পানিশূন্য তিস্তায় মাইলের পর মাইল বালুচর

পানিশূন্য তিস্তায়, মাইলের পর মাইল বালুচর ’
তিস্তার বুকজুড়ে জেগে উঠেছে মাইলের পর মাইল বালুচর। ছবি: দিলীপ রায়/স্টার

বাংলাদেশ অংশে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর ও নীলফামারী জেলায় ১১৫ কিলোমিটার তিস্তা নদী প্রায় পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে, নদীটি শুকিয়ে অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে। আর বুকজুড়ে জেগে উঠেছে মাইলের পর মাইল বালুচর।

এসব বালুচর হেঁটে যাতায়াত করতে হচ্ছে তিস্তাপাড়ের কয়েক লাখ মানুষকে। কোথাও ৬ মাইল, আবার কোথাও ৮ মাইল বালুচর পাড়ি দিতে হচ্ছে তাদের। আবার পানি না থাকায় নৌকা চলাচল করতে পারছে না। ফলে, নৌকা ঘাটগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কয়েকশ মাঝি। জীবিকার জন্য পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। পানি না থাকায় মিলছে না মাছ, তাই মৎস্যজীবিরাও আছেন সংকটে।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিস্তাপাড় গোবর্ধান গ্রামের কৃষক মোখলেছ মিয়া (৬৮) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তা নদীতে পানি নেই বললেই চলে। মাইলের পর মাইল বালুচর। এই বালুচর দিয়ে যাতায়াত করতে অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিস্তার বুকে ফসল চাষাবাদ করছি, অথচ সেচের পানি পেতে হচ্ছে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে।'

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার তিস্তাপাড়ে মাঝিপাড়া গ্রামের জেলে মোহন দাস (৬২) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তায় পানি নেই, তাই নেই মাছ। এ কারণে তিস্তা নদীর ওপর নির্ভরশীল জেলেরা পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন। তাদের মানেবতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।'

একই গ্রামের নৌকার মাঝি শুকুর মন্ডল (৫৪) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তিস্তায় পানি না থাকায় নৌকা ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। লোকজন পায়ে হেঁটে তিস্তা পাড়ি দিচ্ছেন। নৌকা চলাচল না করায় নৌকা চালানোর কাজে নিয়োজিত মাঝিরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাদেরকে পরিবার পরিজন নিয়ে করতে হচ্ছে মানবেতর জীবনযাপন।

আর বুকজুড়ে জেগে উঠেছে মাইলের পর মাইল বালুচর।
তিস্তা প্রায় পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। ছবি: দিলীপ রায়/স্টার

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার চর সিন্দুর্ণার কৃষক রাজ্জাক আলী (৭০)দ্যে ডেইলি স্টারকে বলেন, তিস্তাপাড়ের মানুষজন গেল কয়েক বছর ধরে শুধু শুনেই আসছেন তিস্তা নদী খননসহ তিস্তাপাড়ের উন্নয়নে সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা নামে একটি প্রকল্প গ্রহন করছে। আজো এ প্রকল্পের বাস্তব কোন রুপ দেখতে পাচ্ছেন না তিস্তাপাড়ের মানুষ। তিস্তা নদী খনন করে নির্দিষ্ট একটি চ্যানেলে পানি প্রবাহিত করা হলে উপকৃত হবেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। এতে সারা বছরই তিস্তায় পানি প্রবাহ থাকবে। চলাচল করবে নৌকা। নদীতে পাওয়া যাবে মাছ। নদীর বুকে বিপুল পরিমানে জমি হয়ে উঠবে আবাদি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বলছে, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টের উজানে ১২০০-১৫০০ কিউসেক পানি পাওয়া যাচ্ছে। তা দিয়ে কোনো রকমে সেচ সুবিধা অব্যাহত রাখা হয়েছে। তবে, ব্যারেজের ভাটিতে প্রায় ১০২ কিলোমিটার তিস্তায় ১০০ কিউসেক পানি সরবরাহ নেই। ১৯৮৩ সালে উজানে ভারতের গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণের পর থেকে বাংলাদেশে তিস্তা নদীর এ অবস্থা হয়েছে। এ বাঁধটি নির্মাণের আগে বাংলাদেশে তিস্তা নদীতে সারাবছর পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ছিল।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কয়েক বছর ধরে তিস্তা নদীতে বছরে ৩-৪ মাস পানি প্রবাহ থাকে। তিস্তা শুকিয়ে অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়েছে। তিস্তা ব্যারেজের উজানে সামান্য কিছু পানি থাকলেও ভাটিতে কোনো পানি নেই।'

'তিস্তা নদী খননসহ ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি চুক্তি বাস্তবায়ন হলে তিস্তা জেগে উঠবে আগের রুপে। এতে তিস্তাপাড়ে আসবে অর্থনৈতিক উন্নতি, বাড়বে কৃষি উৎপাদন। জীবিকা নির্বাহের উৎস সৃষ্টি হবে তিস্তাপাড়ের কয়েক লাখ মানুষের। রক্ষা হবে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। তিস্তা নদী খনন ও ভারতের সঙ্গে পানি চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টি সরকারের উচ্চমহলের ব্যাপার,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Pathways to the downfall of a regime

The erosion in the credibility of the Sheikh Hasina regime did not begin in July 2024.

9h ago