খেজুর বনাম সেভেন আপ

‘ফুটবল খেলায় সবচেয়ে কম দৌড়ায় গোলকিপার। আর না খেলেও সবচেয়ে বেশি দৌড়ায় রেফারি!’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথাগুলো লিখেছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ।

'ফুটবল খেলায় সবচেয়ে কম দৌড়ায় গোলকিপার। আর না খেলেও সবচেয়ে বেশি দৌড়ায় রেফারি!' সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথাগুলো লিখেছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ।

বিশ্বকাপ এলেই কারা জিতবে তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়, দেশ হয়ে যায় (আর্জেন্টিনা না ব্রাজিল) ২ ভাগে বিভক্ত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া কাতার বিশ্বকাপে নেই।

'রাশিয়া কী কখনো বিশ্বকাপ জিততে পারে?' এই প্রশ্নের জবাবে ফুটবল কিংবদন্তি পেলে বলেছিলেন, 'পারে! যে বছর ব্রাজিল আইস হকিতে জিতবে, সে বছর রাশিয়া বিশ্বকাপ ফুটবলেও জিততে পারে।'

ব্রাজিল আসলে আইস হকিই খেলতো না। রাশিয়াকে নিয়ে বিদ্রূপ করা কিংবদন্তি পেলেকে নিয়েও মজাদার উক্তি আছে। যেমন: পেলে ও ম্যারাডোনার মধ্যে প্রধান পার্থক্য কী? উত্তর হচ্ছে, পেলে সাদা-কালো আর ম্যারাডোনা রঙিন। এখানে যুগ বা সময়ের কথা বলা হয়েছে। পেলের খেলার সব ফুটেজ সাদা-কালো এবং টেলিভিশন সেই কালে সহজলভ্য ছিল না। ১৯৮২ থেকে ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত ম্যারাডোনার সময় ধরা হলে, সেটা ছিল রঙিন টেলিভিশন ও অধিকতর উন্নত গ্রাফিক্সের যুগ। ম্যারাডোনা খেলা ও প্রযুক্তিনির্ভর প্রচারণা, দুটো দিয়েই মানুষের হৃদয়ে ঢুকেছিলেন।

১৯৯৪ সালে একই প্রশ্ন (পেলে ও ম্যারাডোনার মধ্যে প্রধান পার্থক্য কী?) কয়েকজন খেলোয়াড়কে করা হয়েছিল। খেলোয়াড়দের একজন মজা করে উত্তর দিয়েছিলেন, পেলে নারী ও মাদক বান্ধব নন। ম্যারাডোনা তার বিপরীত।

সে যাই হোক, নারী সমর্থনের ব্যাপারে পরে আসা যাবে। যদিও পেলে সম্পর্কে ম্যারাডোনার ভাষ্য ছিল, 'আমিই সেরা। পেলেকে যাদুঘরে পাঠানোর সময় হয়েছে।'

খেলা নিয়ে সবচেয়ে মজার কুইজটা পড়েছিলাম ভারতীয় একটা পত্রিকায়। একটা হাসিময় অনুষ্ঠানের বর্ণনা দিতে গিয়ে কুইজটা উপস্থাপন করা হয়েছিল এভাবে, 'বলুন তো, কোন খেলোয়াড় দিনে ভারতের বিপক্ষে খেলে কিন্তু রাতে ভারতের সঙ্গে ঘুমোয়?' উত্তরে জানানো হয়, এই খেলোয়াড়ের নাম ক্রিকেটার শোয়েব মালিক। যিনি ভারতের বিপক্ষে খেললেও রাতে ঘুমোতে যান স্ত্রী সানিয়া মীর্জার সঙ্গে। সবাই জানেন যে সানিয়া ভারতের টেনিস খেলোয়াড়।

একজন মাত্র ক্রিকেট খেলোয়াড়ের রেকর্ড আছে ফুটবল বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে খেলার। তিনি ভিভ রিচার্ড। অ্যান্টিগুয়ার হয়ে খেলেছিলেন তিনি। ভিভ রিচার্ড ক্রিকেট কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন। তবে ক্রিকেট কিংবদন্তিদের চেয়ে ফুটবল গ্রেটদের নিয়ে দুনিয়া জুড়ে মাতামাতি বেশি হয়। সবচেয়ে বেশি মাতামাতি বা পত্রিকা ও টেলিভিশনে যার উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া, তিনি ডিয়েগো ম্যারাডোনা। তার বিখ্যাত এক উক্তি হচ্ছে, 'যদি মরে যাই তাহলে আবারও জন্ম নিতে চাই। আবারও একজন ফুটবলার হতে চাই।' পুনর্জন্মে ফুটবলার হতে চাওয়া এই ম্যারাডোনার আরেক বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে, 'আমি ভুল করেছি এবং সেগুলোর জন্য মাশুলও গুনেছি। কিন্তু বল এখনও খাঁটি।'

