পরিপূর্ণ শিল্পী এটিএম শামসুজ্জামান

এ টি এম শামসুজ্জামান। ছবি: স্টার

দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেছিলেন গুণী অভিনয়শিল্পী এটিএম শামসুজ্জামান। তারপর টানা ৫ দশক সুনামের সাথে অভিনয় করে গেছেন চলচ্চিত্রে ও নাটকে। জাতীয় চলচ্চিত্রে পেয়েছেন আজীবন সম্মাননা। এছাড়া অভিনয় জীবনের স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন।

আজ ১০ সেপ্টেম্বর প্রয়াত এই গুণী অভিনেতার জন্মদিন।

সাড়া জাগানো 'গোলাপি এখন  ট্রেনে' সিনেমায়  নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয়  করে তুমুলভাবে আলোচিত হন তিনি। নয়নমনি সিনেমায়ও নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করে সাড়া ফেলেন দর্শকদের মাঝে। এভাবে একের পর এক বাংলা চলচ্চিত্রে নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের চোখে তিনি খল অভিনেতা বনে যান।

তার অভিনীত আলোচিত সিনেমাগুলো হচ্ছে- এতটুকু আশা, অবুঝ মন, গোলাপি এখন ট্রেনে, ওরা ১১ জন, নয়নমনি, জলছবি, সুয়োরানী দুয়োরানী, লালন ফকির, লাঠিয়াল, অশিক্ষিত, ছুটির ঘণ্টা, লাল কাজল, সূর্য দীর্ঘল বাড়ি, দায়ী কে, রামের সুমতি, ঢাকা ৮৬, হাজার বছর ধরে, আধিয়ার, গেরিলা ইত্যাদি।

তার গল্প নিয়ে সালাউদ্দিন লাভলু পরিচালনা করেন 'মোল্লাবাড়ির বউ চলচ্চিত্র'। এটি ছিল  সুপারহিট একটি সিনেমা।

একটা সময়ে তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় কমিয়ে দিয়েছিলেন। টিভি নাটকে নিয়মিত অভিনয় করতেন তখন। বিশেষ করে সালাউদ্দিন লাভলুর পরিচালনায় বেশ কয়েকটি ধারাবাহিকে ও এক ঘণ্টার নাটকে নিয়মিত অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করেন।

সালাউদ্দিন লাভলু পরিচালিত মেগা ধারাবাহিক 'রঙের মানুষ' নাটকে অভিনয় করে সববয়সী দর্শকদের মন জয় করেন। তার অভিনীত 'গরু চোর' নাটকটি ব্যাপক জনপ্রিয় একটি নাটক। এছাড়া 'ভবের হাট' ধারাবাহিকে অভিনয় করেও প্রশংসা পেয়েছেন।

অভিনেতার বাইরে তিনি অনেক সিনেমার কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন। নায়ক ফারুক অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র জলছবির জন্য প্রথমবার কাহিনী লিখেন তিনি।

গুনী অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান সম্পর্কে সালাউদ্দিন লাভলু বলেন, 'এটিএম ভাই ছিলেন সত্যিকারের গুণী মানুষ। তার মতো পড়াশোনা করা ও জানাশোনা মানুষ কমই দেখেছি আমার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেই তিনি অন্য মানুষ হয়ে যেতেন। যেকোন চরিত্রের জন্য  তিনি ছিলেন শতভাগ যোগ্য। তার কাছ থেকে অনেককিছু শিখেছি।'

নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন, 'এটিএম শামসুজ্জামানের সঙ্গে আমার ছিল দারুণ একটা সম্পর্ক। ভীষণ মেধাবী ছিলেন তিনি। লেখালেখি করতেন। সিনেমার কাহিনী লিখতেন। কবিতা লিখতেন। অভিনয়ে আসেন আরও পরে। তার গুণের শেষ নেই। পুরোটা জীবন অভিনয়ের জন্য দিয়ে গেছেন। সবচেয়ে বড় কথা-তার মধ্যে বিনয় ছিল। মানুষকে সম্মান করতে জানতেন। তার চলে যাওয়াটা আমার জন্য বেদনার ও কষ্টের।'

আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন নায়িকা ববিতা বলেন, 'এটিএম শামসুজ্জামানের সঙ্গে সিনেমায় অভিনয় করে সব সময়ই একটা ভালো লাগা বিষয় কাজ করত। তিনি অসম্ভব গুণী মানুষ ছিলেন। একটি চরিত্রে অভিনয় করার সময় তা কতটা সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতেন, সেসব পর্দায় দেখার পরই বোঝা যেত। মানুষ হিসেবে খুব ভালো ছিলেন। তার সাথে অভিনয় করার অসংখ্য স্মৃতি আজও চোখে ভাসে। একজন পরিপূর্ণ শিল্পী এটিএম শামসুজ্জামান। তিনি নেই, কিন্তু তার জন্মদিন আজ। বিশেষ দিনে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।'

Comments

The Daily Star  | English

Blockade at Shahbagh demanding AL ban

The demonstration follows a sit-in that began around 10:00pm last night in front of the Chief Adviser's residence

2h ago