‘আমার টেলিভিশন জীবনে অনেক শিল্পী তৈরি হয়েছে তা আনন্দের কথা’

গুণী এই মানুষটি সুদীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে টেলিভিশনে যুক্ত রেখেছেন নিজেকে। এ বছর পেয়েছেন একুশে পদক।
নওয়াজীশ আলী খান। ছবি: সংগৃহীত

নওয়াজীশ আলী খানের নাম কালজয়ী অনেক নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। অসংখ্য নাটক পরিচালনা করেছেন তিনি। নাটক ছাড়াও গান, সাহিত্য নির্ভর অনুষ্ঠান এবং আনন্দমেলা প্রযোজনা করেছেন, পেয়েছেন ব্যাপক প্রশংসা। হুমায়ূন আহমেদকে নাট্যকার হিসেবে অভিষেক করোনোর কৃতিত্বও তার। সাড়া জাগানো নাটক 'অয়োময়' ও 'বহুব্রীহির' পরিচালকও তিনি।

গুণী এই মানুষটি সুদীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে টেলিভিশনে যুক্ত রেখেছেন নিজেকে। এ বছর পেয়েছেন একুশে পদক। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

শিল্পকলায় অবদানের জন্য এ বছর একুশে পদক পেয়েছেন। আপনার অনুভূতি জানতে চাই।

নওয়াজীশ আলী খান: এক কথায় বলতে গেলে অনুভূতি ভালো। দীর্ঘদিন ধরে মিডিয়ায় কাজ করছি। ৫৪ বছর হয়ে গেল। অনেক দিন ধরে আকাঙ্ক্ষা ছিল, এখনও এই সম্মানটি পাইনি। বলতে পারি ৮ থেকে ১০ বছর ধরে প্রত্যাশা করে আসছিলাম সরকার আমাকে দেবে এই সম্মানটি। এবার তা পেলাম। এজন্য প্রথমেই ধন্যবাদ দিতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে, যিনি প্রস্তাবে সই করেছেন। নাম সাজেস্ট করেছেন যিনি তাকেও ধন্যবাদ। যারা বিবেচনা করেছেন, যোগ্য ভেবেছেন আমাকে, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। একটা অপূর্ণতা ছিল, এবার তা পরিপূর্ণ হলো। আমি পরিপূর্ণ।

আপনার পরিবারের সদস্যরা এ পুরস্কার প্রাপ্তিকে কীভাবে দেখছেন?

নওয়াজীশ আলী খান: পরিবারের সদস্যরা অনেক বেশি খুশি। আমার ২ পুত্র। একজন অস্ট্রেলিয়ায় আছে, আরেকজন এখানে ব্যাংকার। ওর স্ত্রীও টেলিভিশনে যুক্ত আছে। পরিবারের সদস্যরা অনেক বছর ধরে এটি প্রত্যাশা করেছিল। ঘোষণা হওয়ার পর ওরা বারবার কথা বলেছে আমার সঙ্গে।

ছোট ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় একটি ব্যান্ড দলের ভোকালিস্ট। নিয়মিত কনসার্ট করছে। আমার স্ত্রী উচ্চ শিক্ষিত। তার ইচ্ছে ছিল সন্তানদের মানুষ করবে, তা করেছে। আমার একুশে পদক প্রাপ্তিতে তিনিও আনন্দিত।

এখন আপনার চাওয়া?

নওয়াজীশ আলী খান: এই বয়সে এসেও কাজ করছি। আবারও এটিএন বাংলায় যোগ দিয়েছি। এটা পেলাম,উৎসাহ আরও বেড়ে গেছে। যতদিন বাঁচি কাজ করে যেতে চাই। টানা ১৬ বছর এটিএন বাংলায় ছিলাম। মাঝে চলে গিয়েছিলাম, আবারও এসেছি। এটিএন বাংলা এবং ড. মাহফুজুর রহমানের কাছে কৃতজ্ঞ। আমার একুশে পদক প্রাপ্তি তিনি আনন্দের সঙ্গে নিয়েছেন। এটিএন বাংলায় ভালো কিছু কাজ করতে চাই ।

নওয়াজীশ আলী খান। ছবি: সংগৃহীত

টেলিভিশনে আপনার পথচলা বহু বছরের। অনেক কাজ করেছেন। এই পথচলা কতটা উপভোগ করেছেন?

নওয়াজীশ আলী খান: অনেক বছরের পথচলায় আমি শুধু নাটক প্রযোজনা করেছি তা নয়। গানের অনুষ্ঠান করেছি, ফেরদৌসী রহমান আপাকে দিয়ে এসো গান শিখির অনুষ্ঠান করেছি। এটা তুমুল আলোচিত অনুষ্ঠান ছিল। সাহিত্য বিষয়ক অনুষ্ঠান করেছি। বাংলা সাহিত্যের ক্রমবিকাশ নিয়ে ছিল অনুষ্ঠানটি। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে আনন্দমেলা উপস্থাপনা করেছি। ওটা দারুণভাবে সাড়া ফেলেছিল। জাদুশিল্পী জুয়েল আইচকে দিয়ে আনন্দমেলা উপস্থাপনা করিয়েছি। আনিসুল হককে দিয়ে আনন্দমেলা উপস্থাপনা করিয়েছি। এভাবেই টেলিভিশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এই পথচলা খুব উপভোগ করেছি।

হুমায়ূন আহমেদকে নাট্যকার বানানোর ক্ষেত্রে আপনার ভূমিকা অনেক।

নওয়াজীশ আলী খান: হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন গল্পের মানুষ। গল্প উপন্যাস নিয়ে ছিলেন। ওখানেই মগ্ন ছিলেন। তাকে টেলিভিশনের জন্য নাটক লেখায় আমি উদ্বুদ্ধ করি। তিনি সহজে রাজি হচ্ছিলেন না। এটা একটা ভালো কাজ করেছি বলে মনে করি। তারপর তার স্ত্রী অনুরোধ করেন। প্রথম প্রহর নাম ছিল প্রথম নাটকের । এরপর তো তিনি নাটকের সঙ্গে যুক্ত হলেন এবং ইতিহাস সৃষ্টি করলেন।

আবুল হায়াতের প্রথম নাটকের প্রযোজকও আমি ছিলাম। অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদের অনেক নাটকের সঙ্গে আমি যুক্ত ছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আকরাম হোসেনের কথা মনে পড়ে। তার লেখা একটি মাত্র নাটক আমি প্রযোজনা করেছিলাম। নাটকটির নাম ঘুণপোকা। আর কোনো নাটক তিনি লেখেননি।

আপনার হাত ধরে টেলিভিশন নাটকের অনেক শিল্পী উঠে এসেছেন। কেমন লাগে বিষয়টি?

নওয়াজীশ আলী খান: আমার টেলিভিশন জীবনে অনেক শিল্পী তৈরি হয়েছে এটা আনন্দের কথা, খুবই আনন্দের কথা। পেছনে ফিরে তাকিয়ে যখন এসব ভাবি ভালো লাগে।

Comments

The Daily Star  | English
Jobless population falls by 3.47% in three months

Number of unemployed men increases, women unemployment declines

The number of unemployed men increased in the first quarter of this year due to a lack of job opportunities, according to the Quarterly Labour Force Survey (QLFS) released today

14m ago