‘দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জনগণের আরও সম্পৃক্ততা জরুরি’

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সাধারণ মানুষের আরও বেশি সম্পৃক্ততার মাধ্যমে কাজ করা গেলে দুর্যোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। সোমবার খুলনায় সমাজসেবা অধিদপ্তর আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেছেন।
সোমবার খুলনায় সমাজসেবা অধিদপ্তর আয়োজিত সেমিনার। ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সাধারণ মানুষের আরও বেশি সম্পৃক্ততার মাধ্যমে কাজ করা গেলে দুর্যোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। সোমবার খুলনায় সমাজসেবা অধিদপ্তর আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেছেন।

তারা বলছেন, 'স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিকভাবে সক্ষম করাও জরুরি, বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা জরুরি। ইউনিয়ন পরিষদে দুর্যোগ ফান্ড তৈরি করা যেতে পারে, যা দুর্যোগের সময় ক্ষয়ক্ষতি নিরসনে তাৎক্ষণিক ব্যয় করা সম্ভব।'

জাতীয় অভিযোজন কর্মসূচি, বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা এবং বাংলাদেশ ডেল্টা প্লান নিয়ে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, 'ইউনিয়ন পরিষদের দুর্যোগ সম্পর্কিত স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলো শক্তিশালী করতে হবে। স্থানীয় সামাজিক সংগঠনগুলোকে দুর্যোগ ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সম্পৃক্ত করতে হবে।'

তাদের মতে, সাম্প্রতিক দুর্যোগের সময় দেখা গেছে যে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন না। সেখানে পর্যাপ্ত টয়লেট নাই, খাবার পানির ব্যবস্থা নাই। অনেক সময় আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদ বোধ করেন না স্থানীয়রা জনগণ।

তাদের দাবি, যেসব অঞ্চলে ভালো মানের আশ্রয়কেন্দ্র নাই সেখানে সার্বিক দিক বিবেচনা করে নতুন আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। সেসব আশ্রয়কেন্দ্রে যেন বয়স্ক, নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী সবার জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা করা হয় এবং পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার সুবিধা থাকে। সেইসঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

কারিতাস বাংলাদেশের সার্বিক সহযোগিতায় 'সমন্বিত দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস পদ্ধতির মাধ্যমে কমিউনিটির সক্ষমতা বৃদ্ধি' প্রকল্প এ সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে খুলনার দাকোপ উপজেলার লাউডোব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যুবরাজ শেখ বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের খবর পেলে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের আগে আমরাই সভা করেছি। আমাদের পকেটের টাকা খরচ করে মানুষকে সতর্ক করেছি। সবাইকে বুঝিয়ে সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে গেছি।'

তিনি আরও বলেন, 'কোথাও রাস্তা ভেঙে গেলে আমাদেরই মেরামত করতে হয়। কিন্তু প্রশাসনিক বিভিন্ন কারণে আমাদের বরাদ্দ দেওয়া হয় না। অধিকাংশ সময়ে পকেটের টাকাই খরচ করতে হয়।'

বানিশান্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুদেব কুমার রায় বলেন, 'আমাদের এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার আগে জলবায়ু পরিবর্তনের কথা মাথায় রাখা উচিত। পানি উন্নয়ন বোর্ড যখন আমাদের এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করে, তারা আমাদের মতামত নেয় না। নিচু বাঁধ তৈরি করে এবং তা জলোচ্ছ্বাসের সময়ে তলিয়ে যায়। তখন আমাদের টাকা খরচ করে তা উঁচু করতে হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানালে বলে, বরাদ্দ নেই।'

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু দাউদ খান বলেন, 'আমাদের ইউনিয়নটির চারদিকে নদী বেষ্টিত। একটি দ্বীপে আমরা বসবাস করি। সেখানে সাইক্লোন শেল্টার ভালো না। বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের উপরে ওঠার ব্যবস্থা নেই। জানালাগুলো ভাঙা, দেয়াল খসে পড়ছে, ভালো টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। ঝড়ের খবর এলেও, কেউ সাইক্লোন শেল্টারে যেতে চায় না। অব্যবস্থাপনার কারণেই এই দশা হয়।'

'ঝড় এলে আমরা মানুষকে নানাভাবে বুঝিয়ে সেখানে নিয়ে গেলেও, তাদের খাবার দিতে পারি না,' বলেন তিনি।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার সরকার। তিনি বলেন, 'উপকূলের ১৯টি জেলায় মাল্টিপারপাস সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের জন্য সরকার প্রকল্প নিয়েছে। ইতোমধ্যে নকশার কাজ করা হয়েছে। আশা করছি আগামী দুই বছরের মধ্যে তা বাস্তবায়ন হবে।'

সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন খুলনা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক খান মোতাহার হোসেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান অ্যান্ড রুরাল প্লানিং ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক কামরুল হাসান প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কারিতাস খুলনা অঞ্চলের পরিচালক দাউদ জীবন দাশ।

Comments

The Daily Star  | English

Electricity problem to improve in 10-15 days: PM

Prime Minister Sheikh Hasina today said more electricity will be added to the national grid within the next 10-15 days ending the ongoing power crisis.."We have been compelled to make load-shedding ....I can realise the sufferings of the people. We've been trying our best. Some 500 more me

1h ago