খোয়াই নদীর ৪০০ মিটার বাঁধে ভাঙন, ৫০ গ্রাম প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে

৪০০ মিটারের বাঁধজুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। ছবি: স্টার

পাঁচদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পানিপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় হবিগঞ্জের খোয়াই নদীর ৪০০ মিটার বাঁধজুড়ে ভাঙন শুরু হয়ছে। এতে নদী-তীরবর্তী ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়া আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খোয়াই নদীর পানি বর্তমানে বিপৎসীমার নিচেই প্রবাহিত হচ্ছে। তবে, পানির স্রোতে বাঁধের বাকি অংশগুলোও যদি ভেঙে যায়, তাহলে ব্যাপক বন্যা হতে পারে।

স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে কালনী ও কুশিয়ারা নদীর পানি তীব্রভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে, ভাদই এলাকার বাঁধের কাঁচা অংশে ইতোমধ্যে ভাঙন শুরু হয়েছে। ফলে ভূমিধসের ঘটনাও ঘটেছে।

স্থানীয়রা জানান, তেঘরিয়া, পূর্ব ভাদই, আলাপুর, মাছুলিয়া ও রাধা নগরসহ স্থানীয় ৫০টি গ্রাম এখন বাঁধ ভাঙন ও প্লাবিত হওয়ার উচ্চঝুঁকিতে আছে। আরও ভাঙনের আশঙ্কায় স্থানীয়রা রাত জেগে বাঁধ পর্যবেক্ষণ করছেন।

পূর্ব ভাদইয়ের বাসিন্দা আবদাল মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যদিও নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি, তবুও শুক্রবার থেকে বাঁধের কিছু অংশ ভাঙতে শুরু করেছে। আমরা সারা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি। এখানকার সবাই আতঙ্কিত।'

একই গ্রামের আরেক বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর তীর দুর্বল হয়ে গেছে। ড্রেজার ব্যবহার করে নিয়মিত বালু উত্তোলন করায় গভীর গর্ত তৈরি হচ্ছে এবং তীর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই হবিগঞ্জে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ত্রিপুরায় উজানে আরও বৃষ্টিপাত হলে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

ছবি: স্টার

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপের কারণে সাম্প্রতিক এই ভারী বর্ষণ। এ নিম্নচাপ আরও কয়েকটি জেলাকে প্রভাবিত করেছে।

রাধানগরের বাসিন্দা আব্দুল হাসিম ডেইলি স্টারকে বলেন, পাহাড় থেকে আসা পানিপ্রবাহের কারণে আমাদের গ্রাম বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর যখন উজানের পানি কমতে শুরু করে, তখন আমাদের গ্রাম হঠাৎ ডুবে যায়। বেশ কিছু বাড়িঘর হারিয়ে যায়।

একই এলাকার আরেক বাসিন্দা সাদেকুল ইসলাম বলেন, নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হওয়ার শঙ্কায় আছে। ৪০০ মিটারের বেশি বাঁধজুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। এই ভাঙন আরও বাড়লে ৫০টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত হবে।

হবিগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, ৪০০ মিটারের মতো বাঁধজুড়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙন কবলিত অংশটি তাৎক্ষণিকভাবে মেরামত করতে জরুরি তহবিলের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।

ছবি: স্টার

'বৃষ্টি কমায় ঝুঁকি কিছুটা কমেছে। তবে ভারতের উজানে নতুন করে বৃষ্টিপাত হলে নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে উঠে যেতে পারে। তাই বাঁধ রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে,' বলেন তিনি।

খোয়াই নদীর ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল বলেন, খোয়াই নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের সুরক্ষার জন্য সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি নদী ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। ভারতের চাকমাঘাট বাঁধ থেকে অপরিকল্পিতভাবে পানি ছাড়ার পাশাপাশি ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বালু ও মাটি উত্তোলন করায় নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ এবং তীরগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অবৈধ খননের ফলে তৈরি গভীর গর্তগুলো বন্যার সময় বিপজ্জনক স্রোত তৈরি করে।

'পানি উন্নয়ন বোর্ডকে কেবল মেরামত নয়, বরং বাঁধগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। টেকসই খনন, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কেবল সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপই বন্যার ঝুঁকি কমাতে পারে এবং খোয়াইয়ের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Israeli military says it attacked 6 airports in Iran

JD Vance says US at war with Iran's nuclear programme, not Iran

1d ago