পরতে পরতে নারী বিদ্বেষ, তীব্র সমালোচনায় রণবীরের ‘অ্যানিমেল’

'অ্যানিমেল' সিনেমার দৃশ্যে রণবীর কাপুর
'অ্যানিমেল' সিনেমার দৃশ্যে রণবীর কাপুর ও রাশমিকা মান্দানা। ছবি: সংগৃহীত

'যেসব পরিচালক প্রতিভাবান নন, তারা সিনেমা ব্যবসাসফল করার জন্য হাতিয়ার হিসেবে সহিংসতা ও যৌনতা ব্যবহার করেন।'

রণবীর কাপুর অভিনীত 'অ্যানিমেল' সিনেমা নিয়ে বির্তকের মাঝেই আমির খানের পুরনো এই মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

অনেক আগে এক সাক্ষাৎকারে আমির খান বলেছিলেন, 'এমন কিছু আবেগ আছে যা দিয়ে দর্শকদের উস্কে দেওয়া খুব সহজ। এই আবেগগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে সহিংসতা এবং আরেকটি হলো যৌনতা। যে পরিচালকরা গল্প তৈরিতে, আবেগ দেখানোতে এবং প্লট তৈরিতে তেমন প্রতিভাবান নন, তারা তাদের সিনেমা সফল করার জন্য সহিংসতা এবং যৌনতার ওপর অনেক বেশি নির্ভর করেন। তারা মনে করেন, ছবিতে অনেক সহিংসতা ও যৌনতা দেখালে তাদের ছবিটি সফল হবে। আমি মনে করি এটা খুবই ভুল চিন্তা।'

'কখনো কখনো এসব দেখিয়ে সিনেমা সাফল্য পেলেও এগুলো সমাজের খুব ক্ষতি করে,' বলেন তিনি।

কবির সিং
'কবির সিং' সিনেমার পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত

২০১৯ সালে বক্সঅফিসে বাজিমাত করলেও তীব্র সমালোচনায় পড়েছিল পরিচালক সন্দীপ রেড্ডি ভাংগার সিনেমা 'কবির সিং'। শহীদ কাপুর ও কিয়ারা আদভানি অভিনীত বিতর্কিত এই সিনেমা ৩০০ কোটি রুপির বেশি আয় করলেও সিনেমার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছিল। এই সিনেমায় নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও 'টক্সিক ম্যাসকিউলিনিটি' নিয়েও সমালোচকেরা প্রশ্ন তুলেছিলেন।

'অ্যানিমেল' সিনেমা দিয়ে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির তকমা কাটিয়ে উঠবেন এমনটা আশা থাকলেও মুক্তির পর একই রকমের বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন নির্মাতা সন্দীপ রেড্ডি। গত ১ ডিসেম্বর মুক্তির পর বক্স অফিস থেকে ২৩০ কোটি রুপি আয় করেছে 'অ্যানিমেল'।

অনেক দর্শক-সমালোচক বলছেন, 'অ্যানিমেল' এ রণবীর কাপুর তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা অভিনয় করেছেন। তবে সিনেমার গল্প ও দর্শনের কারণে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান এর প্রতিবেদনে সিনেমাটিকে ৫ এর মধ্যে ১ রেটিং দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, 'কবির সিং'য়ের চাইতে 'অ্যানিমেল' সিনেমায় আরও বেশি 'দুষ্ট' চরিত্রের পুরুষকে পর্দায় 'নায়ক' হিসেবে দেখানো হয়েছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার ক্রিটিক রেটিংয়ে ৫ এর মধ্যে আড়াই পেয়েছে অ্যানিমেল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টার এই 'ক্লান্তিকর' সিনেমায় চরম রক্তপাত ও নির্লজ্জভাবে নারী বিদ্বেষ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্রেমিকা গীতাঞ্জলির (রাশ্মিকা মান্দানা) সঙ্গে বিজয়ের (রণবীর কাপুর) রসায়ন ছিল টক্সিক ম্যাসকুলিনিটি পরিপূর্ণ, সিনেমায় নানাভাবে নারীবিদ্বেষী মনোভাবকে মহিমান্বিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। নারীদের পিরিয়ড নিয়ে সিনেমায় অযাচিত মন্তব্য করা হয়েছে এবং নারী অধিকারকে হাস্যরসাত্মক হিসেবে দেখানো হয়েছে।

'অ্যানিমেল' সিনেমার দৃশ্যে রণবীর কাপুর
'অ্যানিমেল' সিনেমার দৃশ্যে রণবীর কাপুর। ছবি: সংগৃহীত

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সিনেমা শুধু ক্লান্তিকর নয়, মানবদেহের সকল ইন্দ্রিয়ের ওপর এক ধরনের আক্রমণ বা টর্চার। এটি এমন একটি সিনেমা যা আমাদের বিশ্বাস করায় যে একটি প্রেমময় পুত্রের পক্ষে নির্বিকার হওয়া কোনো বড় বিষয় নয়। বাবা ও দুই বোনের মঙ্গলের জন্য সহিংস আচরণ করে বেড়ানোকে পর্দায় মহৎভাবে দেখানো হয়েছে।

টাইম অব ইন্ডিয়ায় এক সমালোচক বলেছেন, রণবীর কাপুরের দুর্দান্ত অভিনয়ের কারণে তিনি হোয়াকিন ফিনিক্সের 'জোকার' এর মতো কোনো কিংবদন্তী চরিত্র হয়ে উঠতে পারতেন। কিন্তু 'অ্যানিমেল' সিনেমার গল্প রীতিমতো অনর্থকই ঠেকে। এই পুরো সিনেমার গল্প শুধু বাবা এবং তার ছেলের মধ্যে একটি কথোপকথন হতে পারত।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে সিনেমাটিকে ৫ এ ১ রেটিং দেওয়া হয়েছে।

পর্দায় সহিংসতা দেখানো যাবে কি যাবে না, সিনেমার পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির দায় শুধু নির্মাতার কি না এমন আলোচনার মধ্যে আমির খানকেই স্মরণ করছেন দর্শকরা।  আমির খান বলেছিলেন, 'যারা সিনেমায় আছেন তারা নৈতিকভাবে এজন্য কিছুটা হলেও দায়ী। যে দর্শকরা, তরুণরা আমাদের দেখছেন, তাদের মনে এটা অবশ্যই প্রভাব ফেলে।'

আমির খান
আমির খান। ছবি: সংগৃহীত

'আমরা যখন একটি সিনেমা করি তখন আমাদের এটি মাথায় রাখা উচিত যেন এমন কিছু না দেখানো হয় যেটা নতুন প্রজন্মের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। আমি বলছি না যে চলচ্চিত্রে কোনো সহিংসতা থাকা উচিত নয়, সেটা দেখানোর জন্য কিছু উপায় আছে। চলচ্চিত্রে কতটুকু সহিংসতা দেখানো হবে তা নির্ভর করবে কীভাবে দেখানো হচ্ছে, গল্পের প্রেক্ষাপট কী সেটার ওপর,'বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Prof Yunus in Time magazine's 100 list 2025

Time’s List: Yunus among 100 most influential people

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus has been named among TIME magazine’s 100 Most Influential People of 2025.

4h ago