ডিপফেইক প্রযুক্তি জটিল করে তুলছে তারকাদের জীবন

ডিপফেইক হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে প্রকৃত ভিডিও ফুটেজ পরিবর্তন করে ব্যক্তির চেহারা ও শারীরিক অবস্থা অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে প্রতিস্থাপন করা যায়।
গত ৭ নভেম্বর বলিউড অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানার একটি ডিপফেইক ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। একজন ব্রিটিশ-ভারতীয় বংশোদ্ভুত নারী, জারা পাটেলের ভিডিওতে রাশমিকার চেহারা এ আই প্রযুক্তির সাহায্যে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

একদিকে প্রযুক্তির বিকাশ মানুষের জীবনের জটিলতা যেমন কমিয়ে দিচ্ছে অপরদিকে জন্ম দিচ্ছে এ সম্পর্কিত নতুন জটিলতা। বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে তৈরি ডিপফেইক ছবি ও ভিডিও তারকাদের পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ডিপফেইক হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে প্রকৃত ভিডিও ফুটেজ পরিবর্তন করে ব্যক্তির চেহারা ও শারীরিক অবস্থা অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে প্রতিস্থাপন করা যায়। প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর ভিডিও এবং ছবি ছড়িয়ে পড়ে অস্থিরতা তৈরি হয়।

রাশমিকা মান্দানা। ছবি: সংগৃহীত

গত ৭ নভেম্বর বলিউড অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানার একটি ডিপফেইক ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। একজন ব্রিটিশ-ভারতীয় বংশোদ্ভুত নারী, জারা পাটেলের ভিডিওতে রাশমিকার চেহারা এ আই প্রযুক্তির সাহায্যে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডিপফেইক ভিডিওটি নিয়ে বলিউড ইন্ডাস্ট্রির অমিতাভ বচ্চন থেকে শুরু করে তামিল, তেলেগু ইন্ডাস্ট্রির অভিনেতা-অভিনেত্রী সবাই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন।

শুধু বলিউড নয়, হলিউডের বেশিরভাগ তারকা শিল্পীরাও এই ডিপফেইক প্রযুক্তির কবলে পড়েছেন। টম হ্যাঙ্কস, স্কারলেট জোহ্যানসন, মরগান ফ্রিম্যান থেকে শুরু করে আরও অনেক তারকার সঙ্গে এ ঘটনা ঘটেছে।

এমনই কয়েকটি ঘটনার কথা এই লেখায় থাকছে।

টম হ্যাঙ্কস

অস্কারজয়ী হলিউড অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস সম্প্রতি ডিপফেইক কারসাজির শিকার হন। ছবি: সংগৃহীত

অস্কারজয়ী হলিউড অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস সম্প্রতি ডিপফেইক কারসাজির শিকার হন। অনুমতি ছাড়াই, এআইয়ের মাধ্যমে টম এর প্রতিরূপ ব্যবহার করে একটি দাতব্য সংস্থার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। টম তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে বিজ্ঞাপনের স্ক্রিনশট পোস্ট করে নিশ্চিত করেন যে এটি তিনি নন।

সবাইকে এই প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন থেকে সাবধান থাকতে অনুরোধ করেছেন তিনি। টম হ্যাঙ্কস লিখেছেন, 'সাবধান থাকুন। অনলাইনে একটি দাতব্য বিজ্ঞাপনের ভিডিওতে আমাকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এটা আমি নই, এটা মূলত একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলেজেন্সের সংস্করণ। এর সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি এই পণ্য ব্যবহার করা দূরের কথা নামও শুনিনি। সবাইকে অনুরোধ এরূপ এআই ভিডিও দিয়ে প্রতারিত হবেন না।' বিভিন্ন সময়ে টম হ্যাঙ্কস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কঠোর বিরোধিতা করে কথা বলেছেন এবং এরূপ ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়াতে নিজের চেহারা ও কণ্ঠস্বর কপিরাইট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

স্কারলেট জোহ্যানসন

ডিপফেইক প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্কারলেট জোহ্যানসনের চেহারা পাল্টে এলিজাবেথ ওলসেনের চেহারা বসিয়ে দেওয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত

'ব্ল্যাক উইডো' অভিনেত্রী স্কারলেট জোহ্যানসন তার ২৯ বছরের ক্যারিয়ারে প্রায়ই প্রযুক্তির ভয়াবহ দিকটির ভুক্তভোগী হয়েছেন। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলেজেন্স সহজলভ্য হওয়ার আগেও বহু খ্যাতনামা চিত্রতারকার মুখাবয়ব ব্যবহার করে বিভিন্ন ছবিতে ফটোশপ করা হতো।

২০১২ সালে এমনই এক কারসাজির শিকার হন স্কারলেট জোহ্যানসন, যেখানে নগ্ন ছবিতে তার চেহারা ফটোশপ করা হয়েছিল। বর্তমানে ডিপফেইক প্রযুক্তির অপব্যবহার আরও ভয়াবহ এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এতে আসল নাকি নকল তা শনাক্ত করা কঠিন।

