ময়লা ফেলার ‘একমাত্র’ স্থান যখন নদী

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মিরপুর বাজারে ময়লা ফেলার কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নেই। বাজারের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া জোজনাল নদীতে অবাধে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ফলে, একাংশ ভরাট হয়ে নদীটি মরে যাচ্ছে, আবার দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
নদী দূষণ
ভাগাড়ে পরিণত হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার জোজনাল নদী। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার মিরপুর বাজারে ময়লা ফেলার কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নেই। বাজারের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া জোজনাল নদীতে অবাধে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ফলে, একাংশ ভরাট হয়ে নদীটি মরে যাচ্ছে, আবার দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।

এ ছাড়াও, নদীর ২ পাশে অবৈধ স্থাপনাও গড়ে উঠেছে।

সবমিলিয়ে নদীটি দিন দিন সংকীর্ণ হয়ে খালে পরিণত হয়েছে। বর্ষায় নদীর ঢাল ময়লা-পলিথিনে ছেয়ে যায়। জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়ে। দূষণে শুষ্ক মৌসুমে নদীটি মৃতপ্রায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জোজনাল নদীর অবস্থান মিরপুর বাজারের মাঝখানে। বাজারে মাংস, মাছ, কাঁচা তরকারিসহ নানান পণ্যের দোকান আছে। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে এলাকাবাসী প্রকাশ্যে নদীতে ময়লা ফেলছেন। ময়লার স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। ডাম্পিং স্টেশনের অভাবে সবাই নদীতে ময়লা ফেলছেন।

নদী দূষণ
ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় জোজনাল নদীতে অবাধে ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

স্থানীয় বাসিন্দা মিনহাজ উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জবাই করা পশুর বর্জ্য, ময়লা-আবর্জনা, পচা মাছ ইত্যাদি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এসব ময়লা-আবর্জনা থেকে তীব্র গন্ধ বের হচ্ছে। প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে নদী বাঁচত, আমরাও বাঁচতাম।'

খোয়াই নদীর ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জোজনাল নদী খোয়াই নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে করাঙ্গী নদীতে মিলেছে। একসময় নদীটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যাত্রী পারাপারের পাশাপাশি পণ্য পরিবহন করা হতো। একসময় এটি কৃষি, বাণিজ্য ও যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখত। বর্তমানে দখল, দূষণ ও ভরাটের কারণে নদীর অস্তিত্ব বিপন্ন।'

তিনি আরও বলেন, 'লোভী মানুষেরা নদীটিকে দখল করে আবর্জনা দিয়ে ভরাট করছেন। নদীতে বর্জ্য ফেলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নদী সচল থাকলে পরিবেশ ভালো থাকে। পরিবেশ-প্রকৃতি ভালো থাকলে আমরাও ভালো থাকি।'

নদী খনন করে এর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।

নদী দূষণ
বাজারের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া জোজনাল নদী যেন ভাগাড়। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল করিম চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, '২ দিন আগে নদী পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। বাজারের ময়লা-আবর্জনা নিষিদ্ধ পলিথিনে ভরে নদীতে ময়লা ফেলা হচ্ছে। দূষণের পাশাপাশি দুর্গন্ধে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।'

স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, 'বর্ষায় এসব ময়লা অন্যান্য নদীর মাধ্যমে মেঘনায় পড়ে।'

মিরপুর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এটিএম মাহমুদুল ইসলাম ইউসুফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আবর্জনা ফেলার জায়গা না থাকায় নদীর ২ পাড়ে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। বছর দুয়েক আগে উপজেলা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয় প্রকল্পের মাধ্যমে জায়গা বরাদ্দ দিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হবে। বিষয়টি নিয়ে এখনো কেউ ব্যবস্থা নেননি। দূষণের কারণে নাব্যতা হারিয়ে নদীটি এখন স্থানীয়দের কাছে খাল হিসেবে পরিচিত।'

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড.জহির বিন আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদী পরিষ্কার না করলে কোনো লাভ হবে না। এর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।'

বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহুয়া শারমিন ফাতেমা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদী খনন করতে গিয়ে বাধা পড়ায় শেষ পর্যন্ত খনন করতে পারেনি।'

Comments

The Daily Star  | English
Dhakeshwari Temple Yunus speech

Want to build a Bangladesh where everyone's rights are ensured: Yunus

Seeking law enforcement's support during celebration a 'collective failure', he added

1h ago