনের ভেতরে দারুণ প্রতিক্রিয়া হতো। এখনো যাই। ছোটবেলায় প্রভাত ফেরিতে যাবার স্মৃতি আছে অসংখ্য । এখনো চোখে ভাসে।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago