বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপরে তিস্তার পানি, অর্ধ লাখ মানুষ পানিবন্দি

তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে
লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তাপাড়ে রাজপুর গ্রামে অনেকেই আশ্রয় নিচ্ছেন উঁচু স্থানে। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

একটানা বৃষ্টি ও উজানের পানিতে বেড়েই চলছে তিস্তার পানি।

আজ শনিবার সকাল ৯টা থেকে তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার পানি।

এতে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের ৮টি উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে প্রায় ১০০টি চর ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এলাকার অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

শনিবার সকালে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার তিস্তাপাড় বন্যাকবলিত হয়েছে।'

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদসহ অন্যন্য নদ-নদীর পানি বাড়ছে। তবে পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি না বাড়লে তিস্তার পানি দ্রুত নেমে যাবে বলে জানান তিনি।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অনবরত বৃষ্টিপাত আর উজানের পানি আসতে থাকায় তিস্তাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। লালমনিরহাটে ধরলা নদীর পানিও বাড়ছে তবে তা এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।'

দীর্ঘদিন বালু ভরাট হয়ে তিস্তার বুক মূল ভূখণ্ডের সমান হয়ে যাওয়ায় তিস্তায় একটু পানি বাড়লেই নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো ডুবে যায়। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি আরও বাড়তে পারে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর গ্রামের কৃষক সুপেন চন্দ্র বর্মণ (৬৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শনিবার সকালে ঘরের ভেতর ২-৩ ফুট পানি ঢুকেছে। আমরা এখনো বাড়িতে আছি। আরেকটু পানি বাড়লে বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে।'

একই গ্রামের সুনীতি রানী (৩৫) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সন্তানদের নিয়ে খাটের ওপর বসে আছি। ঘরের ভেতর তিস্তা নদীর পানি। আরেকটু পানি বাড়লে ঘরে থাকতে পারব না। অনেকে বাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে চলে গেছে।'

বাড়িঘর ছেড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন আদিতমারী উপজেলার গোবর্ধান এলাকার কৃষক ফজলার রহমান (৬৫)। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খাটের ওপর দিয়ে নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ঘর ছেড়ে বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছি। গরু-ছাগল নিয়ে বিপদে আছি। আমার ৬টি মুরগি, ৩টি হাঁস ভেসে গেছে নদীর পানিতে।'

রাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন শনিবার সকালে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ইউনিয়নে ৬-৭ হাজার মানুষ পানিবন্দি। চরাঞ্চলের পানিবন্দি লোকজন এখানে চলে এসেছেন। তাদের আমন ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে।'

লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পানিবন্দি লোকজনের খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। তাদের খাদ্যসহ অন্যন্য সামগ্রী দিয়ে তাৎক্ষণিক সহায়তা করার প্রস্তুতি রয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Election in first half of April 2026

In his address to the nation, CA says EC will later provide detailed roadmap

1h ago