রেখা’র জীবনরেখা

রেখা। ছবি: সংগৃহীত

আজ ১০ অক্টোবর বলিউড অভিনেত্রী রেখার জন্মদিন। ৬৮ বছরে পা দেওয়া এই অভিনেত্রী কখনোই মার্কি কুইন হতে চাননি। তার স্বপ্ন ছিল এয়ার হোস্টেস হওয়া এবং বিশ্বকে ঘুরে দেখা। জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত রেখা খুব কমই সাক্ষাত্কার দেন। একবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, তার অভিনয়ের ব্যাপারে মায়ের আগ্রহের কথা।

১৯৮৬ সালে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, 'আমার মা চেয়েছিলেন আমি যেন চলচ্চিত্রে কাজ করি। কিন্তু কমপক্ষে ছয়-সাত বছর ধরে আমি যা করেছি তা আমার পছন্দ হয়নি। আমাকে শুটিংয়ের জন্য টেনে নিয়ে যাওয়া হতো, আমি ডাবল শিফট করতাম, যা আমার একেবারেই পছন্দ ছিল না।'

ছোটবেলাতেই পর্দায় প্রথম উপস্থিতি তার। পরে মাত্র ১৫ বছর বয়সে একজন পূর্ণ অভিনেত্রী হয়ে ওঠেন। সেই সাক্ষাৎকারে রেখা বলেছিলেন, 'আমি কখনই অভিনেত্রী হতে চাইনি। আপনি যদি বেশিরভাগ তারকাকে জিজ্ঞাসা করেন- তারা বলবে, তাদের স্বপ্নই ছিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যোগ দেওয়া, কিন্তু আমার নয়। আমি কখনই অভিনেত্রী হতে চাইনি, আমাকে জোর করে অভিনেত্রী বানানো হয়।'

চলচ্চিত্র জগতে তার প্রবেশ সহজ ছিল না। লেখক ও সাংবাদিক ইয়াসির উসমান ২০১৬ সালে রেখার জীবনী 'রেখা দ্য আনটোল্ড স্টোরি' লিখেছিলেন। যেখানে তার জীবন, কর্মজীবন এবং ব্যক্তিগত জীবনের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়।

রেখা। ছবি: সংগৃহীত

রেখা কীভাবে অপ্রচলিত ভূমিকায় অভিনয় করেন, যা এখন নারীকেন্দ্রিক হিসেবে প্রশংসিত হয়। এ বিষয়ে ইয়াসির উসমান এক সাক্ষাৎকারে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, 'এটি প্রায় এক দশক ধরে তার কঠোর পরিশ্রমের ফল ছিল। যা তাকে এই কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলোতে অভিনয়ের সুযোগ করে দিয়েছিল। এর পেছনে একটা কারণ আছে- যখনই আমরা নারীকেন্দ্রীক চরিত্রের কথা বলি তখন অভিনেত্রী ফোকাসে থাকে। তাই সেই ভূমিকার জন্য তারকা হিসেবে সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে।'

১৯৭০-এর দশকে তিনি যে ১০০ সিনেমা করেছিলেন তা হয়তো অনেকের মনে নেই, কারণ তার সেসব সিনেমা খুব কম সফল হয়েছিল। তখন তিনি 'বি' গ্রেডের চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন। তবে ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে তিনি তারকা স্ট্যাটাসে পৌঁছেছিলেন। তিনি এ ধরনের স্টারডমে পৌঁছানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন এবং প্রযোজক এবং পরিচালকরা তার খ্যাতির জন্য তাকে নিতে বাধ্য হন।

রেখা সম্ভবত বলিউডের প্রথম অভিনেত্রী যিনি 'নারীকেন্দ্রিক' চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তিনি ১৯৬৯ সালে ক্যারিয়ার শুরু করেন এবং ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে বড় তারকা হয়ে উঠেছিলেন, তাই এটি তার প্রায় ১০ বছরের লড়াই ছিল। তার স্বামী মুকেশ আগরওয়ালের আত্মহত্যার পর, তিনি খুন ভারি মাংয়ে অভিনয় করেন। এটি সেই বছরের বিশাল হিট ছিল। রেখা ছাড়া আর কারো পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এরপর তিনি কেসি বোকাদিয়ার প্রতিশোধমূলক ফুল বানে আঙ্গার করে, যা আবারও বাণিজ্যিকভাবে হিট চলচ্চিত্র ছিল।

রেখা। ছবি: সংগৃহীত

রেখা শুধু একজন চলচ্চিত্র তারকা ছিলেন না, তিনি একজন ফ্যাশন আইকনও ছিলেন। ফ্যাশন ডিজাইনার রিক রয় বলেন, '(তার পছন্দের) শাড়িগুলো বাজারে অনেক পরে এসেছিল। কিন্তু, তিনি সেগুলো আগেই ফ্যাশনে আনেন, সেই কারণেই রেখা এত আইকনিক। অন্যরা যখন অন্য কিছু করছিল, তখন আমি মনে করি রেখা নতুন কিছু নিয়ে আসবেই। আমি মনে করি আমার প্রজন্মের সবাই এটা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছে। রেখা কেবল ক্যামেরার সামনে একটি সুন্দর মুখ ছিলেন না, ক্যামেরার বাইরে তার উপস্থিতি সাহসী ছিল এবং তিনি বিভিন্ন ম্যাগাজিন স্প্রেডের মাধ্যমেও তার প্রকাশ করেন।'

কিন্তু রেখা কখন রিক্লুস হয়ে গেলেন? এ বিষয়ে ইয়াসির বিশ্বাস করেন, আগরওয়ালের আত্মহত্যার পরে এই পরিবর্তন আসে। তাকে নিয়ে সর্বদা গসিপ এবং জল্পনা ছড়াতো হতো। বিশেষ করে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তার সম্পর্ক এবং স্বামী মুকেশ আগরওয়ালের মৃত্যু নিয়ে প্রায়ই লেখা হত। তবে, রেখা তার সম্পর্কের বিষয়ে খোলামেলা ছিলেন এবং প্রায়ই সাক্ষাত্কারে এটি নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতেন। তবে, মুকেশের মৃত্যুর পরে তার মধ্যে কিছু পরিবর্তন হয়েছিল।

যদি তার সাক্ষাৎকারগুলো বিশ্লেষণ করা হয়- তাহলে দেখা যাবে ১৯৮৪-১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছিলেন। তিনি নিজেই সাক্ষাত্কারে তাদের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতেন বা কখনো কখনো ইঙ্গিত করেছেন অথবা এমনকি নামও নিয়েছিলেন। যদি সিলসিলা না থাকত তাহলে গল্পটিতেও কোনো ভিজ্যুয়াল থাকত না। কিন্তু, অন্য যে কোনো কিছুর চেয়ে বেশি মুকেশ আগরওয়ালের পর্বটি তার মধ্যে পরিবর্তন এনেছিল এবং তিনি মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেন।

Comments

The Daily Star  | English
Kudos for consensus in some vital areas

Kudos for consensus in some vital areas

If our political culture is to change, the functioning of our political parties must change dramatically.

2h ago