দুর্বল হয়ে রিমাল এখন গভীর স্থল নিম্নচাপ

বিকেলের মধ্যে কেন্দ্র ঢাকার ওপর আসতে পারে, বাড়বে বৃষ্টি-দমকা বাতাস।
দুর্বল হয়ে রিমাল এখন গভীর স্থল নিম্নচাপ
স্যাটেলাইট ইমেজ

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল দুর্বল হয়ে গভীর স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আজ সোমবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।

অধিদপ্তর জানায়, এটি বর্তমানে যশোর ও এর আশে পাশের এলাকায় অবস্থান করছে। তবে এর বর্ধিতাংশ রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। দুপুর ৩টা বা বিকেল ৪টা নাগাদ গভীর স্থল নিম্নচাপের কেন্দ্র ঢাকার ওপর আসার সম্ভাবনা রয়েছে। সে সময় বৃষ্টিপাত ও দমকা হাওয়া বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, রিমাল আরও উত্তরপূর্ব দিকে এগিয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হবে।

পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকেও নয় নম্বর মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে আগামীকাল দুপুর পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তবে পরবর্তীতেও সাবধানে চলাচল করতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রিমাল নিয়ে আর কোনো বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, 'রিমাল এখন বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমশ দুর্বল হবে এবং আগামীকাল নাগাদ আসামের দিকে চলে যাবে। এর প্রভাবে ঢাকায় যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে, আবার একটু ভারী বৃষ্টি হচ্ছে, মাঝে মাঝে দমকা বাতাস হচ্ছে—দেখা যাবে সারা দেশেই এ ধরনের বৃষ্টিপাত হবে।'

আজিজুর রহমান বলেন, 'আগামীকাল পর্যন্ত সারা দেশেই বৃষ্টি থাকবে। তবে কোথাও কোথাও বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, রংপুর বিভাগের কয়েকটি জায়গা ছাড়া প্রায় সারা দেশেই বৃষ্টি হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ২০৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া কুতুবদিয়ায় ১২৫ মিলিমিটার, সাতক্ষীরায় ৯৩, পটুয়াখালী ৭২, মোংলায় ৬৭, খুলনায় ৬৫, খেপুপাড়ায় ৫৮, যশোরে ৫৩, বরিশালে ও ভোলায় ৪১, চুয়াডাঙ্গায় ১৮ এবং কুমারখালীতে ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে অধিদপ্তর।

মধ্যরাত থেকে উপকূলীয় অধিকাংশ জেলায় বাতাসের গতি বাড়তে থাকে। গত রাত দেড়টার দিকে খেপুপাড়ায় প্রতি ঘণ্টায় ১১১ কিলোমিটার বেগে দমকা বাতাস রেকর্ড করা হয়েছে, রাত সাড়ে ১১টায় সেখানে বাতাসের গতি ছিল ৯১ কিলোমিটার।

পটুয়াখালীতে রাত দেড়টায় প্রতি ঘণ্টায় ১১১ কিলোমিটার বেগে দমকা বাতাস বয়ে গেছে। তবে রাত আড়াইটার দিকে গতি কিছুটা কমে ৮৯ কিলোমিটার হয়।

সাতক্ষীরায় রাত সাড়ে ১১টায় প্রতি ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার বেগে দমকা বাতাস বয়ে গেছে। রাত ৩টায় বাতাসের গতি আরও বেড়ে হয় ৭৮ কিলোমিটার। মোংলায় রাত সাড়ে ১২টায় বাতাসের গতি ছিল ৮০ কিলোমিটার, কয়রায় রাত সাড়ে ১১টায় ৮৩ কিলোমিটার এবং খুলনায় রাত ৪টায় প্রতি ঘণ্টায় ৭২ কিলোমিটার বেগে দমকা বাতাস রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

গতকাল বিকেল ৪টার দিকে রিমালের অগ্রভাগ বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানতে শুরু করে। মধ্যরাতের মধ্যে এর কেন্দ্র স্থলভাগে উঠে আসে। সে সময় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, উপকূল অতিক্রম করতে আরও পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা সময় লাগবে। পশ্চিমবঙ্গের সাগর আইল্যান্ড ও মোংলার মাঝখান দিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ থাকলেও মূল কেন্দ্র বাংলাদেশের ওপর দিয়ে অতিক্রম করে। আজ সকাল ৯টায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি গভীর স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়।

Comments