খেলোয়াড়রা বিভাজিত হয়, ফুটবলকে ঘিরে যতই রাজনীতি, ঝাড়ফুঁক, ব্যবসা বা বাজি ধরা হোক না কেন, বল তবু খাঁটি থাকে। ম্যারাডোনা নিজেকে খুব 'খাঁটি' মতো চিনেছিলেন। হৃদয়ের মতো ম্যারাডোনার সবকিছুই ছিল বড়। ১৯৯১ সালে এই 'ফুটবল ঈশ্বর' নিজের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন দেড় কেজি কোকেনসহ। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়ে বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কৃত হন। এই বছরেই তার অ্যাপার্টমেন্টের সামনে একটা গাড়ির পেছন থেকে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে গুলি ছুঁড়েছিলেন বলে তাকে জেলেও যেতে হয়েছিল।

তবু তিনি বলতেন, 'আমি সাদা কিংবা কালো হতে পারি, কিন্তু জীবনে কখনো ধূসর হবো না।' যে গোলের কারণে 'ঈশ্বরের হাত' আলোচনায় এসেছে, সে ব্যাপারে তার বক্তব্য ছিল, 'ক্ষমা চেয়ে আমি ইতিহাস পাল্টে দিতে পারলে অবশ্যই তা করতাম। কিন্তু গোলটি এখনও গোলই। এই গোলের কারণেই আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন আর আমি হয়ে গেলাম বিশ্বসেরা।'

ম্যারাডোনা জানতেন, ফুটবল রাজনীতির বাইরে না। রাশিয়া যে এবার বিশ্বকাপের বাইরে, সেটাও রাজনীতি ও যুদ্ধ। পোল্যান্ড থেকে কাতারের দূরত্ব প্রায় ৪ হাজার মাইল। পোল্যান্ড রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনকেই সমর্থন করেছে। পোল্যান্ডে তাই ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও হয়েছে। বিশ্বকাপে কোনো ঝুঁকি নিতে চায়নি বলে সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান এক জোড়া এফ-১৬ এর পাহারায় পোল্যান্ড এসেছে কাতারে। কাতার বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে আর্জেন্টিনার সঙ্গে ২ গোলে হারার পরও পোল্যান্ড দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে পেরেছিল। ম্যারাডোনা বেঁচে থাকলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কী বলতেন, তা ধারণা না করা গেলেও এটা মনে করিয়ে দেওয়া যায় যে, ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার পর ম্যারাডোনার রাজনৈতিক দর্শন বদলে গিয়েছিল। ম্যারাডোনা সদম্ভে ঘোষণা দিয়েছিলেন, 'আমি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা সবকিছুই ঘৃণা করি। আমি এগুলোকে আমার সব শক্তি দিয়ে ঘৃণা করি।'

তবে কোন কোন ফুটবলারকে নিয়ে তার ঈর্ষাও ছিল। ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো সম্পর্কে একবার বলেছিলেন, 'ছেলেটা স্বাভাবিকভাবে গোল উদযাপন করতে পারে না। গোল দেওয়ার পর তার এক্সপ্রেশন দেখে মনে হয়, সে শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপন করছে।' তবে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো পাঁচ পাঁচটা বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন।

ম্যারাডোনাকে নিয়ে এত বয়ানের কারণ, বাংলাদেশের আফারা। ম্যারাডোনা বা মেসির কারণে বাংলাদেশের মেয়েরা নাকি আর্জেন্টিনাকে বেশি ভালোবাসে। কৃতজ্ঞতা জানাতে তাই আর্জেন্টিনার জার্সিতে লেখা থাকে 'AFA' (আফা-আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন)। বাংলাদেশের 'আফা'রা আরও বেশি ভালোবাসুক আর্জেন্টিনাকে। মেয়েরা শুধুমাত্র ভদ্র বা গুডি গুডি বয়দেরই ভালোবাসে এমন নয়, তারা ভালোবাসে 'ড্যাসিং'দেরও। ম্যারাডোনা হচ্ছেন রঙিন ও ড্যাসিং, কিন্তু সম্পূর্ণ গুডি গুডি বয় লিওনেল মেসি।