২০১৮ সালে দা ওয়াশিংটন পোস্টের এক ইন্টারভিউয়ে স্কারলেট বলেন, 'এ বিষয় আমার ওপর তেমন প্রভাব ফেলে না কারণ যারা আমাকে চেনে তারা ভালো করে জানে, আমি এই ধরনের কাজ কখনো করতে পারি না। সত্যি বলতে, আমার কাছে এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া নিরর্থক মনে হয়। কারণ ইন্টারনেট অন্ধকারের এক বিশাল জগত যা নিজেকেই নিজে গ্রাস করে ফেলে।'

মরগান ফ্রিম্যান

হলিউড অভিনেতা মর্গান ফ্রিম্যানের ডিপফেইক ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাসযোগ্য ছিল। ছবি: সংগৃহীত

হলিউড অভিনেতা মর্গান ফ্রিম্যানের ডিপফেইক ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাসযোগ্য ছিল। ভাইরাল ডিপফেইক ভিডিওটি ২০২১ সালে একটি ডাচ ইউটিউব চ্যানেল 'ডিয়েপ নেপ' থেকে আপলোড করা হয়।

ক্লিপটিতে দেখা যায় মরগান সরাসরি ক্যামেরার সামনে কথা বলছেন। ভিডিওর শুরুতেই তিনি দর্শকদের বলছেন, 'আমি মরগান ফ্রিম্যান নই, এবং আপনারা যা দেখছেন তা বাস্তব নয়'। চলচ্চিত্রকার 'বব ডি জং' এর পরিচালনা ও কণ্ঠশিল্পী 'বুত শাওনিক' এর কণ্ঠ অনুকরণ এতটাই বিশ্বাসযোগ্য ছিল যা প্রমাণ করে দেয় ভালো অভিনয় এবং শক্তিশালী প্রযুক্তি দিয়ে দর্শকদের বোকা বানানো কতটা সহজ।

মরগান ফ্রিম্যান 'দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন, 'আনফরগিভেন', 'মিলিয়ন ডলার বেবি', 'ডার্ক নাইট ট্রিলজি' সহ অনেক জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

রবার্ট প্যাটিনসন

টিকটকে “আনরিয়াল রবার্ট” নামধারী একটি অ্যাকাউন্ট রবার্ট প্যাটিসনের প্যারোডি ডিপফেইক ভিডিও আপলোড করেছিল। ছবি: সংগৃহীত

৩৭ বছর বয়সী, 'ব্যাটম্যান' অভিনেতা রবার্ট প্যাটিনসন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডিপফেইক ভিডিওর কবলে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অন্যতম আলোচিত প্ল্যাটফর্ম টিকটকে "আনরিয়াল রবার্ট" নামধারী একটি অ্যাকাউন্ট রবার্ট প্যাটিসনের প্যারোডি ডিপফেইক ভিডিও আপলোড করেছিল।

ইএস ম্যাগাজিন এর একটি ইন্টারভিউয়ে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রবার্ট জানান, তিনি মনে করেন খুব দ্রতই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলেজেন্স ও বাস্তবতার মাঝখানের পার্থক্য সম্পূর্ণরূপে গায়েব হয়ে যেতে পারে। এতে করে ভবিষ্যতে কর্মজীবনে ব্যপক ভোগান্তিতে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা জানান তিনি।

'স্বল্পদৈর্ঘ্যের ভিডিওগুলো এতোটাই বিশ্বাসযোগ্য যে এমন মানুষও রয়েছে যারা আমাকে বেশ ভালোভাবে চেনে তবুও তারা আমাকে জিজ্ঞেস করে, "আপনি টিকটকে অদ্ভুত নাচের ভিডিও কেন করছেন?",' রবার্ট প্যাটিনসন বলেন।

টম ক্রুজ

টিকটকে টম ক্রুজের ওই ডিপফেইক মিমিক্রি ভিডিও করে বেশ খ্যাতি পেয়েছেন মাইলস ফিশার। ছবি: সংগৃহীত

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মার্কিন অভিনেতা টম ক্রুজেরও ডিপফেইক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। টিকটকে টম ক্রুজের ওই ডিপফেইক মিমিক্রি ভিডিও করে বেশ খ্যাতি পেয়েছেন মাইলস ফিশার।

ডিপফেইক ভিডিওগুলো সাধারণত অনেকাংশে প্রতারণামূলক বা অসৎ উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়, তবে মাইলস এর ভিডিও হাস্যরসের ছলে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তিনি তার ভিডিওতে বুঝিয়েছেন যে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলেজেন্স শুধু প্রতারনার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় এমন নয় বরং শৈল্পিক প্রতিভা প্রকাশের জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে।

গ্রন্থনা: আঞ্জুম ইসলাম প্রমী

Comments

The Daily Star  | English

5 feel-good books to get you in the mood for fall

Speaking of Gilmore Girls, the first addition to our list is a hearty romantic novel by Laurie Gilmore. This book is a written rendition of Stars Hollow itself—starting from the quirky characters to its eternally golden atmosphere.

7h ago