‘জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় তরুণরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন’

‘জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় সংকট। এর মোকাবিলায় তরুণরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন এবং তারা তা করে দেখাচ্ছেন। তরুণরা নির্মোহ হয়ে কাজ করতে পারেন। তবে, এ ক্ষেত্রে দরকার যথাযথ অর্থায়ন ও সহযোগিতা।’
গ্লোবাল ইয়ুথ ক্লাইমেট সামিট
খুলনায় ৩ দিনের গ্লোবাল ইয়ুথ ক্লাইমেট সামিটের প্রথম দিনের আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা। ছবি: স্টার

'জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় সংকট। এর মোকাবিলায় তরুণরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন এবং তারা তা করে দেখাচ্ছেন। তরুণরা নির্মোহ হয়ে কাজ করতে পারেন। তবে, এ ক্ষেত্রে দরকার যথাযথ অর্থায়ন ও সহযোগিতা।'

খুলনায় গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া ৩ দিনের গ্লোবাল ইয়ুথ ক্লাইমেট সামিটে এ মন্তব্য করেন গ্লোবাল ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারের (জিওয়াইএলসি) প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ইজাজ আহমেদ।

গতকাল সন্ধ্যায় সামিটের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশ থেকে বেশি সংখ্যক তরুণ যাতে বিদেশে কপ বা জলবায়ু সম্পর্কিত সেমিনারে অংশ নিতে পারেন সে ব্যবস্থা করা দরকার।'

গ্লোবাল ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারের (জিওয়াইএলসি) আয়োজনে এই সামিট আজ শুক্রবার ও আগামীকাল চলবে।

'তরুণরা বিশ্বে পরিবর্তন আনতে পারেন। শুভ কাজে তারা যে নির্ভয়' বলেও মন্তব্য করেন ইজাজ আহমেদ। পরে তিনি 'ম্যানেজিং ওয়েল্ডিং অব বোথ ইকোসিস্টেমস অ্যান্ড হিউম্যান বিংস' বিষয়ে সেশনের মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি আরও বলেন, 'তরুণদের, বিশেষ করে দক্ষিণ মেরুর তরুণদের সংগঠিত করতে বৈশ্বিক সংস্থা চালু করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের মতো কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের বিশ্বব্যাপী ও বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে হবে।'

তার মতে, 'জিওয়াইএলসির লক্ষ্য তরুণদের জলবায়ুবিষয়ক সচেতনতা বাড়ানো। এ ছাড়া, ব্যক্তিগত ও যৌথ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তরুণদের নেতৃত্বের দক্ষতা তৈরি এবং জলবায়ু অভিবাসনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যবসা চালু করতে সক্ষম করতেও এই প্রতিষ্ঠান কাজ করবে।'

'আমরা খুলনাকে জিওয়াইএলসি সম্মেলনের স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছি কারণ এটি দেশের অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল,' যোগ করেন তিনি।

জলবায়ুকর্মী সোহানুর রহমান বলেন, 'বিষয় হিসেবে জলবায়ুকে আলোচনার কেন্দ্রে রাখতে হবে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে ইতোমধ্যেই সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তার জন্য ধনী দেশগুলোকে আরও অনেক কিছু করতে হবে।'

গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান বলেন, 'আমাদের প্রতিষ্ঠান তারুণ্যের শক্তিতে বিশ্বাস করে। আমাদের জন্য গ্লোবাল ইয়ুথ ক্লাইমেট সামিট তরুণদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ। এটি সচেতনতা বৃদ্ধির চমৎকার প্ল্যাটফর্ম।'

তিনি আরও বলেন, 'কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানোর অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে সিওটু নিঃসরণ ৫০ শতাংশ কমাতে বিজ্ঞানভিত্তিক লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি।'

আজ সামিটে অংশগ্রহণকারী ১৫০ তরুণ সুন্দরবন উপকূলীয় দাকোপ উপজেলার লাউডোভ-এ বনায়নে অংশ নেবেন। তারা গ্রাম ঘুরে দেখবেন ও তাদের অভিযোজন পদ্ধতি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবেন।

বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বেডস (বাংলাদেশ ইনভারমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি) এর প্রধান নির্বাহী মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, 'সম্মেলনে অংশ নেওয়া তরুণরা আমাদের বনজীবী প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দেখবেন।'

'আমরা স্থানীয়ভাবে পরিচালিত জলবায়ুসহিষ্ণু নানান কার্যক্রমের প্রচার ও মানুষের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যের জন্য উপকূলীয় বনায়নের গুরুত্ব তুলে ধরার চেষ্টা করবো,' যোগ করেন তিনি।

জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে উদ্যোগ নিতে তরুণদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সামিটে অংশ নেওয়া ১০ প্রতিনিধিকে তাদের জলবায়ু সহিষ্ণুতা ও জলবায়ু অভিবাসনবিষয়ক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অনুদান দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

জিওয়াইএলসি চেয়ারম্যান নিল ওয়াকার বলেন, 'তরুণরা শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে উদ্যোগ নিতে দাবি জানান না, তারা পথও দেখান। তাদের নেতৃত্ব, উদ্ভাবন ও উদ্যোগী মনোভাব সাফল্যের পথ দেখায়। আমাদের বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ দরকার। আমরা সারা বিশ্বের তরুণদের আদর্শ, ধারণা ও তাদের প্রতিভাকে ফলাফলে রূপান্তর করতে কাজ করবো।'

খুলনার আভা সেন্টারে এই সামিটে বিশ্বের ৭০ দেশের ৬৫০ তরুণ অংশ নিচ্ছেন। এ সম্মেলনে ১৫০ জন সরাসরি ও ৫০০ জন ভার্চুয়ালি অংশ নিচ্ছেন।

সামিটের প্রথম দিনে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, যুক্তরাজ্য সরকারের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা স্যার ডেভিড কিং, অক্সফোর্ডের সাবেক অধ্যাপক স্যার ক্রিস্টোফার বল, হার্ভার্ডের নেতৃত্ব অনুষদের সাবেক শিক্ষক ড. ডিন উইলিয়ামস, আইসিসিএডি পরিচালক ড. সালেমুল হক, ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ ও গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান।

গ্লোবাল ইয়ুথ ক্লাইমেট সামিটের টাইটেল স্পন্সর করছে গ্রামীণফোন।

এ ছাড়াও গোল্ড স্পন্সর হিসেবে আছে নেদারল্যান্ডস দূতাবাস, এফএইচআইথ্রিসিক্সটি, স্যার ক্রিস্টোফার বল এবং লেডি বল।

গ্লোবাল ইয়ুথ ক্লাইমেট সামিটের সিলভার স্পন্সররা হচ্ছে প্যারাগন গ্রুপ, ইউসিবি, ব্র্যাক ও দারাজ।

এই আয়োজনের বাস্তবায়নকারী অংশীদার বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি)। কমিউনিটি ও আউটরিচ পার্টনার হিসেবে কাজ করছে বেডস ও ইয়ুথনেটস ফর ক্লাইমেট জাস্টিস।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago