‘আব্দুল জব্বারের গানে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন’
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী হিসেবে অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কণ্ঠশিল্পী আব্দুল জব্বার। আজ তার প্রয়াণ দিবস। ২০১৭ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন বরেণ্য এই কণ্ঠশিল্পী।
আব্দুল জব্বারের সহযোদ্ধা কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আব্দুল জব্বারের দরদী কণ্ঠ তার অগনিত শ্রোতাদের পাশাপাশি আমাকেও মোহিত করে। দুজনে প্রায় একই সময়ে গান গাইতে শুরু করি। বয়সে কিছুটা বড় হলেও সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো। বাংলাদেশ বেতারে আমরা একসঙ্গে অনেক আড্ডা দিয়েছি। দিনরাত পার করেছি আড্ডা গানে। ওর কণ্ঠে আলাদা একটা বিষয় ছিল।'
তিনি আরও বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা সংগীত, নৃত্য, নাটক শাখার সব শিল্পীদের নিয়ে 'শিল্পী সংগ্রাম পরিষদ' গঠন করেছিলাম। সেখান একসঙ্গে গান করেছি। স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে তার কণ্ঠের গান শুনেছি সেই সময়ে। দেশের গানের পাশাপাশি ভালোবাসার গানগুলো তার কণ্ঠে আলাদাভাবে মায়াময়।'
আব্দুল জব্বার ১৯৩৮ সালের ৭ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৫৬ সালে তিনি মেট্রিক পাশ করেন। ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান বেতারে গান গাওয়া শুরু করেন। চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম গান গেয়েছিলেন ১৯৬২ সালে। ১৯৬৪ সাল থেকে তিনি বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিলেন।
১৯৬৪ সালে জহির রায়হান পরিচালিত 'সংগম' ছবির গানে কণ্ঠ দেন তিনি। ১৯৬৮ সালে 'এতটুকু আশা' ছবিতে সত্য সাহার সুরে তার গাওয়া 'তুমি কি দেখেছ কভু' গানটি ভীষণ জনপ্রিয়তা লাভ করে। সে বছর 'পীচ ঢালা পথ' ছবিতে রবীন ঘোষের সুরে 'পীচ ঢালা এই পথটারে ভালবেসেছি' ও 'ঢেউয়ের পর ঢেউ' ছবিতে রাজা হোসেন খানের সুরে 'সুচরিতা যেওনাকো, আর কিছুক্ষণ থাকো' এ দুটি গান তাকে এনে দেয় আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা।
১৯৭৮ সালে 'সারেং বৌ' ছবিতে আলম খানের সুরে তার গাওয়া 'ও রে নীল দরিয়া' গানটিও ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়তা পায়। চলতি বছর (২০১৭) প্রকাশিত হয় 'কোথায় আমার নীল দরিয়া' শিরোনামে তার প্রথম মৌলিক অ্যালবাম।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত 'সালাম সালাম হাজার সালাম', 'জয় বাংলা বাংলার জয়'-সহ অনেক দেশাত্মবোধক গানের গায়ক হিসেবে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। তার গাওয়া 'তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়', 'সালাম সালাম হাজার সালাম' এবং 'জয় বাংলা বাংলার জয়' গান ৩টি ২০০৬ সালে বিবিসি বাংলার আয়োজনে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাংলা ২০ গানের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ও প্রেরণা যোগাতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে অনেক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। তার গানে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধের সময় ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়য়ের সঙ্গে মুম্বাইয়ের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে কাজ করেন আব্দুল জব্বার।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা। এরমধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক (১৯৭৩), একুশে পদক (১৯৮০), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৬), বাচসাস পুরস্কার (২০০৩), সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস-আজীবন সম্মাননা (২০১১) ও জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার।
Comments