মঙ্গল শোভাযাত্রা বাঙালির, আমাদের সবার: তারিক আনাম খান

খ্যাতিমান অভিনয়শিল্পী তারিক আনাম খান। নাট্যকেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। নাটক, সিনেমা ও ওটিটি– তিন প্লাটফর্মেই এখনো সরব তিনি। সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে পহেলা বৈশাখ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে কথা বলেন তারিক আনাম খান।
তারিক আনাম খান, নাট্যকেন্দ্র, মঙ্গল শোভাযাত্রা, বাংলা নববর্ষ, পহেলা বৈশাখ,
তারিক আনাম খান। ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ

খ্যাতিমান অভিনয়শিল্পী তারিক আনাম খান। নাট্যকেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। নাটক, সিনেমা ও ওটিটি– তিন প্লাটফর্মেই এখনো সরব তিনি। সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে পহেলা বৈশাখ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে কথা বলেন তারিক আনাম খান।

তিনি বলেন, 'ছেলেবেলায় পহেলা বৈশাখ মানেই চোখে ভাসে হালখাতার কথা। এই দিনটিতে হালখাতা হতো। আমরা তখন সাতক্ষীরায় নিজেদের বাড়িতে থাকি। আব্বার সঙ্গে হালখাতা খেতে যেতাম। মিষ্টি ও নিমকি খেতে দিত। বাংলা বছরের প্রথম দিনে আব্বার সঙ্গে যাব ও মিষ্টি খাব, এটা ছিল বেশ আনন্দের। খুব বেশি বাকি থাকত না। সামান্যই বাকি থাকত। কিন্তু নিমন্ত্রণ পেয়ে আব্বাও খুশি হতেন। টাকা দিচ্ছি আর মিষ্টি খাচ্ছি, ছেলেবেলার এই স্মৃতিটা আমার কাছে আজও মধুর স্মৃতি হয়ে আছে।'

'ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলাম। বাঙালির চেতনা ফিরে এলো। গান, কবিতা শুরু হলো একটু একটু করে। রবীন্দ্রসংগীতের কথা বলতেই হবে। মনে পড়ে, বড় গাছের ডাল কেটে চৌকির মতো বানিয়ে আমরা সদ্য তারুণ্যে পা দেওয়ারা এই দিনটিতে গান ও কবিতা পড়ার আয়োজন শুরু করি। এটা সম্ভবত ১৯৬৯ সালের কথা বলছি। আমার নিজ শহর সাতক্ষীরার ঘটনা,' বলেন তিনি।

'ওই সময় চৈত্র সংক্রান্তি ও চড়ক পূজা হত। সেসবও মনে পড়ে।'

তারিক আনাম খান বলেন, 'এক সময় ঢাকায় চলে আসি। এটা স্বাধীনতার পর। রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানে যাওয়া শুরু করি। সবার মাঝে এটা নিয়ে বেশ উৎসাহ ছিল। খুব সকালবেলা বের হয়ে যেতাম রমনা বটমূলের উদ্দেশে। রমনার বটমূলের পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে একবার অ্যারোমা চা-এর একটি স্টল করেছিলাম। প্যান্ডেলের মতো করে করা আর কী। আমাদের মনে হয়েছিল- বাঙালির বর্ষবরণের সঙ্গে যদি চা দেওয়া যায় তাহলে কেমন হয়? ওই ধারণা থেকে দেওয়া। সেজন্য রায়েরবাজার থেকে মাটির হাড়ি, পাতিলসহ অনেককিছু কেনা হয়েছিল।'

'এরপর আমি ও নিমা রহমান বিয়ের পর রমনার বটমূলে যেতে শুরু করি। আমাদের সন্তান যখন ছোট ছিল, সেই সময়েও তাকে নিয়ে আমাকে নিয়মিত গিয়েছি। এটা অব্যাহত আছে। বিশেষ দিনটিতে আমি সবসময় পাঞ্জাবি পরে যাই, নিমা শাড়ি পরে যায়। পুরোপুরি বাঙালি পোশাকই এই দিনের পোশাক, এটাই টানে সবসময়।'

'থিয়েটারের বন্ধুরা মিলেও যাওয়া শুরু করি একসময়। মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়াটাও ছিল বিশেষ। নাটক, গান, কবিতা এসব নিয়েই সময় কাটত। আর্ট কলেজে কী হচ্ছে সেসব খবরও নিতাম। ওখানেও বন্ধু জুটে যায়। তারপর সবাই মিলে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া। চারুকলা থেকে শাহবাগ পর্যন্ত মঙ্গল শোভাযাত্রা হত। সবসময় মনে হয়েছে, মঙ্গল শোভাযাত্রা বাঙালির, আমাদের সবার,' যোগ করেন তিনি।

'পহেলা বৈশাখ, মঙ্গল শোভাযাত্রা- এসবের সঙ্গে অন্য কিছু মেলানো ঠিক না। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে বাঙালি সংস্কৃতির জন্য। মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে যিনি আইনি নোটিশ দিয়েছেন, না বুঝে কাজটি করেছেন। ধর্ম ও দেশ আলাদা। খুব বাজে উদ্দেশ্য নিয়ে করেছেন। এটা ঠিক না। এটা মানার কোনো যুক্তি নেই।'

'পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে নিমা রহমান এক সময় বাসায় বড় একটি আয়োজন শুরু করেছিল। বেশ ক'বছর ধরে এটা চলছিল। বাসায় হরেক রকমের ভর্তা দিয়ে উৎসব উদযাপন। আলী যাকের ভাই আসতেন, আরও অনেকে আসতেন। ওই স্মৃতিটাও দারুণ ছিল।'

Comments