‘৫টার পর থেকেই হয়ত নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যাব’

সেন্টমার্টিন থেকে তকি উসমানি: চরম আতঙ্ক হচ্ছে, ভয় হচ্ছে
সেন্টমার্টিনের পর্যটন ব্যবসায়ী ও সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা তকি উসমানি (ইনসেটে)। ছবিটি আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় সেন্টমার্টিন থেকে তুলে পাঠিয়েছেন।

'সেন্টমার্টিনের পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এখন যে অবস্থা আছে, তাতে মনে হচ্ছে বিকাল ৪টা বা ৫টার পর থেকেই হয়ত আমরা নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যাব।'

পর্যটন ব্যবসায়ী তকি উসমানি আজ শনিবার দুপুর ৩টার দিকে সেন্টমার্টিন থেকে দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য জানান। তকি উসমানি সেন্টমার্টিনে খোকা নামে পরিচিত।

বর্তমানে সেন্টমার্টিনে বৃষ্টি ও জোয়ারের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এখন বৃষ্টি নেই, কিন্তু প্রচণ্ড বাতাস আছে। সাগরও প্রচণ্ড উত্তাল। এখন জোয়ার চলছে। আরও দেড় ঘণ্টা জোয়ার থাকবে। ভাটার সময় যে শান্ত হবে, তাও তো না। আমরা তো ঘূর্ণিঝড়ের পেটের মধ্যে।'

সেন্টমার্টিনে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মানুষ আছেন এবং তাদের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আসেননি বলে জানান তিনি।

আশ্রয়কেন্দ্রে না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'একতলা বা দোতলা ভবনগুলোতে জায়গা আছে। ওখানে গিয়ে আর কি হবে—এমন চিন্তা থেকে তারা যেতে চাইছেন না।'

প্রশাসনের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'প্রশাসনের যদি কিছু করার ইচ্ছা থাকতো, তাহলে গতকালই করতে হতো। এখন যে অবস্থা, তাতে হেলিকপ্টার ছাড়া আমাদের এখান থেকে টেকনাফে নিয়ে যাওয়ার আর কোনো উপায় নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'এখানে নেভির ২টা বড় জাহাজ ছিল, সেগুলোও চলে গেছে। আমাদের কাউকে নিয়ে যায়নি। এখন আর আমাদের এখান থেকে যাওয়ার কোনো উপায় অবশিষ্ট নেই, কোনো বোট নেই।'

শুকনা খাবার কতটা আছে আপনাদের কাছে? এমন প্রশ্নের জবাবে খোকা বলেন, 'সেন্টমার্টিনের দোকানগুলোতে যেসব শুকনা খাবার আছে সেগুলোই। আর কেউ কোনো শুকনা খাবার পাঠায়নি। যার যেমন সুযোগ হয়েছে সেভাবে শুকনা খাবার নিজেদের সংগ্রহে রেখেছে। এখানে অনেক পরিবার আছে, যাদের কাছে কোনো খাবারই নেই। শুনেছি আমাদের এমপি ১০-১৫ বস্তা চাউল পাঠিয়েছেন, যেগুলো হাসপাতালের ভেতরে রান্না হচ্ছে।'

পানির বিষয়ে তিনি বলেন, 'যে যার মতো করে বাড়ি থেকে ২০ লিটার বা ৩০ লিটার—যতটা পেরেছে—পানি সংগ্রহ করে রেখেছে। এটুকু যতক্ষণ চলবে ততক্ষণই।'

আলাপের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, 'খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছি ভাই। এই ঘূর্ণিঝড় ক্লান্ত করে দিয়েছে।'

আজ সকালে আলাপকালে তিনি জানিয়েছিলেন, দ্বীপের গরু-ছাগলগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখার মতো জায়গা নেই। ফলে, সব গরু-ছাগল ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তারা তাদের মতো আছে।

আপনারা তো বিভিন্ন সময় ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করেছেন। আপনারা সাহসী মানুষ হিসেবে পরিচিত। এবারের আসন্ন ঝড় নিয়ে সেন্টমার্টিনবাসী কি স্বাভাবিক আছেন, না ভয়ে আছেন?

খোকা বলেন, 'আমাদের কাছে তো ঝড়-জলোচ্ছ্বাস নতুন কিছু না। তবে এবারের পরিস্থিতি আলাদা। অন্যদের কথা কী বলব! নিজের কথা বলি, এবারের মতো আগে কখনো আমি এতটা আতঙ্কিত হইনি। আমি নিজেই খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি, ভয় পাচ্ছি। উত্তাল সাগর দেখে ভয় না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আপনার সঙ্গে যখন কথা শুরু করেছি তখন সাগর মোটামুটি ছিল। ৫ মিনিটের মধ্যে সাগর ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। চরম আতঙ্ক হচ্ছে, ভয় হচ্ছে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Torch procession at DU demanding justice for JCD leader Shammo

The procession, under the banner of "Students Against Terrorism", began around 8:20pm

39m ago