বাংলা ও বলিউডের গানে রবীন্দ্রসংগীতের প্রভাব

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ছবি: সংগৃহীত

আজ ২৫শে বৈশাখ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী। বাঙালির মননে ও সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথ এক চিরন্তন সঙ্গী। তার কবিতা, গল্প, উপন্যাসের মতোই তার গানও মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে। বাংলা চলচ্চিত্রের সূচনা থেকে এখন পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের গান ব্যবহৃত হয়ে আসছে নানাভাবে, নানা আঙ্গিকে। বাংলার গণ্ডি পেরিয়ে এই সুরধারা পৌঁছেছে বলিউডেও।

কবিগুরুর জন্মদিনে চলুন দেখি বাংলা ও বলিউড গানে তার প্রভাব কেমন পড়েছে।

বাংলা চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রসংগীত

বাংলা চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রসংগীতের ব্যবহার শুরু হয়েছিল কবির জীবদ্দশাতেই। প্রমথেশ বড়ুয়ার 'মুক্তি' (১৯৩৭) ছবিতে প্রথম ব্যবহার হয় তার গান। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক রবীন্দ্রসংগীত ব্যবহৃত বাংলা ভাষার সিনেমায়।

অনেক কালজয়ী পরিচালকই কবিগুরুর গান দিয়ে সাজিয়েছেন তাদের ছবির দৃশ্য। ঋত্বিক ঘটকের মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০)-য় ব্যবহার হয়েছে 'যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে'। সত্যজিৎ রায়ের একাধিক সিনেমায় এসেছে রবি ঠাকুরের গান—কাঞ্চনজঙ্ঘা (১৯৬২)-য় 'এ পরবাসে রবে কে', জনঅরণ্য (১৯৭৬)-তে 'ছায়া ঘনাইছে বনে বনে', তিন কন্যা (১৯৬১)-য় 'বাজে করুণ সুরে' এবং ঘরে বাইরে (১৯৮৪) ছবিতে ব্যবহার হয়েছে 'বিধির বাঁধন কাটবে তুমি'।

তপন সিংহের অতিথি (১৯৬৫) ছবিতে 'আমার মুক্তি আলোয় আলোয়', হাটে বাজারে (১৯৬৭) সিনেমায় 'নদী আপন বেগে পাগলপারা' কিংবা অজয় কর পরিচালিত 'মাল্যদান' (১৯৭১) চলচ্চিত্রে 'ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে'; প্রতিটি গানই ছবিগুলোকে গভীরতা দিয়েছে। পূর্ণেন্দু পত্রী পরিচালিত স্ত্রীর পত্র (১৯৭২) ছবিতে 'বাংলার মাটি বাংলার জল' গানটি যেমন দেশাত্মবোধ উসকে দিয়েছে, তেমনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে নির্মিত তরুণ মজুমদারের 'নিমন্ত্রণ' (১৯৭১)-এ 'দূরে কোথাও দূরে দূরে' গানটি রোমান্টিক এক আবহ তৈরি করেছে।

তরুণ মজুমদারের আরও বেশ কিছু সিনেমা—শ্রীমান পৃথ্বীরাজ (১৯৭৩), ভালোবাসা ভালোবাসা (১৯৮৫) ও আলো (২০০৩)-তে ব্যবহৃত হয়েছে রবীন্দ্রসংগীত। 

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প ও গান বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। তার কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে 'শাস্তি' (২০০৪), 'কাবুলীওয়ালা' (২০০৬) ও 'অবুঝ বউ' (২০১০)-এর মতো চলচ্চিত্র। চাষী নজরুল ইসলাম নির্মিত 'সুভা' (২০০৬) চলচ্চিত্রে 'চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে' গানটির ব্যবহার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

বলিউডে রবীন্দ্রসংগীত 

কবিগুরু হিন্দিতে কোনো গান লিখেননি। তবে রবীন্দ্রসংগীত থেকে অনুপ্রাণিত বলিউড গানের সংখ্যা অনেক, অনেক হিন্দি গানে সরাসরি নেওয়া হয়েছে রবীন্দ্রনাথের সুর।  

শচীন দেববর্মণের 'আফসার' (১৯৫০) ছবির 'নয়না দিওয়ানে' গানটির অনুপ্রেরণা এসেছে রবীন্দ্রনাথের 'সেদিন দুজনে' থেকে। কবিগুরুর 'একদা তুমি প্রিয়ে' গানের সুর নকল করা হয়েছে সুজাতা (১৯৫৯)-র 'জলতে হ্যাঁয় জিসকে লিয়ে'-তে। ব্যাপক জনপ্রিয় হওয়া তালাত মাহমুদের এই গান এখনো বেঁচে আছে 'বলিউড ক্লাসিক' হিসেবে।

হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের সাড়া জাগানো ছবি 'অভিমান' (১৯৭৩)-এ কিশোর কুমার ও লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া গান 'তেরে মেরে মিলন কি ইয়ে র‍্যায়না'-র অনুপ্রেরণা এসেছে কবিগুরুর 'যদি তারে নাই চিনি গো' থেকে।

এছাড়া দিদার (১৯৫১) ছবির 'বচপন কে দিন ভুলা না দেনা' গানে 'মনে রবে কি না রবে আমারে'-র সুরের ছায়া পাওয়া যায়। 'হে ক্ষণিকের অতিথি' গানের সুর ব্যবহার হয়েছে ট্যাক্সি ড্রাইভার (১৯৫৪) সিনেমার 'যায়ে তো যায়ে কাঁহা' গানে। 'ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল'-র ছায়া পাওয়া যায় 'ওয়ারিশ' (১৯৫৪) ছবির 'রাহি মাতওয়ালে' গানে।

'টুটে খিলোনা' (১৯৭৮) ছবিতে রবি ঠাকুরের 'ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি' গানের অনুকরণে 'নানহা সা পাঞ্চি রে তু' গানটি পরিবেশন করেন বাপ্পি লাহিড়ী। ইয়ারানা (১৯৮১)-র 'ছুঁ কার মেরে মন কো' গানটির সঙ্গে মিল পাবেন কবির 'তোমার হলো শুরু, আমার হলো সারা' গানের। 'যুগপুরুষ' (১৯৭৯)-এর 'বন্ধন খুলা পাখি উড়া' গানেও 'পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে'র অনুপ্রেরণা বেশ স্পষ্ট। 

একবিংশ শতাব্দীর বলিউডে আছে রবীন্দ্রসংগীতের ছাপ। শান্তনু মৈত্র পরিচালিত (২০০৫) ছবির 'পিউ বোলে' গানটি রবীন্দ্রনাথের 'ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে' গানের সুরেই গাওয়া হয়েছে।

এভাবেই, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে কবিগুরুর সৃষ্ট গান ও সুর দুই বাংলা ও তার সীমানা ছাড়িয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English
International Crimes Tribunal 2 formed

Govt issues gazette notification allowing ICT to try political parties

The new provisions, published in the Bangladesh Gazette, introduce key definitions and enforcement measures that could reshape judicial proceedings under the tribunals

4h ago