ঘূর্ণিঝড় মোখা

উচ্চ জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকিতে সেন্টমার্টিনসহ কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চল

‘সেন্টমার্টিনে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।’
ঘূর্ণিঝড় মোখার অবস্থান। ছবি: যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার থেকে নেওয়া

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় 'মোখা'র প্রভাবে উচ্চ জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকিতে রয়েছে সেন্টমার্টিনসহ কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জুঁকিতে রয়েছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ।

আজ শুক্রবার দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ।

কক্সবাজার ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস বলছে, ঝুঁকি ও ক্ষতি নিরসনে সেন্টমার্টিনসহ উপকূলীয় অঞ্চলে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

উপকূল অতিক্রমের সময়ও শক্তি কমবে না অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় 'মোখা'র। যার ফলে পূর্ণ শক্তি নিয়েই এটি বাংলাদেশের কক্সবাজার ও মিয়ানমারের উপকূলীয় অঞ্চল অতিক্রম করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক।

যেহেতু ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র সেন্টমার্টিনের কাছাকাছি দিয়ে অতিক্রম করবে, তাই দ্বীপটির ওপর এর প্রভাব বেশি পড়বে বলে জানিয়েছেন এই আবহাওয়াবিদ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আবহাওয়া পূর্বাভাসের সতর্কতার সংকেত আজ সন্ধ্যার আগেই পরিবর্তন হতে পারে।

সেন্টমার্টিনে কত ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের হতে পারে, জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, 'কত ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হবে, এই ধরনের কোনো হিসাবে আমরা এখনো করিনি। তবে সেন্টমার্টিনে ভালো প্রভাব পড়বে, এটা বলা যেতে পারে।'

কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেন্টমার্টিন দ্বীপ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। দ্বীপটি অতিক্রমের সময় ঝড়ো হাওয়ার গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটারের বেশি থাকতে পারে। ফলে সেন্টমার্টিনে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ অতিক্রম করতে মোখার প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা সময় লাগবে। এই সময় সেখানে উচ্চ জলোচ্ছ্বাস থাকবে। সেজন্য সেখানকার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়াটাই সবচেয়ে ভালো উদ্যোগ হবে।'

সেন্টমার্টিনে আশ্রয়কেন্দ্র

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যন নূর আহমদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেন্টমার্টিনে স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা সাড়ে ১০ হাজার। এর বাইরে ব্যবসায়িক কাজ বা ভ্রমণের কারণে সব সময় আরও ৩ থেকে ৫ হাজার লোক অতিরিক্ত থাকেন।

এখানে সরকারি সাইক্লোন সেন্টার রয়েছে ৩টি। এর বাইরে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোসহ আরও ৮টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এ ছাড়া, হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ ২তলা বিশিষ্ট অবকাঠামো রয়েছে ১৫-২০টি। আর ৩তলা ভবন রয়েছে ৮টি ও ৪তলা রয়েছে ৩টি।

নূর আমহদ বলেন, 'অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, যত ঘূর্ণিঝড়ই হোক সেন্টমার্টিনে উচ্চ জলোচ্ছ্বাস হয় না। সে কারণে এখানকার মানুষ কখনো আতঙ্কিতও হয় না। তবে এবার আবহাওয়া অধিদপ্তর বিভিন্নভাবে আমাদের সতর্ক করছে। দ্বীপে যে পরিমাণ উঁচু অবকাঠামো রয়েছে, জলোচ্ছ্বাস হলেও সবাই নিরাপদে থাকতে পারবেন। তা ছাড়া প্রয়োজন হলে সব ব্যবসায়িক হোটেল যাতে খোলা রাখা হয়, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সেই রেজুলেশন করা আছে।'

সব রকমের প্রস্তুতি শুরু করেছে কক্সবাজার জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়। ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিনে ৫ টন চাল, ১ লাখ টাকা ও ২০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

কক্সবাজার জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার পুরো জেলার জন্য আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করছি। সেন্টমার্টিন থেকে ইতোমধ্যে ২ থেকে ৩ হাজার মানুষ টেকনাফে চলে এসেছে। বাকি ৭-৮ হাজার মানুষের জন্য ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে উদ্ধারকাজে হেলিকপ্টারও ব্যবহার করার নির্দেশনা রয়েছে।'

'পুরো কক্সবাজার জেলার প্রায় ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রয়োজন হলে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ভবনগুলো (যেখানে খাবার পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা আছে) আশ্রয় কাজে যাতে ব্যবহার করতে পারি, সেই প্রস্তুতি চলছে', বলেন জাহাঙ্গীর আলম।

তিনি আরও জানান, প্রতিটি উপজেলায় সরকারি উদ্ধারকারী দলসহ চার থেকে পাঁচ শ জন স্বেচ্ছাসেবক আছেন। উদ্ধার কাজসহ জানমালের ক্ষতি এড়ানোর জন্য তাদেরকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। উপজেলা প্রতি ৫-৬টি মেডিকেল টিমকে ইতোমধ্যে এলার্ট করা হয়েছে।

মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাসরত ১০ লাখ মানুষের জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সেখানে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সতর্কতা গ্রহণ করা হচ্ছে।

'রোহিঙ্গা শিবিরের ঘরগুলো নিচু, তাই বাতাসে তেমন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বেশি হলে ক্ষতিও বেশি হতে পারে। তবে এই ১০ লাখ মানুষকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরের কোনো ব্যবস্থা বা অনুমতি আমাদের নেই', যোগ করেন তিনি।

মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সরকার থেকে আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বলা রয়েছে। সেই মোতাবেক আমারা যথাযথ প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা ১১ লাখ টাকা, ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৪০ টন চাল বিভিন্ন উপজেলায় পাঠিয়েছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Informal Sector Workers: Their rights glossed over, always

Of the over 7 crore people employed in Bangladesh, 85 percent (nearly 6 crore) are vulnerable as they work in the informal sector, which lacks basic social and legal protection, and employment benefits.

1h ago