কুয়াকাটায় ২৫০ একর বনভূমি দখল, দখলদারের তালিকায় ৩৭৮ নাম

বন বিভাগ গত এক বছরে কুয়াকাটায় ১০০ একরের বেশি বনভূমি দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করেছে। তবে এখনো ২৫১ দশমিক ৭৪ একর বনভূমি ৩৭৮ জন দখলদারের দখলে।
বনের জমি দখল করে বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। ছবি: স্টার

বন বিভাগ গত এক বছরে কুয়াকাটায় ১০০ একরের বেশি বনভূমি দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করেছে। তবে এখনো ২৫১ দশমিক ৭৪ একর বনভূমি ৩৭৮ জন দখলদারের দখলে।

বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, মহিপুর রেঞ্জের লতাচাপলি ও গঙ্গামতি মৌজায় বনের মোট আয়তন ৩ হাজার ৫০৩ একর। এর মধ্যে লতাচাপলি মৌজায় ২ হাজার ১৬৫ একর এবং গঙ্গামতি মৌজায় ১ হাজার ৩৩৮ একর। কুয়াকাটাকে পর্যটকদের কাছ আরও আকর্ষণীয় করতে প্রতি বছরই নতুন বাগান গড়ছে বন বিভাগ। কিন্তু সেই বাগান ধ্বংস করে ৩৭৮ জন দখলদার বনভূমির ২৫১ দশমিক ৭৪ একর জবরদখল করেছে। এর মধ্যে লতাচাপলি মৌজায় ৫৬ জন দখল করেছেন ১৮৬ দশমিক ৮০ একর এবং গঙ্গামতি মৌজায় ৩২২ জনে দখল করেছেন ৬৪ দশমিক ৯৪ একর বনভূমি।

সাইফুল ইসলাম সংরক্ষিত বনের ভেতরেই ৬৫ শতাংশ জমির উপর বসতবাড়ি নির্মাণ করে সেখানে সপরিবারে বসবাস করছেন। এছাড়াও পাশেই বনের গাছপালা কেটে প্রায় ১ একর কৃষি জমি তৈরি করেছেন। সেখানে প্রতিবছর তিনি চাষাবাদ করছেন। এবারও আমন আবাদ করেছেন। বন বিভাগ থেকে এ বছরের জুন মাসে বনভূমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য তাকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

বনের জমি দখল করে ধান চাষ করা হচ্ছে । ছবি: স্টার

এ বিষয়ে সাইফুল ইসলাম বলেন, 'দেশ স্বাধীনের অনেক আগ থেকেই বন পাহারা দিতে তাদের পূর্বপুরুষদের এখানে আনা হয়েছিল। তখন তাদের মৌখিকভাবে ৩ একর করে জমি দেওয়ার কথা ছিল। সাইফুলের ভাই ইলিয়াস হোসেনও গঙ্গামতি সংরক্ষিত বনের মধ্যে বাড়ি-ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন। তাকেও উচ্ছেদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

শাহজাহান হাওলাদারও বনের মধ্যে প্রায় ১ একর জায়গা নিয়ে বাড়ি করেছেন। এছাড়া প্রায় দেড় একর কৃষি জমিও রয়েছে তার।

তিনি বলেন, 'এখন আমরা কোথায় যাবো? আমরা এই নোটিশের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব।'

বনভূমি দখলে রাখার অভিযোগে দক্ষিণ মুসুল্লীয়াবাদ এলাকার নজরুল ইসলামকে ১৫ জুন নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা বনভূমি পাহারা দিয়েছেন। এখন নোটিশ দেওয়া হয়েছে যে বন ছেড়ে চলে যেতে হবে। তবে এর আগে পুনর্বাসন করার দাবি জানান তিনি।

বন বিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো.আবুল কালাম বলেন, 'দখলদাররা জোর করে বনভূমি নষ্ট করে ঘরবাড়ি তুলে জমি দখল করছেন। বন কর্মীরা বাধা দেওয়ায় তাদের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে মহিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। বনভূমি উদ্ধারে দখলদারদের তালিকা তৈরি করে পটুয়াখালী কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

পটুয়াখালীর উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, 'কুয়াকাটায় সংরক্ষিত বনভূমি উদ্ধারে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গত এক বছরে ১০০ একরেরও বেশি বনভূমি উদ্ধার করে সেখানে নতুন করে বনায়ন করা হয়েছে। এছাড়াও চলতি বছর লতাচাপলি মৌজার ৫৬ জন দখলদারকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ১০ জন অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।'

Comments