এবারের বিশ্বকাপে খেলোয়াড়দের নাম নিয়ে অনেকে মজা করেছেন। বাংলাদেশে চালের দাম বেশি বলে কি না জানি না, ইংল্যান্ডে এক খেলোয়াড়ের নাম 'রাইস'। বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সমর্থকরা অন্ধ বলে হয়তো নেদারল্যান্ডের এক খেলোয়াড়ের নাম 'ব্লাইন্ড'। সার্বিয়ার সঙ্গে ব্রাজিলের খেলায় নেইমারকে ৯ বার ফাউল করা হয়েছে বলেই হয়তো নেদারল্যান্ডের আরেক খেলোয়াড়ের নাম 'ল্যাং'। ম্যাচ পাতানোর সম্ভাবনা আছে কি না বোঝা না গেলেও পোল্যান্ডের এক খেলোয়াড়ের নাম 'ক্যাশ'। জুতা বিশেষজ্ঞ একজন আছেন জার্মানে, যার নাম 'মুচিওয়ালা'। স্পেনের এক খেলোয়াড়ের নাম 'মরা'। মরক্কোর এক খেলোয়াড়ের নাম 'ইলিয়াস চেয়ার'।

ঝামেলাও আছে নামের সঙ্গে। বেলজিয়ামের ২ খেলোয়াড়ের নাম ইডেন হ্যাজার্ড ও মরগ্যান হ্যাজার্ড। কানাডার কোচের নাম জন হার্ডম্যান আর ডিফেন্ডারের নাম জোয়েল ওয়াটারম্যান। খেলোয়াড়ের নাম আছে 'বাবা', আছে 'সং' (কোচ), আছে (হং) 'চুল' কিংবা দাঁড়ি। স্পেনের এক খেলোয়াড়ের নাম 'বালদে'।

নামে কী আসে যায়? খেলাটাই আসল। সন হিউয়াং মিনের বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে, 'আমি ঠিক ততদিন পর্যন্ত ফুটবল খেলতে চাই, যতদিন না আমার পুত্র আমাকে বলে, তুমি আর দৌড়াতে পারবে না। তুমি মৃত।' দামি একটা কথা। রেসের ঘোড়া যেদিন থেকে আর রেসে উঠতে না পারে, সেদিনই নাকি তার মৃত্যু হয়। নামি কোনো খেলোয়াড়কে কোচ বা ফেডারেশনের দায়িত্ব এই কারণেই দেওয়া হয় যে তার অভিজ্ঞতা নতুন দল গড়ায় কাজে লাগাতে পারেন। কিন্তু অভিজ্ঞতা যদি কাজে না লাগে? খেলোয়াড়দের বিচিত্র নামের মতো 'সালাউদ্দিন' বা 'পাপন' এখন কোন ধরনের নাম তার বিচারের দায়িত্ব পাঠকদের ওপরই ছেড়ে দিলাম। ক্রিকেট বা ফুটবলের ব্যর্থতার পর আমরা নিয়মিত অজুহাতের গল্প শুনি।

একজন খ্যাতিমান কোচ পেপ গার্দিওয়ালার মতে, 'ফুটবলে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জিনিস হচ্ছে অজুহাত। তোমার কাছে অজুহাত আছে মানেই তুমি থমকে গিয়েছো, আর সামনে এগোতে পারছো না।' বাংলাদেশের ফুটবল কী থমকে নেই? আর অজুহাতের কথা যখন এলো, তখন রাশিয়ানদের নিয়ে কৌতুকটাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া যেতে পারে। রাশিয়া খেলতে নেমেছে। কিন্তু চমৎকার আবহাওয়া, আদর্শ মাঠ, চারকোনা গোলবার, গোলাকৃতি বল কিংবা রেফারি সবকিছু রাশিয়ার বিপক্ষে। রেফারিকে গর্দভ আর প্রতিপক্ষের গোলবারকে অনেক ছোট মনে হচ্ছে। দল প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময় পায়নি, আর খেলার সময়সূচি রাশিয়ার জন্য অনুকূল নয়। তবুও রাশিয়া প্রতিপক্ষের চেয়ে মাত্র এক গোল কম দিয়েছে।

মানুষ কী ফুটবলের সবটা মনে রাখে? ফুটবল এমন একটা খেলা, যারা গোল দেয় মানুষ সেই স্ট্রাইকারদেরই বেশি মনে রাখে। পেলে কিংবা ম্যারাডোনা, একালের লিওনেল মেসি কিংবা নেইমারকে মনে রাখার কারণও এটাই। কিন্তু যারা বল ঠেকায়, সেই গোলকিপার বা ডিফেন্ডারদের মানুষ বেশি মনে রাখে না। ফুটবল গোল দেখার ছন্দবদ্ধ এক নান্দনিক খেলা, যার জয়-পরাজয়ের হিসেব হয় গোলের ব্যবধানে। তবে গোল বা খেলার বাইরের কিছু জিনিসও মনে রাখে মানুষ।

