তিস্তা-ধরলার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি-ফসলি জমি

তিস্তা ও ধরলায় বাড়ছে পানি, সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভাঙন। ছবিটি লালমনিরহাটের মোগলহাট সেনপাড়া গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: এস দিলীপ রায়/ স্টার

বর্ষা পুরোপুরি আসার আগেই রংপুর অঞ্চলে দেখা দিয়েছে তিস্তা ও ধরলা নদীর ভাঙন। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদী হয়ে উঠেছে আরও আগ্রাসী। ফসলি জমি, বসতভিটা, ঘরবাড়ি যাচ্ছে নদীগর্ভে। নদীভাঙনে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নদীপাড়ের হাজারো পরিবার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, তিস্তাপাড়ের পাঁচ জেলা—লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, নীলফামারী ও গাইবান্ধায় ভাঙন দেখা দিয়েছে ১৩০টি পয়েন্টে। শুধু লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে ধরলা নদীপাড়ে ভাঙন চলছে ১১টি স্থানে।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, তিস্তায় ভাঙন ঠেকাতে সরকার ১২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে, যা দিয়ে আপাতত ৪২টি পয়েন্টে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের কাজ চলছে। কিন্তু ধরলাপাড়ে এখনো কোনো বরাদ্দ না থাকায় সেখানে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে হুমকির মুখে আছে বহু মানুষ।

ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টির কারণে নদীর পানি বেড়েই চলেছে, আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভাঙন। কেউ হারিয়েছেন বসতভিটা, কেউ ফসলি জমি।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট সেনপাড়া গ্রামের কৃষক মহেন্দ্রনাথ সেন (৬০) বলেন, 'এক সপ্তাহেই দুই বিঘা ফসলি জমি চলে গেছে নদীতে। এখনো হুমকিতে আছে আরও তিন বিঘা জমি। দিনে দিনে ভাঙন বাড়ছে।

একই গ্রামের কৃষক জামাল হোসেন (৬৫) ক্ষোভের সঙ্গে জানান, 'পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন এসেছিল, দেখে গেল, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। নদীতে সব হারিয়ে যাচ্ছে, এইভাবে চলতে থাকলে আমরা বাঁচব কীভাবে?'

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার শংকরদহ গ্রামের কৃষক মোবারক হোসেন (৬৫) জানান বসতভিটা হারিয়ে এখন তিনি অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার হরিণচওড়া গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম (৫৫) বলেন, 'এক সপ্তাহেই আমার বাড়িঘর আর তিন বিঘা আবাদি জমি নদীতে চলে গেছে। আমার মতো আরও অন্তত ৩০ জন কৃষক সর্বস্ব হারিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, বরাদ্দ অনুযায়ী ভাঙন প্রতিরোধে কাজ চলছে। লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, 'তিস্তাপাড়ে ৫০-৫৫টি পয়েন্টে ভাঙন চলছে, যার মধ্যে ১৩টি পয়েন্টে কাজ শুরু হয়েছে। তবে ধরলাপাড়ে কোনো বরাদ্দ না থাকায় সেখানে আমরা কিছু করতে পারছি না।'

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, 'তিস্তার ২৫-২৬টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আপাতত আটটি পয়েন্টে কাজ হচ্ছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গাগুলো অগ্রাধিকার পাচ্ছে।'

প্রধান প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান বলেন, 'সরকার যে ১২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে, তা দিয়ে পর্যায়ক্রমে কাজ চলছে। আমরা বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙনের অবস্থা পরিদর্শন করছি এবং জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছি।'

Comments

The Daily Star  | English
BNP protests for Ishraque Hossain in Dhaka

Ishraque supporters protest in different parts of Dhaka

Protesters assembled at Matsya Bhaban, Kakrail and Jatiya Press Club, demanding that Ishraque be immediately sworn in as the mayor of the DSCC

1h ago