ফুলের বাগান রেখে বাবা চলে গেলেন বহুদূরে: চঞ্চল চৌধুরী

চঞ্চল চৌধুরী
চঞ্চল চৌধুরী। স্টার ফাইল ছবি

নন্দিত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী গত কয়েকদিন ধরে পাবনা জেলার কামারহাট গ্রামের নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। সম্প্রতি বাবাকে হারিয়েছেন ২ বাংলার জনপ্রিয় এই শিল্পী। বাবার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান উপলক্ষে তিনি বাড়িতে আছেন।

গ্রামের বাড়িতে বসে দ্য ডেইলি স্টারের রিপোর্টারের কাছে বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন চঞ্চল চৌধুরী।

চঞ্চল চৌধুরী বলেন, কিছুদিন আগেও বুঝিনি বাবার অভাব। কখনো মনেও হয়নি এসব কথা। কিন্তু এখন খুব করে বুঝতে পারছি বাবার অভাব। শূন্যতা টের পাচ্ছি। বাবাহীন বাড়ি শূন্যতায় ভরা। বাবাকে ছাড়া খা খা করছে বাড়িটি। এই কষ্টের কথা যারা বাবা হারিয়েছেন, তাদের ছাড়া কেউ বুঝবে না।

বাবার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আগে বাড়িতে এলে বাবার কণ্ঠ শুনতে পেতাম। বাবা নাম ধরে ডাকতেন। সেই আদর ও ভালোবাসায় ভরা ডাক আর শুনতে পাই না। বাবা শূন্যে মিলিয়ে গেছেন। আর কোনোদিনও বাবাকে পাব না। আর কখনো ডাকবেন না, চঞ্চল খেয়েছিস? কী করছিস? কেমন আছিস? কয়েকদিন ধরে বাড়িতে আছি। ভেতরের শূন্যতা কেউ জানে না। আমি জানি। দিন যায়, রাত আসে, কিন্তু বাবাকে দেখি না। বাবা আর আসবে না। অথচ বাবা ছিলেন। প্রতিটি মুহূর্তে বাবাকে মিস করছি। বাবাকে মনে পড়ছে সবসময়। আগামী দিনগুলাতেও মনে পড়বে।

আবেগ ভরা কণ্ঠে এই অভিনেতা বলেন, বাড়ি আছে, বাড়ির পাশে গাছপালা আছে, পুকুর আছে, চেয়ার টেবিল আছে, সবকিছু আছে। শুধু বাবা নেই। এই কষ্ট, এই না থাকা, এই দুঃখবোধ তাড়িয়ে বেড়াবে আমাকে জনমভর।

চঞ্চল চৌধুরীর বাবা ছিলেন একজন শিক্ষক। এ বিষয়ে তিনি বলেন, বাবা ছিলেন আদর্শ স্কুল শিক্ষক। খুব গম্ভীর ধরণের শিক্ষক ছিলেন। খুব ভয় পেতাম। ছাত্ররা তো ভয় পেতই। আমিও পেতাম। তার কাছ থেকে শেখার ছিল অনেক কিছু। হাজার হাজার ছাত্র ছিল তার। মানুষকে জ্ঞানদান করেছেন সারাজীবন। ছাত্র পড়ানোর মধ্যে বাবা অন্য একরকম আনন্দ খুঁজে পেতেন। মানুষ আলোকিত হচ্ছে এটা দেখে বাবার ভালো লাগত। বাবা ছিল আদর্শ মানুষ। একজন নীতিবান ও আদর্শ শিক্ষক হিসেবে বাবার নামডাক ছিল। সৎ ছিলেন তিনি। তার সততা আমাদের ভাইবোনদের মাঝেও বিরাজমান। আমাদের সব ভাইবোনদের তিনি পড়ালেখা করিয়েছেন। এটা তার বড় প্রাপ্তি।

নিজের ক্যারিয়ার জীবন নিয়ে বাবার মতামত বিষয়ে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, আমি অভিনয় করি এটা বাবার ভালো লাগত। মানুষ যখন বলতো আমার অভিনয়ের কথা, বাবার মুখটা হাসিতে ভরে উঠত। বাবার মনটা ছিল শিশুর মতো সরল। একটা সহজ সরল জীবন তিনি কাটিয়ে গেছেন। বাবাকে নিয়ে আমি গর্ব করি। আমার নাম ছড়িয়ে যাবার পর কত দূরান্ত থেকে বাবার কাছে মানুষজন আসতেন। কখনোই রাগ করতেন না। বরং খুশি হতেন।

বাবা ৯০ বছর বেঁচে ছিলেন। ৩৪ বছর শিক্ষকতা করেছেন। তার মুখ যেন সারাজীবন উজ্জ্বল রাখতে পারি। তার নাম রাখতে পারি। বাবা ছিলেন সোনার মানুষ। সোনার সংসার ফেলে হারিয়ে গেলেন বাবা। আমাদের একটা ফুলের বাগান ছিল। সেই বাগানের প্রধান মানুষ বাবা। ফুলের বাগান রেখে বাবা চলে গেলেন বহুদূরে, তিনি যোগ করেন।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

3h ago