অনেকেই এখনো আমাকে ‘জামাল’ নামেই চিনে: তুষার খান

বিটিভির সাড়া জাগানো নাটক 'ইতিকথা'র জামালের কথা মনে আছে কি? সেই সময়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল চরিত্রটি। এই চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিলেন অভিনয়শিল্পী তুষার খান। চার দশক ধরে অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত তিনি। মঞ্চ-টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্র—তিন মাধ্যমেই একসময় প্রচুর কাজ করেছেন।
তুষার খান আগের মতো অভিনয় করেন না। ব্যস্ততা কমিয়ে দিয়েছেন। তবে, একটি মাত্র ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন। সালাহউদ্দিন লাভলু পরিচালিত নতুন নাটকের নাম 'ফুলগাঁও'। বেশি নাটক না করার বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ইচ্ছে করে না। ইচ্ছে না করার কারণ আছে। তা হচ্ছে—মনের মতো চরিত্র পাই না। ভিন্নতা থাকতে হবে তো। গতানুগতিক ধারার কাজ নয়। নতুন কিছু চাই।
'ফুলগাঁও' নাটকটি ভালো লাগার কারণ জানতে চাইতেই তুষার খান বলেন, ফুলগাঁও নাটকের নাট্যকার মাসুম রেজা। পরিচালক সালাহউদ্দিন লাভলু। দুজনেই অনেকগুলো ভালো নাটক একসঙ্গে করেছেন। তাদের কাজের মধ্যে ভিন্নতা আছে। 'ফুলগাঁও' নাটকেও তা আছে।
একটা সময় টেলিভিশন নাটকে বাবা-চাচা চরিত্রগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হতো। কিন্তু এখন নেই বললেই চলে। এর কারণ জানতে চাইলে তুষার খান বলেন, এখন তো ফ্যামিলি ড্রামা কম হচ্ছে। আগের তুলনায় কিছুই হচ্ছে না ফ্যামিলি ড্রামা। যে কারণে বাবা ও চাচা থাকছে না। মা-চাচিও থাকছে না। নাটকের বাজেট কমছে। এইসব কারণে ফ্যামিলি নাটক কম হচ্ছে। ফলে আমরাও চরিত্র পাচ্ছি না।
অভিনয়শিল্পী হিসেবে আফসোস কিংবা আকাঙ্ক্ষা কাজ করে কী? তুষার খান বলেন, শিল্পী হিসেবে আফসোস কিংবা আকাঙ্ক্ষা তো থাকবেই। শিল্পীর তৃপ্তি কখনো হয় না। সব ধরনের চরিত্র করতে পারিনি। অনেক চরিত্র একজীবনে করা হয়নি। এসব নিয়ে আফসোস হয়।
অভিনয় জীবনের শুরুতে তুষার খান 'আরণ্যক' নাট্যদলে যোগ দেন। দীর্ঘ দিন তিনি মঞ্চে নিয়মিত অভিনয় করেছেন। এই নাট্যদলের সাড়া জাগানো নাটক ইবলিশ, নানকার পালাসহ অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন। তিনি বলেন, মঞ্চে অনেক নাটক করেছি। কিন্তু 'ইবলিশ' নাটকের আবদুল্লাহ ও নানকার পালা নাটকের পুলিশ চরিত্র দুটি আমার অনেক পছন্দের।

তুষার খানের টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করার গল্পটা অন্যরকম। 'আরণ্যক' নাট্যদলে কাজ করার সময় মনে মনে ভাবতেন টিভি নাটক করবেন। সেই সময় মামুনুর রশীদ 'ইতিকথা' নাটক লিখছেন। একদিন তিনি বাসায় যেতে বলেন তুষার খানকে। বাসায় যাওয়ার পর দেখেন তার জন্য চমক অপেক্ষা করছে।
তুষার খান বলেন, বাসায় যাওয়ার পর মামুন ভাই বললেন, ইতিকথা নাটক লিখছি, এই নাটকে জামাল চরিত্রটি তুই করবি? পড়ে দেখ তো? আমি পড়লাম। পড়ার পর মতামত দিলাম এবং বললাম, এটাকে একটু মেয়েলি ঢংয়ে করলে কেমন হয়? তারপর মামুন ভাই সেটি করলেন এবং চরিত্রটি একটু পাল্টে দিলেন, সেই সঙ্গে জামাল চরিত্রের সঙ্গে কামাল চরিত্রটিও লিখলেন।
তারপর কী হলো? এক নাটকেই বাজিমাত? তুষার খান হাসতে হাসতে বলেন, বিটিভির কোনো নাটকে ওইরকম চরিত্র প্রথম লেখা হয়। জামাল চরিত্রটি দর্শকরা গ্রহণ করেন। দেশজুড়ে আমার জনপ্রিয়তা গড়ে ওঠে।
'ইতিকথা' নাটকের জামাল চরিত্রটি নিয়ে তিনি আরও বলেন, এখনো আমাকে 'ইতিকথা' নাটকের জামাল বলে ডাকে। অনেকে আমার আসল নাম জানেই না। কিন্তু জামাল নামটি জানে। এটা তো অভিনয় জীবনের বড় পাওয়া।
টেলিভিশন নাটকে ব্যস্ততা বাড়ার পর রূপালি পর্দায় প্রস্তাব আসতে শুরু করে। বন্ধুর সঙ্গে একদিন পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের বাসায় যান। প্রয়াত এই পরিচালক তখন 'আজকের প্রতিবাদ' নামে একটি সিনেমা করার কথা ভাবছেন নতুনদের নিয়ে। তুষার খানকে তিনি একদিন বললেন, সিনেমায় অভিনয় করবি? সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান তিনি।
সিনেমার গল্প জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, একদিকে টেলিভিশন নাটক অন্যদিকে সিনেমা—দুই মাধ্যমেই অভিনয় করি। চাষী নজরুল ইসলাম ভাইয়ের সিনেমা করার পর আরও প্রস্তাব আসতে শুরু তরে। এরপর সালমান শাহর সঙ্গে 'বিক্ষোভ' সিনেমা করি। এটি আমার দ্বিতীয় সিনেমা।
'বিক্ষোভ' আমার ক্যারিয়ারে বড় ভূমিকা রাখে। এটি ব্যবসাসফল হয়। সিনেমায় আমার ব্যস্ততা বাড়ে', বলেন তিনি।
সালমান শাহর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তুষার খান বলেন, চমৎকার সম্পর্ক ছিল সালমান শাহর সঙ্গে। বয়সে আমার জুনিয়র ছিলেন। কিন্তু আমাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব ছিল। সালমান শাহ আমার ভালো বন্ধু ছিলেন। বড় মনের মানুষ ছিলেন।
'সালমান শাহ পর্দায় যেমন হিরো ছিলেন, বাস্তবেও হিরো ছিলেন। তার তুলনা তিনি নিজেই', বলেন তিনি।
Comments