আরও একটি বিষাদময় জন্মদিন

‘আসলে সন্তান সবকিছুর উপরে। এখন গাইতে গেলে গানের আবেগ আসে না। আবার আবেগ এলে চোখে ভিজে আসে। যেটা একজন বাবা হিসেবে খুব কষ্টের। যে অবস্থায় দেড় বছর ধরে আছি, এটা মেনে নেওয়া ভীষণ কষ্টের।’
কুমার বিশ্বজিৎ ও তার ছেলে নিবিড় কুমার। ছবি: সংগৃহীত

আরও একটি বিষাদময় জন্মদিন কাটছে কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের। শিল্পীর একমাত্র সন্তান নিবিড় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে এখনো হাসপাতালে ভর্তি। নিবিড়ের সুস্থ জীবনে ফিরে আসার অপেক্ষায় দিন কাটছে শ্রোতানন্দিত এই কণ্ঠশিল্পীর।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, 'দিনরাত অপেক্ষায় আছি নিবিড় কখন কথা বলবে! অনেকখানি ভালো হয়ে উঠেছে সে। সবাই নিবিড়ের জন্য দোয়া করবেন। এতকিছুর মধ্যে কিছু দিন আগে ঢাকায় গিয়ে গানে ফিরতে চেয়েছিলাম, কেমন লাগে গানে ফিরে সেটা বোঝার জন্য। কিন্তু এটা আমার কাছে ভালো থাকার বৃথা চেষ্টা মনে হচ্ছিল।'

'আসলে সন্তান সবকিছুর উপরে। এখন গাইতে গেলে গানের আবেগ আসে না। আবার আবেগ এলে চোখে ভিজে আসে। যেটা একজন বাবা হিসেবে খুব কষ্টের। যে অবস্থায় দেড় বছর ধরে আছি, এটা মেনে নেওয়া ভীষণ কষ্টের,' বলেন তিনি।

১৯৬৩ সালের ১ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে জন্মগ্রহণ করেন কুমার বিশ্বজিৎ। ছোটবেলা থেকেই তার গানের প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। সেই আগ্রহটাকে স্বপ্ন-সাধনা বানিয়ে সংগীত জগতে খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন।

১৯৭৭ সালে একটি রেডিও অনুষ্ঠানে প্রথম গান গাওয়ার মাধ্যমে সুরের ভুবনে যাত্রা শুরু করেন। এরপর 'রিদম ৭৭' নামে একটি ব্যান্ডে দুই বছর গান করেন। ১৯৭৯ সালে 'ফিলিংস' নামে আরেকটি ব্যান্ড গঠন করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে কুমার বিশ্বজিৎ প্রথম গান করেছিলেন ১৯৮০ সালের দিকে। তবে 'শিউলিমালা' নামের একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে ১৯৮২ সালে 'তোরে পুতুলের মতো করে' গানটি দিয়ে নাম ছড়িয়ে পড়ে। এই গানটি ছিল তার সংগীত জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। তবে শ্রোতাদের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে 'যেখানে সীমান্ত তোমার' গানটি।

কুমার বিশ্বজিৎ প্রথম প্লেব্যাক করেন ১৯৮২ সালে আলাউদ্দিন আলীর সুর ও সংগীতে 'ইন্সপেক্টর' সিনেমায়। তিনি দুইবার শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। ৩০টি একক অ্যালবাম, অসংখ্য মিশ্র অ্যালবাম ও সিনেমায় গানে প্লেব্যাক করেছেন।

কুমার বিশ্বজিতের শ্রোতাপ্রিয় ১০টি গান হলো- 'তুমি রোজ বিকেলে আমার বাগানে', 'যেখানে সীমান্ত তোমার', 'তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে', 'ও ডাক্তার', 'একটা চাঁদ ছাড়া রাত', 'চন্দনা গো রাগ করোনা', 'বহুদিন পর হয়েছি মুখোমুখি তোমার', 'কান্নার রোল উঠবে একদিন', 'তুমি যদি বলো পদ্মা মেঘনা, চতুর্দোলায় চড়ে দেখো'।

চিরসবুজ এই কণ্ঠশিল্পী আশির দশক থেকে এখন অব্দি গান করে যাচ্ছেন। তার গাওয়া অসংখ্য গান বাঙালির প্রাণের অনুষঙ্গ। তবে ২০২৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কানাডায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তার সন্তান নিবিড়। এরপর থেকেই নিবিড়ের পাশে দিনরাত হাসপাতালে কাটছে কুমার বিশ্বজিতের।

Comments