রেকর্ড বর্ষণে অচল কক্সবাজার, হোটেলে আটকা ২৫ হাজার পর্যটক

‘অপরিকল্পিতভাবে সড়ক উন্নয়ন, ড্রেনগুলো সঠিকভাবে পরিষ্কার না করা এবং পাহাড় কাটার কারণে এ ধরনের জলাবদ্ধতা হচ্ছে।’
অনেক পর্যটককে হাঁটু-কোমর পানি ভেঙে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। ছবি: স্টার

রেকর্ড বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কক্সবাজার, অচল হয়ে পড়েছে রাস্তা-ঘাট, হাজার হাজার পর্যটক হোটেলে আটকা এবং বাসিন্দারা হয়ে পড়েছেন জলমগ্ন।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ বি হান্নান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গতকাল বিকেল ৩টা থেকে আজ শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

এটি চলমান মৌসুমে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড করা সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত বলে জানান তিনি।

এ বি হান্নান বলেন, 'ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। বাতাসের তীব্রতাও বেশি হবে, যা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে বাড়তে পারে।' 

স্থানীয় সাংবাদিক আজিম নিহাদ জানান, কক্সবাজারে এমন বৃষ্টি তিনি আগে কখনো দেখেননি।

বুধবার রাত থেকে অবিরাম বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে হোটেল-মোটেল জোনের পাঁচ শতাধিক হোটেল, গেস্টহাউস, কটেজ ও রিসোর্ট।

ছবি: স্টার

কলাতলী রোড, সুগন্ধা রোড ও সিগাল রোডসহ ঝিনুক মার্কেটের শতাধিক দোকান পানিতে তলিয়ে গেছে।

অনেক পর্যটককে হাঁটু-কোমর পানি ভেঙে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। তবে বেশিরভাগই হোটেল কক্ষে অলস সময় কাটাচ্ছেন।

ঢাকার তেজগাঁও এলাকার শামীম আহমেদ জানান, পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে এসেছেন, টেকনাফ ও রামুসহ কক্সবাজারের অনেক এলাকা ভ্রমণের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু অবিরাম বৃষ্টিতে তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।

কক্সবাজার হোটেল, মোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার ডেইলি স্টারকে জানান, গত ৫০ বছরে শহরে এমন বন্যা দেখেননি।

তিনি বলেন, 'অপরিকল্পিতভাবে সড়ক উন্নয়ন, ড্রেনগুলো সঠিকভাবে পরিষ্কার না করা এবং পাহাড় কাটার কারণে এ ধরনের জলাবদ্ধতা হচ্ছে।'

কক্সবাজার হোটেল, মোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতির সেক্রেটারি সেলিম নেওয়াজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছুটি উপভোগ করতে প্রায় ২৫ হাজার পর্যটক কক্সবাজারে এসেছেন। তবে অবিরাম বৃষ্টিতে তাদের অবসর সময় নষ্ট হয়ে গেছে।'

বেশিরভাগ পর্যটকই হোটেল কক্ষে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

ছবি: স্টার

টানা বর্ষণে কক্সবাজার শহরের নিম্নাঞ্চলসহ অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে অনেক সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ।

ব্যস্ততম পাঁচ কিলোমিটার প্রধান সড়ক ও সৈকত সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। বাজারঘাটা, বড়বাজার, অ্যান্ডারসন রোড, টেকপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, বুদ্ধ মন্দির রোড, গোলদিঘির পাড়, তারাবনিয়াছড়া ও রুমালিয়াছড়া এলাকার শতাধিক দোকান, অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। হাজার হাজার ঘরবাড়িও পানিতে তলিয়ে গেছে।

পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, পদনার ডেইল, বন্দরপাড়া ও উত্তর নুনিয়াছড়া এলাকার শতাধিক বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে।

১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আখতার কামাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকলে এ ওয়ার্ডের অন্তত ১০ হাজার ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে যাবে।'

মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার হাজার হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু, যারা ১ নম্বর ওয়ার্ডে বাস করেন, রান্না করার জায়গা না থাকায় বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন।

Comments