১২ ঘণ্টায় ১৯ সেন্টিমিটার বেড়েছে ব্রহ্মপুত্রের পানি, কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে মানুষ। ছবি: স্টার

উজানে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। 

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় নদের পানি ১৯ সেন্টিমিটার বেড়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

তবে ধরলা নদীর পানি কিছুটা কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হচ্ছে নদের পাড়ের নতুন নতুন এলাকা।

বন্যার পানিতে পুরোপুরি তলিয়ে যাওয়ার পথে ব্রহ্মপুত্র পাড়ের বাড়ি-ঘর। ছবি: স্টার

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসন এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্র জানায়, জেলার ৭২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৫টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত। জেলার ৪৫০টি চর বানের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোও প্লাবিত হয়েছে। এক লাখেরও বেশি মানুষ বন্যাদুর্গত। পানিবন্দি অনেক মানুষ বাড়ি-ঘর ছেড়ে সরকারি রাস্তা, বাঁধের ওপর ও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে এখনো অনেকে পানিতে নিমজ্জিত বাড়িতে মানবেতর দিনযাপন করছেন।
 
পানিবন্দি হয়ে পড়া বাসিন্দারা জানান, তারা খাবার ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের চরম সঙ্কটে রয়েছেন। সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে, তবে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। নলকূপ ও টয়লেট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বানের পানিতে ভেসে গেছে অনেকের ঘরের চাল, দরজা, বেড়া, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, ফসল ও আসবাবপত্র। বাড়ির ভেতর-বাইরে সবখানে শুধু বানের পানি। গত মঙ্গলবার থেকে তারা বানের পানির সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছেন। কাজ করতে না পারায় কেউ উপার্জন করতে পারছেন না। এ কারণে খাবার কিনতে না পেরে অনেক বানভাসি মানুষকে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। 

পানির ওপর টেবিল পেতে কোনোরকমে রান্নার চেষ্টা। ছবি: স্টার

উলিপুর উপজেলার হাতিয়া গ্রামের বানভাসি রেজিয়া বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, মঙ্গলবার থেকে বানের পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে কোনোরকমে বাড়িতে ছিলেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘর ডুবে গেলে তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর আশ্রয় নেন। বর্তমানে পলিথিন দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে তিন সন্তান, স্বামী ও শাশুড়িকে নিয়ে অবস্থান করছেন। বৃষ্টির কারণে পলিথিনের ঝুপড়ি ঘরেও থাকতে পারছেন না। 

তিনি বলেন, 'আমার স্বামী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অন্যের কাছ থেকে ধার করে সংসার চালাচ্ছি। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো ত্রাণ সহায়তা পাইনি।'

একই এলাকায় বাঁধে আশ্রয় নেওয়া বানভাসি আবু তালেব ডেইলি স্টারকে জানান, তার দুটি ছাগল, আটটি মুরগি ও ঘরের চাল বানের পানিতে ভেসে গেছে। পরিবারের ছয় সদস্য, চারটি গরু ও ছয়টি ছাগল নিয়ে পলিথিনের ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঘরে কোনো খাবার নেই। বাজার থেকে খাবার কেনার সামর্থ্যও নেই। দুটি ছাগল বিক্রি করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। 

তিনি বলেন, 'বাঁধের ওপর ঝুপড়ি ঘরে কতদিন থাকতে হবে, সেটা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।'

বাড়ি-ঘর ছেড়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন সড়কের ওপর। ছবি: স্টার

হাতিয়া কালাতিপাড়া গ্রামের পানিবন্দি আদম আলী ডেইলি স্টারকে জানান, ঘরের ভেতর দুই-তিন ফুট বানের পানি। সরকারিভাবে ১০ কেজি চাল সাহায্য পেয়েছেন। কিন্তু বাড়িতে রান্না করার সুযোগ নেই। এসব চাল বিক্রি করে শুকনা খাবার মুড়ি, চিড়া, গুড় ও পাউরুটি কিনেছেন। আত্মীয়-স্বজনরাও তাদের জন্য ভাত-তরকারি পাঠাচ্ছেন। 

তিনি বলেন, 'ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ছেই। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।'

কুড়িগ্রাম জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ডিআরআরও) আব্দুল হাই সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যাদুর্গত মানুষের সংখ্যা এক লাখেরও বেশি। পানিবন্দি মানুষের মাঝে চাল ও শুকনা খাবার বিতরণ চলছে। ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও শুকনা খাবারের জন্য ত্রিশ লাখ টাকার চাহিদা দেওয়া হলেও এখনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। খুব দ্রুত এ বরাদ্দ পাওয়া যাবে।' 

বানভাসি বহু মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। ছবি: স্টার

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত মঙ্গলবার থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ছে। উজানে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আজ সকাল ৬টা থেকে চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় পানির লেভেল ছিল বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপরে। আগামী আরও কয়েকদিন পানি বাড়তে পারে।'

ব্রহ্মপুত্র পাড়ে এবার ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা।

Comments

The Daily Star  | English

JnU second campus: Project stalled amid bureaucratic hurdles

The construction of Jagannath University’s long-awaited second campus in Keraniganj has stalled due to bureaucratic delays.

3h ago