২০০৬ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে পেনাল্টি থেকে গোল করেছিলেন ফ্রান্সের জিনেদিন জিদান। সেই গোল পরিশোধ করেন মাত্তারাজি। এরপর খেলার অতিরিক্ত সময়ে ইতালিয়ান ডিফেন্ডার মাত্তারাজি জিদানের মা-বোন তুলে গালি দিলে সেটা সহ্য করতে পারেননি জিদান। মাত্তারাজির বুক বরাবর 'ঢুস' মারার পর মাত্তারাজি মাটিতে লুটিয়ে পরলে রেফারি জিদানকে লালকার্ড দেখান। সেবার টাইব্রেকারে ইতালি চ্যাম্পিয়ন হলে জিদান এক রকম ভিলেনে পরিণত হন।

কাতার বিশ্বকাপে লালকার্ড পেয়েও নায়কে পরিণত হন ক্যামেরুনের ভিনসেন্ট আবু বকর। তাকে নিয়ে কৌতুক ছড়িয়েছে এমন, আচ্ছা গোল দেওয়ার পরেও আবু বকরকে লালকার্ড দেখানো হলো কেন? উত্তর হচ্ছে, গোল দেওয়ার কারণে না, জার্সি খোলার কারণে তাকে লালকার্ড দেখানো হয়েছে। এ ব্যাপারেও মজাদার কথা ছড়িয়েছে। কাতারের মানুষ মোবাইলে বা টিভিতে কাপড় খোলা দেখতে পছন্দ করে, মাঠে না।

কাতার বিশ্বকাপে প্রথম পর্বের খেলায় ব্রাজিল হেরেছে ক্যামেরুনের সঙ্গে আর আর্জেন্টিনা হেরেছিল সৌদি আরবের কাছে। তো হতাশ এক ফ্যানকে জিজ্ঞাসা করা হলো, কেমন দেখলেন আর্জেন্টিনার খেলা? হতাশ ফ্যানের উত্তর, লিও টলস্টয়ের মতো। 'কী বলেন? লিও টলস্টয় তো লেখালেখি করেন, খেলাধুলা করেন না।' এর জবাবে হতাশ ফ্যান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, আর্জেন্টিনার খেলা দেখেও তাই মনে হয়েছে। এই কৌতুক নাকি বানিয়েছিল ব্রাজিলের সমর্থকরা। তাই যারা আর্জেন্টিনার সমর্থক তারাও এই কৌতুকটা ব্রাজিলের নামে চালাতে পারেন। জার্মানির কাছে ৭ গোল খাওয়ার পর থেকে যেন সেভেন আপ শব্দটা ব্রাজিলের জন্য, আর সৌদি আরবের কাছে হেরে যাওয়ার পর যেন খেজুর শব্দটা শুধুই আর্জেন্টিনার।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

কথায় আছে, 'শুধু মুজিব কোট পরলেই প্রকৃত মুজিব সৈনিক হওয়া যায় না।' তেমনি ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার জার্সি পরলে কিংবা বিজয়ের পর রাস্তায় নেমে মিছিল করলেই হৃদয়বান সমর্থক হওয়া যাবে এমন কোনো স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম নেই। সমালোচনা বা সমর্থনের নামে এমন কিছু করা উচিত না, যাতে কেউ কষ্ট পায়। ম্যারাডোনা কিংবদন্তি পেলেকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করলে তিনি হাসতেন। ম্যারাডোনার মৃত্যুর পরে শরীরে ঘাতক রোগ নিয়েও পেলে গিয়েছিলেন ম্যারাডোনার সমাধিতে। পেলে নিজেও এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। কোটি মানুষের ভালোবাসা পাওয়া পেলে অনেক সময় বলতেন, 'মানুষ মূলত একা, আমিও।' জানি না ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো সে কারণেই বলেছেন কি না, 'ফুটবলে আমার খুব বেশি বন্ধু নেই। খুব বেশি বিশ্বাস করতে পারি এমন মানুষও আমার আশেপাশে খুব কম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমি খুব একা।'

যে মা হতদরিদ্র হওয়ার পরেও ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর ফুটবল স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন, রোনাল্ডো সেই মাকে নিয়েই এক বাসাতে থাকেন। ফুটবল ও ব্যক্তিজীবনের এটা এক অপার্থিব সৌন্দর্য। বাইসাইকেল কিকের মাধ্যমে গোল দিয়ে আলোচনায় আসা ব্রাজিলের রিচার্লিসনের বাবা-মা যেদিন আলাদা হয়ে যান, সেদিন শিশু রিচার্লিসন মায়ের সঙ্গে রওয়ানা হয়েও দৌড়ে চলে আসেন বাবার কাছে। বাবার কাছে তিনি ফুটবল চেয়েছিলেন এবং তার বাবা সেটা কিনেও দিয়েছিলেন।

ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর মা কিংবা রিচার্লিসনের বাবার চেয়ে বহুগুণ বড়লোক ও ক্ষমতাশালী আমাদের সালাউদ্দিন বা পাপনরা। তারা কী ফুটবল বা ক্রিকেট স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য এমন বাবা-মা হতে চেয়েছেন কখনো?

Comments